বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অবমানবচরিত : এক বেদনার্ত না-মানুষের না-গল্প (শেষ পর্ব)

হিজড়াসমাজের রীতিনীতি : সামাজিক মূলস্রোত থেকে এই সমাজ সম্পূর্ণই বিচ্ছিন্ন হিজড়াসমাজের রীতিনীতি , আচার-ব্যবহার, ধর্মীয় অনুশাসন সবই আলাদা প্রত্যেক হিজড়া মহল্লায় একজন দলপতি থাকেন এরাগুরু-মাবলে পরিচিত এই গুরু-মাই দলের অভিভাবক গুরু-মায়ের আন্ডারে হিজড়ারা হল তার শিষ্য, চেলা বা মেয়ে অবাধ্য হওয়া তো দূরের কথা, শিষ্যেরা গুরু-মাকে খুবই মান্য করেশিষ্য সংগ্রহ করা এবং তাকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে কাজে পাঠানো গুরু-মায়ের অন্যতম প্রধান কাজ গুরু-মায়ের তত্ত্বাবধানে শিষ্যরা নাচ-গান-বাজনা শিখতে থাকে শুধু নাচ-গান-বাজনা শিখলেই হয় না, তালি দেওয়া শেখাটাও অত্যন্ত জরুরিসবাই জানেন, হিজড়াদের তালি বিশেষ ধরনের দুটি হাতের চেটোকে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে এই তালি দেওয়া হয়

হিজড়া দুনিয়ার প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রত্যেক গুরু-মায়ের কাজের কিছু নির্দিষ্ট এলাকা থাকে এই এলাকায় তিনিই হলেন হিজড়াদের বস হিজড়া মহল্লায় একজন গুরু-মায়ের অধীনে কতজন শিষ্য থাকবে তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই তবে যেসব শিষ্যরা মহল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে তারা হলসাধারণ শিষ্য একই গুরু-মায়ের সাধারণ শিষ্যেরা একে অন্যের গুরু-বোন গুরু-মায়ের অবর্তমানে তার সম্পত্তির সমান অংশ পায় শিষ্যেরাতবে অনেক সময় মৃত্যুর আগেই গুরু-মা তার সমস্ত সম্পত্তি কোনো একজন শিষ্যকে উইল করেও দিয়ে যান

হিজড়াদের জীবনজীবিকা : স্বাভাবিক মানুষদের মতো হিজাড়ারাও নানাবিধ পেশায় যুক্ত থাকে, যদিও সীমিত ক্ষেত্র দেখা যাক -- () বাচ্চা নাচানোই এদের প্রধান জীবিকাসাধারণত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে নবজাতকের জন্মের কথা ওরা জানতে পারে তারপর একদিন দলবল নিয়ে হাজির হয় নবজাতকের বাড়িতেবাচ্চাকে কোলে নিয়ে শুরু হয় নাচা-গানা বাচ্চা নাচানোর পর ওরা যে টাকাপয়সা অন্যান্য দ্রব্য দাবি করে, তা বেশিরভাগ সময়ই জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে যায় প্রাপ্য দাবি না-মিটলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে নবজাতকের পরিবারকে হেনস্থা করতে থাকেএই ঔদ্ধত্য দুর্বিনীত আচরণ শেষপর্যন্ত বাক্-বিতণ্ডা এবং হাতাহাতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েবাচ্চা নাচিয়ে যে অর্থ উপার্জন হয় তার অর্ধেক গুরু-মা অর্ধেক শিষ্যেরা পায় অবশ্য কোনো কোনো অঞ্চলে উপার্জিত অর্থের এক-চতুর্থাংশ শিষ্যেরা পায়() গুরু-মায়েরা দালাল মারফৎ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সুশ্রীনাগিনহিজড়াদের পাঠিয়ে থাকে দালালরা এদের নিয়ে তোলে ওইসব অঞ্চলের কিছু ব্যক্তির কাছে, যারামাস্টারজিনামে পরিচিতএই মাস্টারজিদের তত্ত্বাবধানে নাগিনরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হিন্দি ফিল্মি দুনিয়ার চিত্তবিনোদক নৃত্য পরিবেশন করেএইভাবে যে অর্থ উপার্জন হয় তার সিংহভাগই মাস্টারজির পকেটে চলে যায় গুরু-মায়েরও দালালদের মাধ্যমে এই অর্থের একটা বড়ো অংশ লাভ করেন () মূল্য না দিয়ে বাজার থেকে সবজি-তরিতরকারি জোর করে তুলে নেয় এইতোলাতোলা ব্যবস্থা বহু বছর ধরে চলে আসছে আজকার দূরপাল্লার ট্রেনে বাসেও এদের তোলা তুলতে দেখা যায়() আন্তর্জাতিক চোরাচালানের সঙ্গেও হিজড়ারা যুক্ত থাকে বিভিন্ন স্মাগলার ডনদের আন্ডারে কিছু গ্যাংলিডার আছে সেই গ্যাংলিডারদের একটা বড়ো অংশই হিজড়া() হিজড়াদের একটা অংশ দেহ ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে অর্থ যৌনসুখের আশায় সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষায়, “হিজড়াদের একমাত্র জ্বালা-যন্ত্রণা-প্রতিহিংসার বিষয় হলনরনারীরস্বাভাবিকজীবনবেশ্যাপাড়ায় সত্যিকারের মেয়েদে হারিয়েপারিকহিজড়াদের হিজড়াদের চাহিদা বেড়েছেকম বয়সি হিজড়ারাকলগার্লহিসাবেও এরা যৌনপেশায় লিপ্ত থাকে হিজড়া মহল্লার বাইরে সমকামী অ্যাকটিভ পুরুষের কাছে হিজড়াদের বেশ চাহিদা আছে এরা নারীর স্থলাভিষিক্ত পুরুষ যৌনকর্মী মুম্বাই শহরে হিজড়াদের উপর বিশেষ অনুসন্ধান চালিয়ে ডাঃ ঈশ্বর গিলাডা এক সমীক্ষায় বলেছেনসেখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ হিজড়া বেঁচে থাকার তাগিদে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
হিজড়াদের যৌনকর্ম :  যৌনাঙ্গ বিকৃতির কারণে এরা অন্যভাবে যৌনক্ষুধা মেটায় মূলত এরা পায়ুকামের (Sodomy) মাধ্যমে যৌনতা করে মেয়েদের মতো Passive বা নিষ্ক্রিয় যৌনসঙ্গী হন এরা সকলেই পায়ুমিলনে অভ্যস্ত এই পায়ুপথই (Anal Canal) নারীর যৌনাঙ্গের (Vagina) সমতুল্য শুধু রোজগারের জন্যই এইসব হিজড়ারা সমকামী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পায়ুমিলনে লিপ্ত হয় না, অবদমিত যৌনক্ষুধাকে তৃপ্ত করার জন্যও এরা সমকামে আসক্ত হয়ে পড়ে মূত্রছিদ্র দিয়ে এক ধরনের রস নিঃসরণের (Urethral Smear) মধ্য দিয়ে এদের যৌনসুখের চরম তৃপ্তি বা অর্গাজম অনুভূত হয়
হিজড়াদের ভোটাধিকার : হিজড়ারা আগেও ভোট দিত, এখনও দেয় তবে হিজড়া হিসাবে ভোট দেওয়া যায় না যেহেতু এরা নারী-বেশ ধারণ করেন এবং স্ত্রীলিঙ্গে নাম ধারণ করে সেইহেতু ভোটের সময় এরা স্ত্রী ভোটার হিসাবেই চিহ্নিত হয় অথচ রহস্যজনকভাবে এরাই আবার জনগণনায়পুরুষহিসাবে নথিভুক্ত হয় সর্বভারতীয় হিজড়া কল্যাণ সভার সভাপতি শ্রী খৈরাতিলাল ভোলা হিজড়াদেরহিসাবেভোট দেওয়ার আইনি স্বীকৃতি আদায় করার জন্য ‘Election Commisson of India’- কাছে আবেদন জানিয়েছেনআবেদনে সাড়া দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমস্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের ভোটার তালিকায় হিজড়াদেরহিজড়াহিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ পাঠান সমস্যাটা আর-এক জায়গায়সমস্ত হিজড়াই নিজেদেরস্ত্রীলোকহিসাবেই পরিচয় দিতে আগ্রহী তারা চায় না ভোটার তালিকায়হিজড়াহিসাবে নাম থাকুক
হিজড়াদের সংস্কার : হিজড়া দুনিয়ায় সব সদস্যকেই বেশকিছু নিয়মনীতি মান্য করে চলতে হয়যেমন – () রাস্তায় অপরিচিত কোনো পুরুষের সঙ্গে হালকা চালে কথা বলা এবং অশালীন আচরণ হিজড়াসমাজে গর্হিত অপরাধ() সন্ধ্যার পর হিজড়া মহল্লার সব দরজা বন্ধ হয়ে যায় অতি পরিচিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া ভিতরে প্রবেশ নিষেধ অবশ্য ঝুপড়িবাসীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না () খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বা আমন্ত্রণ না-পেলে কোনো গুরু-মা সাধারণত অপর কোনো গুরু-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান না () কোনো গুরু-মা মাটিতে বসে থাকলে তা চেলা বা শিষ্যরা খাটে বা উঁচু কোনো জায়গায় বসে না() কিছু কিছু মহল্লায় হিজড়ারা খুব ভোরে উঠে প্রধান দরজার চৌকাঠে ঝাঁটা বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে অনেকে আবার মহল্লার মাথায় ছেঁড়া জুতো বেঁধে রাখে () হিজড়ারা মনে করে সন্তানসম্ভবা কোনো মহিলার উদর বা পেট যদি কোনো হিজড়া বিশেষভাবে নিরীক্ষণ করে তাহলে গর্ভস্থ সন্তান হিজড়া হয়ে ভূমিষ্ঠ হবে () হিজড়ারা মনে করে হিজড়াদের লেখা চিঠি যদি কোনো গর্ভবতী মহিলা পাঠ বা স্পর্শ করে তাহলে ভ্রূণের ক্ষতি হবে ইত্যাদি
হিজড়াদের ঢোল : হিজড়াদের জীবনে ঢোল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্তবাচ্চা নাচাতে ঢোলের বাজনা অত্যাবশ্যক অনুসঙ্গ কর্মক্ষেত্র ছাড়া অকারণে গুরু-মায়ের সামনে ঢোল বাজালে বা হাতের তালি দিলে শিষ্যদের ক্ষতি হবে বলে বিশ্বাস হিজড়াদের বিশ্বাস ঢোল পায়ে লাগা পাপ সকালে, বিকালে ঢোলকে এরা প্রণাম করে কোনো-কোনো মহল্লায় কাজের শেষে ঢোলগুলিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়া হয় সকালে কাজে বেরনোর আগে যদি কোনো -হিজড়া ঢোল স্পর্শ করে তাহলে ঢোলটি অপবিত্র হয়ে যায় সেদিনের জন্য ওই ঢোল বাতিল, অন্য ঢোল নিয়ে কাজে বেরতে হয়হাজারো বিপদের মাঝে নিজে জান দিয়ে হলেও ঢোলকে অক্ষত রাখা হিজড়াদের অসীম কর্তব্যহিজড়াদের বিশ্বাসএই ঢোল যদি অন্য কেউ কেড়ে নেয় তাহলে মনে করা হয় বিপদ নিকটেইএছাড়া মহল্লার গুরু-মায়ের সম্মতি ছাড়া ঢোল কেনা গর্হিত অপরাধ সমস্ত হিজড়া মহল্লায় ঢোল পুজো হয় ঢোল পুজো এদের একটি বাৎসরিক উৎসব কালীপুজোর রাতে এরা ঢোলের আরাধনায় বসেএদিন কেউ কাজে বেরন না নিরামিষ খাবে সবাই ঢোল পুজোর অনুষ্ঠানে বাইরের কেউ প্রবেশাধিকার পায় নাপুরোনো চামড়ার ঢোল এই পুজোর বাতিলযাই হোক, পুজোয় বসে গুরু-মা কোনো নির্ধারিত মন্ত্র-টন্ত্র নেই এই পুজোয়গুরু-মা চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসে, ধ্যান ভাঙলে পুজো শেষ
হিজড়াদের ধর্মবিশ্বাস : জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়নির্বিশেষে সমস্ত রকমের ভেদাভেদ ভুলে এক সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলেছে হিজড়া সমাজযে-কোনো হিজড়া মহল্লায় দেখা মিলবে সব ধর্মের হিজড়া পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এরা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা গড়ে তুলেছে ধর্মের ব্যাপারে কোনো বাড়াবাড়ি বা রক্ষণশীলতা এক্কেবারেই নেই সব ধর্মের দেব-দেবতাই সকল হিজড়াদের ইষ্টদেবতা
হিজড়াদের মন মনন : নারী না-হয়েও হিজড়ারা নিজেদের নারীরূপে ভেবে থাকে মহিলাদের পোশাক-আশাক, মহিলাদের অলংকার-কসমেটিক-শৃঙ্গার এদের পছন্দ অপ্রতিরোধ্যট্রেনে-বাসে লেডিস সিট, লেডিস কম্পার্টমেন্ট, লেডিস ট্রেন, লেডিস বাসে চড়ে বা উঠে যাতায়াত করে ভুলেও এরা জেনারেল আসন বা কম্পার্টমেন্ট ব্যবহার করে না শেষ মুর্হূতে ট্রেনের জেনারেল কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়লেও পরের স্টপেজে নেমে লেডিস কম্পার্টমেন্টে ওঠেপুজোর প্যান্ডেলে বা যাত্রার এদের মহিলাদের মধ্যেই দেখা যায় বস্তুত এরা নিজেদেরকে অম্বার জাত বা উত্তরসূরী ভাবে অম্বা মহাভারতের একটি অভিশপ্ত চরিত্র গল্পটা একটু বলি : ভাই বিচিত্রবীর্যের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য স্বয়ংবর সভা থেকে ভীষ্ম অম্বাকে হস্তিনাপুরে নিয়ে এলেন কিন্তু শাল্বরাজার প্রতি অনুরাগের কথা শুনে ভীষ্ম অম্বাকে মুক্তি দেন অপরদিকে শাল্বরাজ অম্বাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এহেন ঘটনার অম্বা জোর গলায় ভীষ্মকে অভিযুক্ত করে এখানেই শেষ নয়, অম্বা ভীষ্মকে ধ্বংস করবে এমন বিধ্বংসী তপস্যায় ব্রতী হলেন শিব সন্তুষ্ট হয়ে অম্বাকে বর দিলেন বললেন জন্মে নয়, পরজন্মে নপুংসকশিখণ্ডীহয়ে অম্বা জন্মগ্রহণ করবেন এবং ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হবে হিজড়ারা এই কাহিনি জানে, জানে বলেই তারা নিজেদেরকে অম্বার সঙ্গে গভীর একাত্মতা অনুভব করে হিজড়ারা বিশ্বাস করে তারা নপুংসক শিখণ্ডী জন্মের আগে তাদেরও ছিল স্বাভাবিক জীবন এবং পরের জন্মে আবার নারীজন্ম ফিরে পাবে
স্বাভাবিক কর্মজীবনে হিজড়াদের ভূমিকা : হিজড়াদের সেইপরিচিতকর্মের বাইরে মূলস্রোতে কর্মরত অবস্থাতেও দেখা যাচ্ছে কিছু খ্রিস্টান সংঘ হিজড়াদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। ইউনিটারিয়ান একটি উদার ধর্মমত। তাদের মূল খ্রিস্টান ধর্মের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭৯ সালে তারাই সর্বপ্রথম হিজড়াদের পূর্ণ সদস্য হিসাবে গ্রহণ করে। and the first to open an Office of Bisexual, Gay, Lesbian, and Transgender Concerns in 1973. ১৯৮৮ সালে উইনিটারিয়ান উইনিভার্সালিস্ট অ্যাসোসিয়েশান প্রথম একজন হিজড়া ব্যক্তিতে মনোনীত করে। ২০০২ সালে শ্যন ডেন্নিসন প্রথম হিজড়া ব্যক্তি যিনি ইউনিটারিয়ান ইউনিভার্সালিস্ট মন্ত্রনালয়ে ডাক পান। ২০০৩ সালে ইউনাইটেড চার্চ অফ খ্রিস্ট সকল হিজড়া ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দেয় ২০০৫ সালে ট্রান্সজেন্ডার সারাহ জোনস চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ধর্মযাজক হিসাবে নিয়োগ পান। ২০০৮ সালে ইউনাইটেড মেথোডিস্ট চার্চ জ্যুডিশিয়াল কাউন্সিল রায় দেন যে ট্রান্সজেন্ডার ড্রিউ ফনিক্স তার পদে বহাল থাকতে পারবেন ওই একই বছরে মেথোডিস্টদের একটি সাধারণ বৈঠকে একাধিক হিজড়া ক্লারজির বিরুদ্ধে পিটিশান খারিজ করে দেয়া হয়। ভারতের বিহারেকালী হিজড়াপশ্চিম পাটনা কেন্দ্র থেকেজুডিসিয়াল রিফর্মসপার্টির প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে পশ্চিমবাংলার টিটাগড় পৌরভোটে ১৪ নং ওয়ার্ড থেকেহিজড়াবৈজয়ন্তীমালা মিশ্র ভোটপ্রার্থী হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের লোকসভায় মহারাষ্ট্রের জালনা কেন্দ্র থেকে নির্দল হিজড়া প্রার্থী রমেশ ওরফে মালা ভোটপ্রার্থী হয়েছিলেন
উত্তর চব্বিশ পরগণার নৈহাটীর কারখানা শ্রমিক বাবার মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে হিসেবে জন্ম হয় সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়েরপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে কলকাতার একটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পড়াশোনা শেষে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী (ঝাড়গ্রাম) অধ্যুষিত অঞ্চলের এক কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন তিনিএ সময়েই নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেখালেখি ও সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেনপরে ২০০৩ সালে জটিল এক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজেকে নারীতে রূপান্তরিত করেন সোমনাথ, এখন তিনিই মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় ৫১ বছর বয়সি মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। ২০১৫ সালের ৯ জুন থেকে তিনি নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন ভারতে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) একজনকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়েছে। (এই পোস্টের সঙ্গে যে ফোটোগ্রাফটি দেওয়া হয়েছে, ইনিই মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়) এটা তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকসম্প্রতি অনেকে নিশ্চয় লক্ষ করেছেন যে, ভারত সরকারের একটি ট্র্যাফিক সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন হিজড়াদের দিয়ে করানো হয়েছেতবে বাংলাদেশে হাসিনা সরকার হিজড়াদেরকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানো যায় কি না ভাবছেন
হিজড়াদের মৃত্যু সৎকার : সাধারণ মানুষের কাছে এক রহস্যজনক অধ্যায় কোনো রহস্য নেই, সবটাই উন্মোচিত এদের প্রতি আমাদের চরম অবহেলা আর উদাসীনতাই রহস্য ঘনীভূত হয়েছে হিজড়াদের মৃতদেহ কেউ দেখেছে কি না প্রশ্ন অনেকসময় শুনতে হয় উত্তর সবার কাছে নেই, তাই ভ্যাবাচাকা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছু করারও নেই বস্তুত হিজড়াদেরও মৃত্যু হয়, মৃতদেহও হয়, মৃতদেহের সৎকারও হয়মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হিজড়াদের শবযাত্রাও হয় তবে তা নিঃশব্দে গভীর রাতে শ্মশান বা গোরস্থানের কিছুটা আগে মৃতদেহকে দাঁড় করানো হয় এরপর চতুর্দিক থেকে মৃতদেহকে ঘিরে থাকে হিজড়ারা তারপর মৃতদেহকে কিছুক্ষণ হাঁটানো হয় মৃতদেহকে কি হাঁটানো সম্ভব ? মোট্টেও সম্ভব নয় অগত্যা টেনে হিঁছড়ে নিয়ে আসা হয় শ্মশান বা গোরস্থানে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় শুইয়ে দিয়ে মৃতদেহকে উপর্যুপরি লাথি মারা হয়লাঠিপেটাও করা হয় মৃতব্যক্তি যত বড়ো প্রিয় মানুষ হন না-কেন এই আচরণে অন হিজড়াদের একদম কাঁদা  চলবে নানিয়ম নেই হিন্দু হলে নগ্ন করে চিতার উপর শোয়ানো হয়, মুসলমান হলে মাটি দেওয়ার আগে মৃতদেহকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে স্নান করানোর রীতি আছে তবে পঞ্জাবের বেশ কিছু জেলায় মৃত্যুর পর বাড়ির ছাত সরিয়ে হিড়াদের বাইরে বের করে আনা হয় যাতে খোলা ছাতের মধ্য দিয়ে মৃতব্যক্তির আত্মা চিরতরে আকাশে বিলীন হয়ে যায়অপরদিকে মৃতব্যক্তি যদি গুরু-মা হন তবে হিন্দুদের বেলায় তার বড়ো মেয়ে বা শিষ্য বা চেলা মুখাগ্নি করবে মুসলমান হলে বড়ো মেয়ে বা শিষ্য বা চেলাই পারলৌকিক সমস্ত ক্রিয়াকর্মের সম্পাদনের মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়এরপর কোথাও দীর্ঘ এক মাস কোথাও-বা ৩৯ দিন ধরে চলে অশৌচ পর্ব অন্য হিজড়া মহল্লার হিজড়ারও অশৌচ পালন করে, তবে সেটা চারদিনের মাত্রহয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও, নিমন্ত্রণ রক্ষা করে হিজড়ারাই
সেই প্রশ্নটাই আবার ঘুরে ফিরে এল হিজড়া আর সমকামী কি সমার্থক ? বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবেআদিকাল থেকে সমকাল পর্যন্ত শিল্প-সাহিত্যেও মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অভিলাষ সমকামিতার প্রতিফলন অথচ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদালতের রায়ে সহস্রাব্দ প্রাচীন সমকাম আজ বিকৃত সমকামিতা অপরাধ গ্রিক সভ্যতা থেকে প্রাচীন ভারত সমকামিতার উদাহরণ যুগে যুগে  প্রাচীন নাগরিক সমাজ, ব্যক্তির স্বাধীনতা, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণা যেখানে জন্ম নিয়েছিল গ্রিসে সেই গ্রিস, যে কখনও নাগরিকের যৌন স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি সমলিঙ্গ যৌন সংসর্গের বৈধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না সেখানে হেরোডেটাস, প্লেটোর মতো দার্শনিক-চিন্তাবিদদের লেখায় প্রায়ই পাওয়া যায় সমকামী সম্পর্কের কথা আনুমানিক খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্যাফো এই মহিলা কবির লেখার প্রতিটি পরতে পরতে নারী শরীরের বন্দনা স্যাফোর জন্মস্থান লেসবস থেকেই তো অভিধানে জায়গা পেয়েছে লেসবিয়ান শব্দটি পাশ্চাত্য থেকে এবার আসা যাক প্রাচ্যে ইতিহাস বলছে, প্রাচীন পারস্যে সমকামী সম্পর্কের প্রচলন ছিল যেমনটা ছিল, এই ভারতবর্ষেও বহু হিন্দু মন্দিরের দেওয়ালের ভাস্কর্য তো সমকামেরই অভিজ্ঞান পুরাণে বিষ্ণুর মোহিনী রূপ আর অর্ধনারীশ্বর শিব, মহাকাব্য- পুরাণের পাতায় পাতায় যেন তৃতীয় লিঙ্গের সদর্প উপস্থিতি এমনকী, বাতসায়নের কামসূত্রও বলছে সমকামিতা যৌন সম্পর্কেরই অন্য রূপ
সমকামিতা বলতে আমরা সাধারন অর্থে বুঝি পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বা নারীর সঙ্গে নারীর যৌন সম্পর্ক। সমকামিতা কিন্তু যৌন সম্পর্কের উপর নির্ভর করে না, এটা নির্ভর করে যৌন আকর্ষণের উপরে। একটি ছেলে কোনোদিন যৌন সম্পর্ক করেনি, কিন্তু করলে সে একটি মেয়েকেই বেছে নেবে। সে মেয়েদের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে বা প্রেমে পড়ে। ছেলেটি যদি ঠিক তেমন আকর্ষণ একটি ছেলের প্রতি অনুভব করে বা ছেলে হয়ে ছেলের প্রেমে পড়ে তখন সে সমকামী। যৌন সম্পর্ক হোক বা না-হোক। মোদ্দা কথা হল -- সমকামিতা একটা পছন্দ, কাজ নয়। স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ সম্পন্ন ব্যক্তিকে, অর্থাৎ একজন নারী একজন পুরুষকে অথবা একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি যৌন-আকর্যণ বোধ করলে, তাকে স্ট্রেইট (Straight) বলা হয়। সমকামিতা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ধারণা আছে এ সংক্ষেপে শ্রেণিবিভাগগুলি আলোচনা করে নিতে পারি বোঝার জন্য এই শ্রেণিবিভাগ করে হয়েছে একজন নিজেকে কী মনে করে ও কী পছন্দ করে তার উপর ভিত্তি করে।
() গে (Gay) : একজন পুরুষ নিজেকে পুরুষ মনে করে পুরুষের পোশাক পরে এবং একজন পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এই ধরনের দুইজন পুরুষ বিয়ে করলে এদের মধ্যে স্বামীকে টপ এবং স্ত্রীকে বটম বলে।
() লেসবিয়ান (Lesbian) : একজন মেয়ে নিজেকে মেয়ে মনে করে মেয়েদের পোশাক পরে এবং একজন মেয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এই ধরনের দুইজন মেয়ে বিয়ে করলে এরা পুরুষালি পোশাকে ও আচরণে একজন স্বামীর ভুমিকা পালন করে।
() ট্র্যানি : একজন পুরুষ সে নিজেকে মেয়ে মনে করে। অথবা একজন মেয়ে, সে নিজেকে পুরুষ মনে করে। সে মনে করে সে ভুল দেহে জন্মেছে। এরা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পড়ে। অনেকে হরমোন প্রয়োগ ও অস্ত্রপচার করে দেহের পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের হওয়ার চেষ্টা করে। মোদ্দা কথা এদের দেহ এক লিঙ্গের, কিন্তু মন আর-এক লিঙ্গের। যে-কোনো লিঙ্গের প্রতি এদের আকর্ষণ থাকতে পারেতবে বেশির ভাগ হিজরা এই ট্রানি ক্যাটাগরিতে পড়ে।
() বাই (Bisexuality) : একটি ছেলে বা একটি মেয়ে, সে অপর কোনো ছেলে বা মেয়ে উভয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। একটি ছেলে যে মেয়েদের প্রেমেও পড়ে আবার ছেলেদের প্রেমেও পড়ে। পর্নস্টার সানি লিওন বাইসেক্সচুয়াল
সমকামিতা (Homosexuality) একটি যৌন অভিমুখিতা, যার দ্বারা সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোঝায়। এইরূপ আকর্ষণের কারণে এক লিঙ্গের মানুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক ঘটতে পারে। প্রবৃত্তি হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের যৌন প্রবণতা"। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
উভকামিতা বিপরীতকামিতার সাথে সমকামিতা বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদের অন্তর্গত যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম বলে স্বীকৃত। ব্যক্তির মনে কেমন করে কোনো নির্দিষ্ট যৌন অভিমুখিতার সঞ্চার হয় সেই ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতৈক্য নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণ একত্রে যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণের জন্য দায়ী। জীববিদ্যানির্ভর কারণগুলিকে বেশি সমর্থন করা হয়। এর অন্তর্গত হল জিন, ভ্রূণের ক্রমপরিণতি, এই দুই প্রভাবের মেলবন্ধন অথবা এই সব কিছুর সঙ্গে সামাজিক প্রভাবের মেলবন্ধন। যৌন-অভিমুখিতা নির্ধারণে যে সন্তানপালন বা শৈশবের অভিজ্ঞতার কোনো ভূমিকা আছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আচরণের প্রভাবক হিসাবে এক পরিবেশে থাকার ভূমিকা মহিলাদের ক্ষেত্রে নগণ্য এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে শূন্য কেউ কেউ সমকামী যৌনাচরণকে অপ্রাকৃতিক মনে করলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে সমকামিতা মানব যৌনতার একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক প্রকার মাত্র এবং অন্য কোনো প্রভাবকের অস্তিত্ব ছাড়া এটি মনের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। অধিকাংশ মানুষের অভিজ্ঞতায় যৌনতার ব্যাপারে সচেতন পছন্দের কোনো ভূমিকা থাকে না। যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের বিভিন্ন কর্মসূচির কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
নানা কারণে স্বঘোষিত সমকামীর সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার মধ্যে সমলৈঙ্গিক সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষের অনুপাত নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হল সমকামভীতিজনিত বৈষম্যের কারণে অনেক সমকামীর প্রকাশ্যে তাঁদের যৌনতা না স্বীকার করা। অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও সমকামী আচরণের নিদর্শন নথিভুক্ত হয়েছে। অনেক সমকামী মানুষ স্থায়ী পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন, যদিও আদমশুমারির ফর্ম, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির আনুকূল্যে তাঁদের আত্মপ্রকাশের পথ নিরাপদ হয়েছে একেবারে সাম্প্রতিক কালে। মূল মনস্তাত্ত্বিক গঠনের দিক দিয়ে এই সম্পর্কগুলি বিষমকামী সম্পর্কের সমান। নথিভুক্ত ইতিহাস জুড়ে সমকামী সম্পর্ক এবং কার্যকলাপের প্রশস্তি ও নিন্দা -- উভয়েরই নিদর্শন মেলে,  কেবল প্রকাশের ভঙ্গিমা ও সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিজনিত তারতম্য দেখা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার অন্তর্গত বিবাহ, দত্তক গ্রহণ সন্তানপালন, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার, সামরিক পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমানাধিকার, এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সমকামীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যান্টি-বুলিং আইন বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি বিদ্বৎসমাজে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও গেএবং লেসবিয়ানশব্দদুটি অধিক জনপ্রিয়।গেশব্দটির দ্বারা পুরুষ সমকামীদের বোঝানো হয় এবং নারী সমকামীদেরকে বোঝানো হয়লেসবিয়ানশব্দটির দ্বারা। পশ্চিমে গেশব্দটি সমকামী অর্থে প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় সম্ভবত ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিলমুদ্রিত প্রকাশনায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারি “Vice Versa: America’s Gayest Magazine” নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে গেশব্দটি ব্যবহার করেন।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমকামী দেশ হল অস্ট্রেলিয়া। এদেশে সমকামীদের অধিকার রক্ষায় কড়া আইন আছে এখানকার সমকামীদের কেউ কটুক্তি করলে সোজা শ্রীঘরইউরোপ-আমেরিকাতে সমকামিতা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার মতো এতটা অধিকার তারা পায় না। সমগ্র পৃথিবীতে থেকে অনেক সমকামী প্রতি বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় আসে। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যও সমকামীরা বিশেষ অগ্রাধিকার পায় এদেশেপ্রতি বছর মার্চ মাসে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুস্টানের মতো ব্যয়বহুল অনুষ্ঠানে সমকামী অর্ধনগ্ন র‌্যালি হয় রাস্তায়। আইনের ভয়ে সমকামিতাকে খারাপ বলার সাহস হয় না কারোর এখানকার মা-বাবা প্রার্থনা করে যেন তার সন্তান সমকামী না-হয়। সমকামী হয়ে গেলে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের আইন তাদের দেয়নি অলিম্পিকের অয়োজক দেশ যেভাবে প্রচুর টাকা আয় করে, ঠিক তেমনি অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর প্রায় একই পরিমাণ টাকা সমকামিতাদের সমর্থন করে আয় করে। সমকামী বার, সমকামী ক্লাব, সমকামী র‌্যালি, প্রতি বছর কয়েক হাজার ধনী সমকামী স্থায়ী ভাবে বসবাস করার জন্য তাদের নিজেদের দেশের সমস্ত সম্পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে চলে আসে । সমকামিতা এই দেশের সরকারের বড়ো এক আয়ের উতস। অনেকে মনে করেন যে কয়টি দেশে সমকামিতা বৈধ, সব দেশেই ব্যাবসার জন্য সমকামিতা বৈধ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে দামি গাড়ি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমকামীদের কাছেই দেখা যায়। উন্নত বিশ্বে ধনী লোকেরা সমকামী হওয়াতে মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, চিকিৎসক, বিখ্যাত ব্যক্তি এমনকি সরকারও তাদেরকে মানসিক রোগী বা ফ্যান্টাসি বাতিক বলতে পারছে না। বরং তাদের এই সমকামিতাকে সমর্থন করলে বিরাট ব্যাবসায়িক লাভ আছে
অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন, ভোগবাদে সমকামিতা একটি পণ্য, অপরদিকে পশুপাখির আচরণের ধারাবাহিকতায় বিরাজমান একটি শখ ! ১৩০ টার মতো পাখির মধ্যে (এর মধ্যে লেইসান আলবাট্রসের ৩১% এর মধ্যে মেয়ে-মেয়ে ও গ্রেলাগ গিজ এর ২০% এর মধ্যে ছেলে-ছেলে) সমকামিতার প্রধান কারণ প্যারেন্টিং-এর চাহিদা কম থাকা পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধহীনতা বা এককথায় অসামাজিকতা সমকামিতাকে শখে পরিণত করে যুক্তরাজ্যের এক্সটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভলুশনারি জেনেটিসিস্ট অ্যালান ম্যুর মানুষের সমকামিতাকেও সেভাবেই দেখেছেন ইস্টার্ন সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত "Federal distortion of the homosexual footprint" এ ড: পল ক্যামেরুন দেখিয়েছেন পুরুষ ও মেয়ের বিবাহসম্পর্ক আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দেয় যেখানে সমকামীদের ক্ষেত্রে আয়ুষ্কাল ২৪ বছর কম পল ক্যামেরুন ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, কানাডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল, পোস্ট-গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদনা করে থাকেন তার নিজের ৪০ টার মতো আর্টিকেল আছে সমকামিতার উপর ১৯৯০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ডেনমাকর্কে স্বাভাবিক যৌনাচারীর গড় আয়ু যেখানে পাওয়া গেছে ৭৪, সেখানে ৫৬১ গে পার্টনার এর গড় আয়ু পাওয়া যায় ৫১ ! সমকামী মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই গড় আয়ুর হার কম, আনুমানিক ২০ বছর কম! অপরদিকে ধুমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই আয়ুষ্কাল কমে যাবার হার মাত্র ১ থেকে ৭ বছর!
১৯৭৩ সালের আগে পর্যন্ত একে মানসিক অসুস্থতা হিসাবেই দেখা হত পরে অবশ্য ১৯৭৩ সালে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা থেকে অব্যহতি দেয় অনেকে মনে করেন সমকামিতা একটি  অত্যাধিক ভোগবাদিতার উপকরণ তা ছাড়া পরিস্থিতিও এর বিকাশ পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী স্বাভাবিক যৌনসম্ভোগের উপায় না-থাকলে সমকামিতা হয়ে উঠে অপরিহার্য  যৌনাচার সেজন্যই সৈনিকদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ করার মতো ইউএলসিএ-এর আইন স্কুলের উইলিয়াম ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে আনুমানিক ৬৬,০০০ সমকামী উভকামী আছে ২০০৯ সালের গ্যালপ জরিপেও জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬৯% লোক সমাকামীদের সেনাবাহিনীতে কাজ করাকে সমর্থন করে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবার মনে করেন, যুদ্ধ শিকারে সমকামিতা পুরুষ গোত্রকে সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে প্রাচীন গ্রিসে স্পার্টানদের এলিট সৈন্যদের মধ্যে সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হত গ্রিক স্পার্টান ছাড়াও অন্য থেবেস, এথেন্সেও সমকামিতার উদাহরণ পাওয়া যায় 
সেক্স বিষয়টি পুরোপুরি শরীরের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু জেন্ডার নির্ভরশীল সমাজের উপর। যেহেতু নারী বা পুরুষের দায়িত্ব, কাজ ও আচরণ মোটামুটি সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই সমাজ পরিবর্তন বা সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জেন্ডার ধারণা বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি,  আমরা যখন কারোকেনারীবা পুরুষহিসাবে চিহ্নিত করি তখন সেখানে জৈবলিঙ্গ নির্দেশ করাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মেয়েলিবা পুরুষালিইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে জেন্ডার প্রপঞ্চকে যুক্ত করা হয় যেখানে, সেখানে নারী বা পুরুষের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে স্বভাব-আচরণগত ইত্যাদি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। আর এই কারণেই সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক লিঙ্গ বলে অনেকে অভিহিত করেন। মানবসভ্যতার বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় লিখিত ইতিহাসের সমগ্র সময়কাল জুড়ে রূপান্তরকামিতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে আমেরিকার পুরুষ রূপান্তরকামী জর্জ জরগেন্সেনের ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের রূপান্তরিত হওয়ার কাহিনি মিডিয়ায় এক সময় আলোড়ন তুলেছিল এ ছাড়া জোয়ান অব আর্ক, জীববিজ্ঞানী জোয়ান (জনাথন) রাফগার্ডেন, বাস্কেটবল খেলোয়াড় ডেনিস রডম্যান, চক্ষুচিকিৎসক এবং পেশাদার টেনিস খেলোয়ার ডঃ রেনি রিচার্ডস, সঙ্গিতজ্ঞ বিলিটিপটন সহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির মধ্যে রূপান্তরপ্রবণতার উল্লেখ ইতিহাসে পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালে মনোচিকিৎসক ওয়ালিন্দার রূপান্তরকামীদের উপরে একটি সমীক্ষা চালান। তার এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ৩৭,০০০-এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে, অপরদিকে প্রতি ১০৩,০০০-এ একজন স্ত্রী রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে। ইংল্যান্ডে এই সমীক্ষাটি চালিয়ে দেখা গেছে যে সেখানে প্রতি ৩৪,০০০-এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামী ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, আর অন্যদিকে প্রতি ১০৮,০০০-এ একজন জন্ম নিচ্ছে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামী। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে ২৪,০০০ পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং ১৫০,০০০ নারীর মধ্যে ১ জন রূপান্তরকামীর জন্ম হয়
বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদ অনুসারে যৌন অভিমুখিতার প্রধান তিনটি বর্গের অন্যতম হল সমকামিতা (অপর বর্গদুটি হল উভকামিতা ও বিপরীতকামিতা) বিভিন্ন কারণে গবেষকেরা সমকামী রূপে চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা বা সমলৈঙ্গিক যৌন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অনুপাত নির্ধারণ করতে সক্ষম হননি। আধুনিক পাশ্চাত্য জগতে বিভিন্ন প্রধান গবেষণার ফলে অনুমিত হয় সমকামী বা সমলৈঙ্গিক প্রণয় ও রতিক্রিয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মোট জনসংখ্যার ২% থেকে ১৩%। ২০০৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, জনসংখ্যার ২০% নাম প্রকাশ না-করে নিজেদের মধ্যে সমকামী অনুভূতির কথা স্বীকার করেছেন যদিও এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে খুব অল্পজনই নিজেদের সরাসরি সমকামীরূপে চিহ্নিত করেন।
পথেঘাটে-বেশ্যাপাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পুরুষ যৌনকর্মীর দেখা মেলেএই পুরুষ যৌনকর্মীরা বেশিরভাগই হয় রূপান্তকামী, না-হয় সমকামী এদের মানসিকতা কিন্তু আলাদা যৌন-অনুভূতিও আলাদা পুরুষের খোলস ছেড়ে যাদের পরিপূর্ণ নারীতে রূপান্তরিত হওয়ার বাসনা জাগে, তারাই রূপান্তরকামী বা যৌন পরিবর্তনকামী ( Transsexual) নারীরাও এই ধরনের মানসিকতার হতে পারে অর্থাৎ নারীর খোলস ছেড়ে পরিপূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত হওয়ার বাসনা জাগেএরা লিঙ্গ ছেদন করতে চায় নারূপান্তরকামীদের পাশাপাশি আছে সমকামিতা বা Homosexuality এই দুই মানসিকতার মধ্যে মিল যেমন আছে, তেমনি অমিলও প্রচুর সব রূপান্তরকামীই সমকামী, কিন্তু সব সমকামীরাই রূপান্তরকামী নয় সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও সমকামীরা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করে না সমকামী সম্পর্কে আবদ্ধ দুই সম ব্যক্তি একজন পুরুষের মতো সক্রিয় (Active), অপরজন নারীদের মতো নিষ্ক্রিয় (Passive) ভূমিকা পালন করে, যৌনমিলনের ক্ষেত্রেযদিও বিষমকামীদের ক্ষেত্রে নারীরা কখনো-সখনো যৌনমিলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে, তা সত্ত্বেও সমকামীদের যৌন-ভূমিকাটা বোঝানোর জন্য সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় প্রসঙ্গটা উঠে এসেছে রূপান্তকামিতা এবং সমকামিতাএই দুই ধরনের মানসিকতা যে শুধুমাত্র শৈশব ও কৈশোরেই দেখা দেবে এমন নয়, পরিণত বয়সেও ধীরে ধীরে সমকামী মানসিকতার জন্ম নিতে পারে
পর্নোছবিতে রূপান্তরকামীদের প্রচুর পরিমাণে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় এদের যেমন সতেজ এবং প্রমাণ মাপের লিঙ্গ আছে, তেমনি স্বাভাবিক নারীদের চাইতে বেশি সুডৌল-নিটোল স্তনও থাকে এরা টু ইন ওয়ান অর্থাৎ এরা কখনো পুরুষের ভূমিকা নিয়ে পুরুষের পায়ুপথে লিঙ্গ প্রবেশ ঘটায়, কখনো-বা নারী হয়ে অন্য পুরুষের লিঙ্গ পায়ুপথে গ্রহণ করে পর্নোছবিতে এইসব “Shemale” বা “Ladyboy”-দের দাপট লক্ষ করার মতো
হিজড়াদের মধ্যে যারা যৌনকর্মী তাদেরধুরানিবলা হয়হিজড়াজগতেধুরানিবলতেনারীযৌনকর্মীকেই বোঝায়যাই হোক, আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক মর্যাদা অনুসারে ধুরানিদের চারভাগে ভাগ করা হয় যেমন – () খানদান ধুরানি (অত্যন্ত ধনী পরিবারের রূপান্তরকামীও সমকামী পুরুষরা খানদান ধুরানি হয়ে আছে পুরুষের সান্নিধ্য যৌনসুখের আকর্ষণেই এরা এই পথে আসে), () লহরি ধুরানি (এরা সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই আসে এরা যৌন পরিবর্তনকামী পুরুষ পুরুষ সঙ্গলাভের আশায় এরাও এই পেশা গ্রহণ করেছে), () আদত ধুরানি (দত ধুরান হল সমকামী পুরুষ যৌনকর্মীদের একেবারে তলানি খোলা আকাশের নীচে পলিথিন বিছিয়ে এরা খরিদ্দারদের তৃপ্ত করে )এবং () আকুয়া ধুরানি (স্বেচ্ছায় পুরুষাঙ্গ কর্তন করে হিজড়া সেজেছে এরা এরা যৌন পরিবর্তনকামী) এরা সকলেই সমকাম করে আসলে হিজড়া দলের একটা বড়ো অংশই হল হয় রূপান্তরকামী, নয় সমকামীএরা পায়ুকামের (Anal Sex) মাধ্যমেই যৌনক্রিয়া করেতবে পায়ুমৈথুন ছাড়াও মুখমেহন (Oral Sex) এবং সঙ্গীর ঊরুদ্বয়ে লিঙ্গস্থাপন (Irtra Crusal Sex) করেও যৌনসঙ্গম করে
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় পায়ুধর্ষণের (Anal Rape) কোনো কথা উল্লেখ নেই কিন্তু ৩৭৭ ধারায় পায়ুকামের কথা উল্লেখ আছে পায়ুকামকে ৩৭৭ ধারায় প্রকৃতি-বিরুদ্ধ যৌন-আচরণ (Carnal intercourse against the order of nature) হিসাবে অভিহিত করা হয়েছেপায়ুকাম এবং পায়ুধর্ষণের মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টানা হয়নি আইনে বলা হয়েছে – “In this crime question of consent has no value. Both the active and passive agents will be punished even when the act has been done with the consent of the passive agent”(J. B. Mukherjeee). এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারার আরও একটি বিষয় হলমুখমৈথুন’ (Oral Sex), এটি আইনত দণ্ডনীয় এক্ষেত্রে সমকাম বিষমকাম হিসাবে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ আইনে দেওয়া হয়নি অথচ ভাবুন তো, বর্তমান যুগে মানুষের যৌনজীবনে মুখমৈথুন করে না এমন কাপল খুঁজে পাওয়া অতি দুর্লভ ব্যাপারবর্তমান কেন বলছি, প্রাচীন যুগে খাজুরাহো মন্দিরে লক্ষ করুন, সেখানে মুখমৈথুনের মুর্তি দেখা মিলবেসঙ্গী পুরুষই হোক বা নারীই হোক, শিশ্ন বা লিঙ্গ যদি তার মুখে স্থাপন করা হয়, তবে তা পায়ুকামের সমান অপরাধএই বিশেষ যৌনক্রিয়াকে ফেলাসিয়ো (Fellatio) বলে আইে ফেলাসিয়ো অপরাধ হলেও যোনিতে মুখস্থাপন বিষয়ে আইন এক্কেবারে চুপবাৎসায়নেরকামশাস্ত্রম্’-এও মুখমৈথুনের উল্লেখ আছে তাহলে কোন্ যুক্তিতে মুখমৈথুন এবং মুখমেহন দণ্ডনীয় অপরাধ হবে ?
সমকামিতাকে অপরাধ বলেই গণ্য করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট (১১ ডিসেম্বর, ২০১৩)সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতা দণ্ডনীয় অপরাধ। যতক্ষণ-না সংসদ আইন করে এই ধারা লোপ করছে ততক্ষণ সমকামিতা আইনত অপরাধই থাকছে। এর আগে ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, ভারতীয় দন্ডবিধির এই ধারাটি বৈষম্যমূলক এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়ের সুবাদেই সমকামী এবং রূপান্তরকামীরা তাঁদের অধিকার অর্জনের পথে এগিয়েছিলেন বলে দাবি করতেন। সুপ্রিম কোর্টের এই বক্তব্য সেই এলজিবিটি আন্দোলনকারীদের পক্ষে বড়ো ধাক্কা। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চের বক্তব্য -- "৩৭৭ ধারা বাতিল নয়। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন পর্যন্ত।"
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে, প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যে-কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে -যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে -- দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে। এই ধারায় অস্বাভাবিক অপরাধের শাস্তির বিধান করা হয়েছে এবং তা অবশ্য প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধভাবে হতে হবে। যদিও প্রাকৃতিক নিয়ম বিরুদ্ধ যৌন সহবাসের সর্বজনীন স্বীকৃত সংজ্ঞা এখনও নির্ণীত হয়নি।
দেশে দেশে সমকামী সমকামীদের আইনি অবস্থান, আসুন দেখে নিই @ বৈধ : ইজরায়েল , শ্রীলঙ্কা , চিন , জাপান , উত্তর কোরিয়া , দক্ষিণ কোরিয়া , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , ফিলিপিন্স @ অবৈধ : ভুটান ,নেপাল , মায়ানমার  @ মহিলা সম্পর্ক বৈধ : সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আমেরিকা, গায়ানা ছাড়া স্বীকৃতি সর্বত্র অস্ট্রেলিয়া মাইক্রোনেশিয়া মেলানেশিয়ার কয়েকটি দেশ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সহ সর্বত্রই বৈধ  @ আফ্রিকা বৈধ : মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা,  @ অবৈধ : কেনিয়া  @ মহিলা সম্পর্ক বৈধ : মরিশাস , সেশেলস , জিম্বাবোয়ে ইউরোপ বৈধতা সব দেশেই উত্তর আমেরিকাকয়েকটি ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র ছাড়া উত্তর আমেরিকার সর্বত্রই সমকামিতা বৈধ @ বৈধ : ইরাক , বাহরিনে (স্বীকৃতি ন্যূনতম ২১ বছরের সমকামী সম্পর্কে, যদি দুজনেই সহমত হন )  @ যৌনসঙ্গম বেআইনি নয় : আলবানিয়া , তুরস্ক , জর্ডন , ইন্দোনেশিয়া মালি @ সমকাম প্রকৃতি-বিরুদ্ধ , অবৈধ , বেআইনি৷ অতএব অপরাধ৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বৈধ৷  @ মুসলিম বিশ্বে নারী সমকামিতাকে স্বীকৃতি : কুয়েত অধিকারের স্বার্থে লড়াই জারি : লেবানন  @ মৃত্যুদণ্ড : সৌদি আরব , লিবিয়া , সুদান , ইরান , আফগানিস্তান , নাইজেরিয়া , ইয়েমেন  @ জেল জরিমানা : পাকিস্তান (ন্যূনতম দু-বছর থেকে যাবজ্জীবন), বাংলাদেশ (ন্যূনতম দশ বছর থেকে যাবজ্জীবন ), কাতার , আলজিরিয়া , উজবেকিস্তান , মলদ্বীপ , সিরিয়া , মালয়েশিয়া , মিশর @ ১৯৭৯ -এর ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে সমকামিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ,০০০৷
পরিশেষে বলবসাধারণ মানুষের কাছে এরা প্রান্তিক, এরা হিজড়া অথবা সমকামী তাই এদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাজনিত উৎকণ্ঠা উদবেগ খুব সাধারণভাবেই লক্ষ করা যায় দ্বৈতসত্ত্বার টানাপোড়েনে খোজারা জর্জরিত এদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা যেমন প্রকট, তেমনি হীনমন্যতা কুরে কুরে খায়বেশিরভাগ খোজাই যেহেতু পরিস্থিতির চাপে লিঙ্গ কর্তন করে হিজড়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দা হয়, তাই তারা জীবন সহজভাবে মেনে নিতে পারে না উৎকণ্ঠা চেপে ধরে ক্রমাগত, প্রতি মুহূর্ত হিজড়ারা মূলত সমকামীএকথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সুস্থ যৌনজীবনে এরা অক্ষম বলেই সমকামী মানসিকতার শিকার সেই কারণেই তথাকথিত পরিশীলিত সমাজের মানুষেরা এদের নারীর বিকল্প হিসাবে ভাবে এই উপেক্ষিত হিজড়ারা মূলস্রোতের মানুষদের কাছ থেকে স্নেহ-ভালোবাসা-সম্মান পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে বিনিময়ে মূলস্রোতের মানুষেরা এদেরকে কৌতুকের বস্তু মনে করে, হিজড়া আর জোকার যেন সমার্থক তার উপর এদের সম্বন্ধে বিপুল অজ্ঞতার কারণে দূরত্ব বেড়েই চলেছে আর এই অজ্ঞতার ফলেই এদের নিয়ে চটুল রসিকতা ছেলেছোকারা এদের দেখলেইএই আমারটা একটু চুষে দিবি ?” বলে লেগপুলিং করে এদেরকে মানবিক আন্তরিকতা সহানুভূতির সঙ্গে দেখার কথা কেউ ভাবতে পারে না নানা রকমের কটুক্তি, কু-ইঙ্গিতের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ এদের উত্যক্ত করে, উত্তেজিত করে সমাজের অনেকেই হিজড়াদেরঅশুভ শক্তিভাবে আবার কেউ কেউ অশুভ বা অপয়া তো নয়ই, উলটে শুভ বা পয়া ভাবে কারোর কারোর মধ্যে হিজড়াদের  শ্রদ্ধা করার রেওয়াজও আছে
সারা পৃথিবীতে (বিশেষ করে ভারতে) উভলিঙ্গ মানবদের প্রাপ্য অধিকার ও মানুষ হিসাবে পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ আইনের খুব প্রয়োজন, সনাতন লৈঙ্গিক বলয় ভাঙারও প্রয়োজন ঘৃণা নয়, অবজ্ঞা নয়শুধু মানুষ পাক মানুষের সম্মান সার্বিক উন্নতির জোয়ারে প্লাবিত হলেও আমরা এখনও পুরোপুরি বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে উঠতে পারিনি আমাদের দেশে এখনও সমকামিতা নিষিদ্ধ বিধায় হিজড়েদের যৌনজীবন অপ্রতিষ্ঠিত ভাবলে তখন অবাক লাগে যখন দেখছি মানুষের যৌনজীবনে রাষ্ট্র নাক গলায় একটা রাষ্ট্র বলে দেবে একজন মানুষ কীভাবে, কখন যৌনমিলন করবে ? একটা রাষ্ট্র বলে দেবে একজন মানুষ যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে কীরকম যৌনাচরণ করবে ? রাষ্ট্র বলে দেবে কে মুখমৈথুন করবে, কে পায়ুমৈথুন, কে উরুমৈথুন করবে, কে স্তনমৈথুন করবে, কে জননাঙ্গমৈথুন করবে ? এসব কি রাষ্ট্রের বলার অপেক্ষায় থাকে নাকি মানুষ ? রাষ্ট্র সেখানেই নাক গলাতে পারে যেখানে যৌনমিলনের নামে অত্যাচার চলে যদি যৌনসঙ্গীর কেউ একজন তেমন অভিযোগ করে যে তাঁকে দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ যৌনাচরণে বাধ্য করাচ্ছে তা সে সমকামীদের ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা বিসমকামীএই যে সমকামীরা লোক দেখা নেই জন দেখা নেই যাকে-তাকে সমকাম করার জন্য বিরক্ত করে মারেএটা অবশ্যই দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়া উচিত সাধারণ নারী-পুরুষের যৌনতা সংক্রান্ত দণ্ডবিধিতে যেমন শাস্তির বিধান আছে তাই বলে সমকামকে স্বীকৃতি দিলে পায়ুমৈথুনকে স্বীকৃতি দিতে হবে, সেই কারণে সমকাম নিষিদ্ধ যুক্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না সমকাম এবং সমকামীদের স্বীকৃতি দিলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে ? স্বীকৃতি দিলে পৃথিবীর সকলে লাইন দিয়ে সমকামী হয়ে যাবে ? যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নিই পৃথিবীর সকলে সমকামী হয়ে যাবে, তাতে কার কী এসে যাবে ? সূর্য কি পশ্চিমদিক থেকে উঠতে শুরু করে দেবে ? সন্তানের জন্ম ? বিসমকামীদের মধ্যে কত হাজার হাজার দম্পতি সন্তানের জন্ম দিতে অপারগ, সে কারণে কি পৃথিবী রসাতলে চলে গেছে ? খুবই অবাক লাগে মানুষের ব্যক্তিগত গণ্ডীর কামনা-বাসনা যখন সমাজ রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জালে আটকে থাকে এবং তাদের স্বীকৃতির অপেক্ষায় ধুকে ধুকে মরে  চিলেকোঠার খাঁচায় ডানায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে যেই পাখিটি এখনও কাতরাচ্ছে সেও স্বপ্ন বুনে আকাশে পুনরায় ডানা মেলার তারও পূর্ণ অধিকার আছে ফিরে যাওয়ার তার জগতে লাঞ্ছনা, বঞ্চনার জগত থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও অস্তিত্বের বৈধতার সংগ্রাম করে চলছে বৃহন্নলারা হাজার হাজার শিখণ্ডী চোখের দ্যুতির মাঝে স্বপ্ন লালন করে চলছে সম্মান সমৃদ্ধির জীবনের
আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গহিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মানবিক দাবিটাও। রূপান্তরী মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিস্থলেতৃতীয় লিঙ্গহিসাবে আইডেন্টটি করেছেন ৩৭৭ নম্বর ধারার কবলে পড়ে আমার যে সমস্ত ভাই-বোন-বন্ধুরা যৌন-অবদমিত হয়ে বন্দিদশায় দিন কাটাচ্ছেন আমি বিসমকামী হয়েও তাদের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করি তাদের যন্ত্রণা আমি উপলব্ধি করি আমি তাদের যৌনভাবনাকে সম্মান করি, সমর্থনও করি কারণ আমি মনে করি ওদের যৌনচেতনা প্রাকৃতিকই যৌন-প্যাশানে আমাদের মতো তো নিশ্চয় নয়, ওদের মতো তো বটেই ! ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সমকামীদের দাবি অন্যায্য বলেছেন বস্তুত সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ৷ মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে ভাবে ঢুকে পড়ার অধিকার বিচারব্যবস্থারও থাকতে পারে নাকি৷ প্রান্তবয়স্ক দুজন মানুষ তাদের যৌনজীবনে কী কী স্বাধীনতা নেবেন সে ব্যাপারে কেন মন্তব্য করবে আদালত ? তাদের মতো করে যৌনতা করলে সমকামীদের শাস্তি দেওয়া হবে ? একজন পুরুষ নারীকে আদর না-করে কোনো পুরুষকে আদর করলে কিংবা একজন নারী যদি পুরুষকে আদর না করে কোনো নারীকে আদর করে, তবে তাদের জেল দিতে হবে ? এটা কেমনতর অপরাধ ! এর বিরুদ্ধে শুধু সমকামীরা নয় , প্রতিবাদ করা উচিত সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের আইনি বিশেষজ্ঞেরা স্পষ্টই বলছেন , সংবিধানের ১৪ , ১৫ ২১ ধারা ব্যক্তি মানুষের যে সমানাধিকার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তার পরিপন্থী৷এটা তো একটা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়৷ সেই পছন্দ তো অন্য কেউ করে দিতে পারে না৷ তবে হ্যাঁ, শুধু সৃষ্টি অর্থাৎ সন্তানধারণই যদি হয় ভালোবাসার সংজ্ঞা হয়, তা হলে তো অনেক কিছুই অস্বাভাবিক৷ শীর্ষ আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারাকে সাংবিধানিক বলে বহাল রেখেছে , তা কেবল মাত্র পুরুষ বা নারীর সমকামিতার কথা বলে না৷ সেখানে বিসমকামিতার কথাও বলা আছে৷ সে ক্ষেত্রে ওরাল সেক্স অ্যানাল সেক্সও কিন্ত্ত অপরাধযোগ্য৷ কারণ তাতে সৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই৷ তাই ভালোবাসা বা প্রেমের একমাত্রিক অভিমুখের বাইরে কিন্ত্ত দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ভাবছেন না৷
১৬৩ বছর আগে ব্রিটিশ ভারত একে অপরাধ বলে গণ্য করেছিল৷ তার আগে পর্যন্ত কিন্ত্ত সমকামিতা নিয়ে ভারতীয় সমাজে সেভাবে কোনও হেলদোল ছিল না৷ প্রাচীন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত যেখানে চিন্তার দিক থেকে এতটা অগ্রসর ছিল, তা হলে একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে কেন সুপ্রিম কোর্টের এহেন রায় ? কেন পুরুষের সঙ্গে পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে মহিলার সম্পর্ককে এখনওপ্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচারণভাবা হচ্ছে ? সুপ্রিম কোর্টের রায় বলছে -- তারা ভরসা করেছে ১৮৬০ সালের মেকলের ব্যাখ্যাকেই৷ তিনি বলেছিলেন , ‘যৌনতা সৃষ্টির জন্য, কোনও বিনোদনের জন্য নয়৷ ধরনের সম্পর্ক থেকে কোনও সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই এই সম্পর্ক প্রাকৃতিক নয়৷ শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷তার মানে সৃষ্টি হয়ে গেলে যৌনমিলন বন্ধ দেওয়া উচিত, তাই নয় কি ? কন্ডোম বা অন্যান্য পিল ব্যবহার করে যৌনমিলন করার উদ্দেশ্য তো বিনোদনই
পাঠক ভালো করে লক্ষ করুন এই লাইনটি – “যৌনতা সৃষ্টির জন্য, কোনও বিনোদনের জন্য নয়৷ ধরনের সম্পর্ক থেকে কোনও সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷  কাজেই এই সম্পর্ক প্রাকৃতিক নয় যৌনতা  সৃষ্টির জন্য ? কবে থেকে ? বাজারে, থুড়ি আমাদের মনুষ্যসমাজে এমন একটা কথা চালু আছে বইকি আমিও শুনেছি হিপোক্রাসি, জাস্ট হিপোক্রাসি ভণ্ডামি দেখো, আমরা মানবজাতি কী মহান উদ্দেশ্যই-না যৌনক্রীড়া করি, এটা বোঝাতেই বোধহয়  এই গপ্পো সমাজে ছড়িয়ে আছে যখন বা যেদিন  যে আদি মানব-মানবীটি প্রথম যৌনক্রীড়া করেছিল সেটাই তো ছিল স্রেফ যৌনতাড়না ওরা সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করেছে বলে কোথাও উল্লেখ পাইনি শিবপুরাণে শিব-পার্বতীর যে দীর্ঘ সময় একটানা যৌনক্রীড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে কোনো সৃষ্টির কাহিনি বর্ণিত নেই বরং সৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে যাবে এই আতঙ্কে স্বয়ং বিষ্ণু  শিব-পার্বতীর বেডরুমে শুকপাখিকে পাঠিয়ে দেয় তাদের যৌনক্রীড়া ঘেটে দেওয়ার জন্য
বিসমকামীরা যদি বলেন তারা শুধুই সৃষ্টির জন্যই যৌনক্রীড়া করেন, তা করুন না সমকামীদের যৌনতায় যদি কিছু সৃষ্টি না হয় তাতে বিসমকামীদের অসুবিধাটা কোথায় ? ওরা তো কারোর পাকা ধানে মই দিচ্ছে না ! আপনি বা আপনারা বা আদালত বা রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিন বা না-দিন তাতে তো ওদের সৃষ্টিহীন যৌনতা বন্ধ থাকবে না পৃথিবীও রসাতলে যাবে নাস্বীকৃতি দিলেও না, স্বীকৃতি না-দিলেও না আপনার পছন্দ নয় বলে তো বিকল্প যৌনতা মিথ্যা হয়ে যাবে না  আপনার পছন্দ নয় বলে আপনি কোনো একজনের জীবনও বিপন্ন করে তুলতে পারেন না মনে রাখবেন, বিসমকামীদেরই সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনতার ফলে যে হাজার হাজার সন্তান পিতৃমাতৃপরিচয়হীন হয়ে অনাথ আশ্রমগুলিতে অনাদরে অসহায় হয়ে আছে, প্রয়োজন হলে ওই সমকামী দম্পতি সেইসব সন্তান দত্তক নিয়ে বাবা-মা হওয়ার অহংকারে অহংকারী হবেন আমিও চাই সমকামী দম্পতিরা সন্তান দত্তক নিয়ে পিতা-মাতার সাধ মেটাক
সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া, বিনোদনের জন্য নয়এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনো দৃষ্টান্তই আমি উপস্থাপন করতে পারছি না মানুষ মূলত উচ্ছৃঙ্খল যৌনাচারকে শৃঙ্খলিত-বৈধতা দেওয়ার জন্যই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করেছিল শুধু বৈধ যৌনতাই নয়, সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত করতেও বিবাহের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল মানুষ শুধুমাত্র সৃষ্টির জন্যই যৌনতা করে না, করে না-বলেই মানুষের জন্য যৌনক্রীড়ার সময় X ২৪ X ৩৬৫ দিনই সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না, তাই অনেক অবিবেচক পাষণ্ড মানুষ ঋতুচক্র চলাকালীনও মিলিত হন সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না-বলেই  গর্ভবতী হয়ে পড়লেও যৌনক্রীড়া বন্ধ করে না সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না-বলেই অনেকে বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা করে থাকে সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না-বলেই অনেক নারী বা পুরুষ একাধিক পুরুষ বা নারীর সঙ্গলাভের প্রত্যাশা করে মানুষ সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না-বলেই সারা পৃথিবী জুড়ে পতিতাপল্লি বা পতিতাবৃত্তির এত রমরমা পতিতাপল্লিতে কেউ নিশ্চয় সৃষ্টি করতে যায় না ! প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজের পাতায় যৌন কেলেঙ্কারীর খবরগুলি আমরা পাই সেগুলি নিশ্চয় সৃষ্টির জন্য বলবেন না এতো যে ধর্ষণকাণ্ড (জোরপূর্বক যৌনক্রীড়া) ঘটে যায় গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন কোথাও-না-কোথাও, তা কি সৃষ্টির জন্য ? তবে প্রাচীনকালে নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে শুধুমাত্র সন্তান সষ্টির জন্যই যৌনমিলন করতে হত এটি ছিল বিশেষ শর্তসাপেক্ষ যৌনমিলন পাণ্ডবের পাঁচজন, কৌরবদের ১০১ জন, কর্ণ, রাম-লক্ষ্মণ-ভরত-শত্রুঘ্ন প্রমুখরা তো নিয়োগ প্রথারই ফসল এই ব্যতিক্রমী যৌনমিলনগুলি অবশ্যই শুধুমাত্র সৃষ্টির জন্য ছিল ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই
একটা মানুষ তার মোট জীবনে (কমবেশি) ১০,০০০ থেকে ১১,০০০ যৌনদিবস (নিশি ?) পান তার মধ্যে মাত্র ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন সৃষ্টির জন্য ব্যয় করেন বাকি যৌনক্রীড়ার দীর্ঘ দিনগুলি শুধুই যৌনানন্দ বা যৌনবিনোদন বা যৌনসুখের জন্য অতিবাহিত করে থাকে তাই পাত্র বা পাত্রী যৌনক্রীড়ায় অক্ষম হলে  কোনো ক্ষমা নেই সোজা ডিভোর্সের মামলা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলে ডিভোর্স হয় কি না আমার জানা নেই, তবে পাত্র বা পাত্রীর যে কেউ একজন যৌনক্রীড়ায় অক্ষম হলে এক লহমায় সম্পর্ক শেষ যে যুগে মানুষের যৌনক্রীড়া মানেই অনিবার্য সন্তানের জন্ম হত,  সে যুগে মানুষ নিশ্চয় খুব  অসহায় ছিল সেই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জন্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হল মানুষের সেই অসহায়তা এখন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত সারা পৃথিবী জুড়ে রক্তপাতহীন বিপ্লব ঘটে গেল বাজারে এখন হাজারটা জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সুলভে পাওয়া যায়, যার যার সুবিধামতো এইসব প্রোডাক্টের বিক্রিবাটাও ব্যাপক এমন কি স্রেফ যৌনসুখ করতে গিয়ে সন্তান যদি এসেও যায়  সমূলে বিনাশ করার তারও ব্যবস্থা পর্যাপ্ত মজুত আছে সন্তানহীন (পড়ুন সৃষ্টিহীন) যৌনসুখ পেতে মানুষ কি-না করছেন! এরপরেও কেউ যদি বলে সৃষ্টির জন্যই যৌনতা, তাহলে বলব ওসব হিপোক্রাসি ঝেড়ে ফেলে আসুন প্রান্তিক হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াই মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হই ভারত পথ-প্রদর্শক হতে পারত, তার বদলে ভারত এখন ক্রমশ পিছন দিকে এগোতে চাইছে৷ একে চূড়ান্তপশ্চাদগামী মানসিকতালজ্জাছাড়া অন্য কোনও ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না ভুললে চলবে না -- চোখ বন্ধ রাখলে প্রলয় থেমে থাকে না (সমাপ্ত)
======================================================
তথ্যসূত্র : () ব্রহ্মভার্গবপুরাণকমল চক্রবর্তী () হলদে গোলাপস্বপ্নময় চক্রবর্তী () Let us live : Social Exclusion of Hijra Community – Sibsankar Mal() অন্তহীন অন্তরীণ প্রোষিতভর্তৃকাসোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় () ভারতের হিজড়ে সমাজঅজয় মজুমদার ও নিলয় বসু() The Truth About Me -- A Hijra Life Story -- A. Revathi, Penguin () দেবদাসীতীর্থষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় () অপরাধ জগতে ভাষা শব্দকোষভক্তিপ্রসাদ মল্লিক () হিজড়ে কথা : রক্তমাংসের অসংগতি এবংপিনি দাসগুহ, উৎস মানুস (১০) না-পুরুষ, না-মেয়ে মহাভারতের গোপন পর্বরমাপ্রসাদ ঘোষাল, প্রতিদিন (১১) নপুংসকঅনিরুদ্ধ ধর, সানন্দা (১২) পুরুষ যখন যৌনকর্মীমজুমদার বসু

কোন মন্তব্য নেই: