শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

ভারতবর্ষে ইসলাম : প্রবেশ এবং প্রস্থান (প্রথম পর্ব)



[মুখবন্ধ : এই প্রবন্ধটির বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অতএব লেখা চলাকালীন  যথাযথ যুক্তি ছাড়া কারোকে আলটপকা মন্তব্য না-করার অনুরোধ রাখছি। লেখা প্রথম থেকে না-পড়ে মাঝখান থেকে কেউ মন্তব্য করবেন না। যদি কারোর মনে হয় তিনি আমার জানার বাইরে আরও বেশি কিছু জানেন, তাহলে লিখিতভাবে বক্তব্য রেখে আপনি যা জানেন সেটা সবাইকে জানান। সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোনোরকম কটুক্তি ডিলিট করে দেওয়া হবে, বারবার একই আচরণ করলে সোজা ‘নোটিশ’। বিতর্ক অনাবশ্যক, আলোচনা চলতেই পারে।এটি একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ, গবেষণা করতে গিয়ে যেসব গ্রন্থাদির সহায়তা নেব, সেগুলি শেষ পর্বে উল্লেখ করা হবে। যেহেতু প্রবন্ধটি ইতিহাস নয়, ইতিহাসের ইতিহাস – সে কারণে আমার জানার সঙ্গে আপনার জানা সবসময় নাও মিলতে পারে।প্রতিটি ধর্মব্যবস্থায় যেমন ভালোর দিক আছে, তেমনি মন্দের দিকও আছে -- আমার লেখায় দুটি দিকই আলোচিত হবে, কোনোরকম ফিল্টার ছাড়াই।]

“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে/কত মানুষের ধারা/দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে/ সমুদ্রে হল হারা।/হেথায় আর্য, হেথা অনার্য/হেথায় দ্রাবিড়, চীন--/শক-হুন-দল পাঠান মোগল/এক দেহে হল লীন।/পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার,/সেথা হতে সবে আনে উপহার,/দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/যাবে না ফিরে,/এই ভারতের মহামানবের/সাগরতীরে।/……………..এসো হে আর্য, এসো অনার্য,/হিন্দু মুসলমান।/এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ,/ এসো এসো খৃস্টান।/এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন/ধরো হাত সবাকার,/এসো হে পতিত করো অপনীত/সব অপমানভার।/মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা/মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,/সবারে-পরশে-পবিত্র-করা/তীর্থনীরে।/ আজি ভারতের মহামানবের/সাগরতীরে।”

ভারতে ইসলাম তথা মুসলমানদের ইতিহাস নিয়ে লিখতে বসে মহামানব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লিখিত উদ্ধৃতিটি উল্লেখ না-করে শুরু করতে পারছিলাম না। প্রায় ৭০০ বছরের ইতিহাস তো সোজা কথা নয়। ভারতবর্ষের পরতে পরতে মুসলিমদের সুকীর্তিতে যেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে, কুকীর্তিতেও তেমন কালিমালিপ্ত হয়ে আছে।আর্য-অনার্য-হিন্দু-মুসলমান-ইংরাজ-খ্রিস্টান যখন এক দেহে লীন হয়, তখন সেই দেশে একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের ইতিহাস লেখা সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে সেই ধর্মাবলম্বীদের শাসনকাল যদি ৭০০ বছরের হয়। না, ঠিক ইতিহাস নয় হয়তো – ইতিহাসের ইতিহাস।
সেই ইতিহাসের সন্ধান তো করবই, তার আগে জানা প্রয়োজন ইসলাম ধর্মের ইতিহাস। ইসলাম একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম । কোরান দ্বারা পরিচালিত --  যা  এমন এক কিতাব যা  হবহু আল্লাহর বাণী এবং ইসলামের প্রধান নবি মোহাম্মদের প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শও এর ভিত্তি । বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে । ইসলামের অনুসারীরা মোহাম্মদকে শেষ নবি বলে মনে করেন।অনেকের ধারণা যে মোহাম্মদ হলেন এই ধর্মের প্রবর্তক। তবে মুসলিমদের মতে, তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রসুল বা পয়গম্বর। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র কোরান ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। পবিত্র কোরান আল্লাহর বাণী এবং এটি তার কর্তৃক মোহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মোহাম্মদ শেষ নবি। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কোরানকে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে কোনো হাদিসের মর্মার্থ কোরানের বিরুদ্ধে গেলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়।

বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (চতুর্থ/শেষ পর্ব)



গ্রহশান্তির জন্য জ্যোতিষবাবুরা রত্ন-পাথর ছাড়াও গাছের মূল বা শিকড় ও ধাতু বা মেটাল ব্যবহারের নিদান দেন। নাকের বদলে নরুন আর কী ! কী আছে শিকড়-বাকড়ে ? শরীরে শিকড়-বাকড় বাঁধলে দুষ্ট গ্রহরা পালিয়ে যায় ? শিকড়-বাকড়ের দোকানে লোকজন দেখি ভিড় করে থাকে, বিশেষ করে শনি-মঙ্গলবারে। মূল-বিক্রেতারা মূল-ক্রেতাদের একটা কার্যকরী আপ্ত্যবাক্য শুনিয়ে থাকে, তা হল – গাছ কথা বলে। গাছ তো কথা বলেই। কিন্তু জ্যোতিষবাবু, গাছকে কথা বলানোরক্ ক্ষমতা আপনাদের নেই। মানে গাছদের কথা বলিয়ে গ্রহদের খেদাতে পারবেন না। ওটা চিকিৎসকদের কাজ, চিকিৎসকরাই পারেন। চিকিৎসকরাই পারেন চিকিৎসা পদ্ধতিতে। দেখুন কীভাবে পারে -- জ্যোতিষবাবুদের মতে সূর্য বা রবি গ্রহের কোপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে বিল্বমূল অর্থাৎ বেলের শিকড় হাতে-গলায় বাঁধতে হবে। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য বলছেন--(১) বেলের শিকড়ের ছাল ৩/৪ গ্রাম মাত্রায় গরম জলে ৪/৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে ছেঁকে তার সঙ্গে একটু বার্লি বা খইয়ের মণ্ড ও অল্প চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের বমি ও অতিসার বন্ধ হয়ে যায়। (২) বেলের মূলের ছালচূর্ণ ৬ থেকে ১২ মাত্রায় দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হৃদ্দৌর্বল্য দূর হয়। এছাড়া অনিদ্রা ও ঔদাসীন্যভাবও কেটে যায়।(৩) বিল্বমূলের ছাল ১২ থেকে ১৪ গ্রেনের সঙ্গে ৬ গ্রেন জিরে বেটে গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ধাতুতারল্যে বা শুক্রতারল্যে উপকার পাওয়া যায়।জ্যোতিষবাবুরা বলেন রবির প্রকোপে হৃদরোগ, শিরঃপীড়া হয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র এ অসুখগুলি সারবে বলেনি যে। তাহলে বিল্বমূল ব্যবহার করবেন কেন ? ভেবেছেন ?

জ্যোতিষবাবুদের মতে চন্দ্র বা চাঁদ গ্রহের কোপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ক্ষীরিকা বা ক্ষীরা বা শশার মূল হাতে-গলায় বাঁধতে হবে। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য বলছেন--(১) সৌন্দর্য পিপাসু নারী-পুরুষেরা শশা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। (২) পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে শশার বিকল্প নেই। (৩) জলশূন্যতা দূর করে সারাদিন কাজের ব্যস্ততার কারণে পর্যাপ্ত জল পান করা হয় না অনেকেরই। এই জল ঘাটতি দূর করতে শশার তুলনা হয় না। শশায় ৯০ ভাগ জল থাকায় শরীরের প্রয়োজনীয় জলের অভাব দূর করে শরীর সুস্থ রাখে। (৪) শশা আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। বাইরে রোদে ঘুরা-ফেরা করার কারণে সূর্যের তাপে শরীরের চামড়ায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকে শশা আমাদেরকে অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে। এজন্য শশা চাক চাক করে কেটে শরীরের রোদে পোড়া অংশে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।(৫) শশার ভিতরের জলীয় অংশ শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম। নিয়মিত শশা খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়।(৬) সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন দরকার হয় তার অধিকাংশের অভাব পূরণ করে থাকে শশা। ভিটামিন এ, বি ও সি--যেগুলি শরীরে শক্তি উৎপাদন ও শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে, তার অধিকাংশই পূরণ করে থাকে শশা।(৭) শশায় রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সলিকন। তাই শরীরে এসবের অভাবজনিত সমস্যার মূল সমাধান হলো শশা।(৮) শশায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জল এবং অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি। তাই আমার যারা শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাদের জন্য শশা বা ক্ষীরিকার একটি প্রধান উপাদান। আয়ুর্বেদশাস্ত্র তন্নতন্ন করে তালাশ করেও শিকড় বা মূলের সন্ধান পেলাম না।জ্যোতিষবাবুরা বলেন চন্দ্রের প্রকোপে অতি আবেগপ্রবণতা, মানসিক অসুস্থতা, বাত, শ্লেষ্মা হয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র এ অসুখগুলি সারবে বলেনি যে। তাহলে ক্ষীরিকা মূল ব্যবহার করবেন কেন ? ভেবেছেন ?

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (তৃতীয় পর্ব)



আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ আত্মনিবেদন করতে শেখে। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গর্ব অনুভব করে, দুঃখ-যন্ত্রণা-বঞ্চনাকে ভুলে থাকতে শেখে। এরা লড়াই জানে না, লড়াই দেখলে ভীত হয়।এমতাবস্থায় অদৃষ্ট বা নিয়তির শরণাপন্ন হয়।জেগে ওঠে জ্যোতিষ এবং জ্যোতিষীবাবুরা। হাত বড়িয়ে দেয় – একপক্ষে জ্যোতিষীবাবুর হাত, অপরপক্ষে জাতকের হাত।কী আছে হাতে ? রেখা ? রেখায় কী আছে ? আছে স্বল্প রেখাযুক্ত পরিষ্কার হাত এবং বহু সূক্ষ্ম রেখাযুক্ত হাত।লালচে হাত, গোলাপি হাত, সাদাটে হাত, হলদেটে হাত। আছে চওড়া তালু, বেঁটে ও মোটা আঙুল, কুশ্রী নখ।আছে চৌকো হাত, চৌকো হাতে লম্বা আঙুল, দার্শনিক হাত, শিল্পী হাত, আধ্যাত্মিক হাত। আছে নমনীয় বুড়ো আঙুল, অনমনীয় বুড়ো আঙুল।খুব লম্বা নখ, খুব লম্বা ও সরু নখ, খুব লম্বা নীলচে অথবা মলিন বর্ণের চোখ, ছোটো নীলচে নখ, ছোটো গোলাকার নখ, ছোটো অথচ নখের তলার দিকটা চ্যাপটা, ছোটো অথটচ নখের তলার দিকে সাদা চাঁদ, শরীরের ভিতর গভীরভাবে চেপে বসা চ্যাপটা নখ, নখে সাদা দাগ ইত্যাদি।
এমন কোনো মানুষ নেই যাঁর হাতে ভাঁজ বা কোঁচকানো দাগ বা রেখা নেই। কারোর ঘন দাগ, কারোর-বা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা।এইসব দাগগুলি আবার বিভিন্ন নামে পরিচয় আছে। যেমন—আয়ুরেখা, হৃদয়রেখা, ভাগ্যরেখা, রবিরেখা, বিবাহরেখা ইত্যাদি।এছাড়া হাতের উঁচুনীচু অংশগুলিতে আছে গ্রহস্থল – মানে কোথায় রবি অবস্থান করছে, কোথায় মঙ্গল অবস্থান করছে, কোথায় রাহু অবস্থান করছে ইত্যাদি।হাতের রং দেখেও জ্যোতিষবাবুরা ভাগ্যগণনা করে থাকেন। আছে তারা চিহ্ন, ক্রশ চিহ্ন, চতুষ্কোণ, যব বা দ্বীপ চিহ্ন, বৃত্ত বা চক্র চিহ্ন, ত্রিশূল, জাল চিহ্ন ইত্যাদি – এইসব চিহ্নগুলিও অনেক ভবিষ্যৎবার্তা দেয় বলে জ্যোতিষবাবুরা নিদান দেন।

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (দ্বিতীয় পর্ব)



জ্যোতিষীবাবুদের গ্রহ, নক্ষত্র, রাশি, লগ্নের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
(১) ১৮ ডিগ্রির এক টুকরো আকাশে যদি ১২ টি রাশি থাকে, তাহলে ৩৬০ ডিগ্রি আকাশে ডিগ্রির আকাশে কত লক্ষ রাশি থাকতে পারে ভাবুন। তবে তো খুব ভয়ানক ব্যাপার, এত লক্ষ লক্ষ রাশির প্রভাব হিসাবে উচিত নয় ? জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকেন।
(২) জন্মকালে চন্দ্র যে রাশিতে থাকে সেটিই জাতকের রাশি বলা হয়। শুধু চন্দ্র কেন, সৌরজগতে তো আরও অসংখ্য গ্রহ আছে উপগ্রহ আছে – সেগুলি বিচার্য নয় কেন ? জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকেন।
(৩) জাতকের জন্মসময় কোনটি ? এটা বড্ড গোলমেলে ব্যাপার ! কেউ মনে মনে করেন মাতৃজঠরে ভ্রূণের প্রথম দিন, কেউ মনে করেন মাতৃজঠরে থাকাকালীন যেদিন শরীরে প্রাণসঞ্চার হয়, কেউ মনে করেন যেদিন শিশু মাতৃগর্ভ ত্যাগ বেরিয়ে আসে, আবার কেউ মনে করেন শিশুর নাড়ি কাটার সময়, কেউ আবার এত ঝামেলায় না-গিয়ে চিকিৎসকের দেওয়া সার্টিফিকেটের জন্মসময় গ্রাহ্য করে – এক্ষেত্রে আবার সংশয়, চিকিৎসক বা চিকিৎসা-কর্মীরা যে সময় নথিভুক্ত করেছেন সেটা কতটা অথেনটিক ! যাই হোক, জ্যোতিষীবাবুরা কোন জন্মসময় বিচার করে জাতকের কোষ্ঠী বিশ্লেষণ করবেন ? ভিন্ন ভিন্ন সময়কে জন্মসময় ধরলে ভিন্ন কোষ্ঠী বিচার হবে না ? হবেই তো। রাশির অবস্থান পালটালে নির্ণয়ও পালটাতে বাধ্য।এক্ষেত্রে অবশ্য জ্যোতিষীবাবুরা বলেন, লগ্ন পরিবর্তনের সন্ধিকাল ব্যতীত লগ্ন-মধ্যবর্তী সময়ে গ্রহ-নক্ষত্রের সন্নিবেশের এমন কিছু তারতম্য হয় না, ফলে রাশি পালটে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ও মা, সে কি কথা ! যদি জমজ সন্তান হয় ? তাদের কোষ্ঠীবিচার তো একই হবে। মানে তারা একই সময়ে পটি করতে যাবে, একই শিক্ষকের কাছে পড়বে, একইরকম বিদ্বান হবেন, একই ক্লাসে পড়া শেষ করবে, একই জায়গায় একই চাকরি করবে, একই মেয়ে বা ছেলেকে বিয়ে করবে, একই দিনে একই সময়ে একই কারণে মরবে – তাই-ই হবে, জ্যোতিষ বিজ্ঞান হলে।হয় কী ? অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মানোর পরপরই একটি সন্তান মারা যায়। তাহলে একই লগ্ন, একই গ্রহস্থান, একই রাশিচক্র হওয়া সত্ত্বেও দুইজন জাতকের আয়ুষ্কাল দুই রকমের হবে কেন ? তাহলে কী পৃথিবীর সকল জমজ জাতকই লগ্ন পরিবর্তনের সন্ধিকালে জন্ম নেয় ? জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? অবশ্যই নিরুত্তর থাকেন।
(৪) পুব আকাশে রাশি উদয় হয়—এই বিষয়টি এক্কেবারেই আপেক্ষিক। বস্তুত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সূর্যোদয়কাল বিভিন্ন হওয়ার ফলে পুবদিকে উদিত রাশিটি ভিন্ন হবে। ফলে একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জন্মানো জাতকের লগ্ন বিভিন্ন রকমই হবে, কোষ্ঠীও হবে বিভিন্ন।অতএব একই সময়ে জন্মানো সত্ত্বেও আলাদা আলাদা জাতকের আলাদা লগ্নফল এবং কোষ্ঠীচক্র হবে না, তাই তো ? জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকেন।
(৫) জ্যোতিষীদের যে শাস্ত্র, তা ভূকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বকে মেনে চলে। অর্থাৎ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য সহ সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্ররা ঘুরপাক খাচ্ছে। এ তত্ত্ব তো অচল তত্ত্ব, আস্তাকুড়ে তার ঠিকানা। এই ধরনের তত্ত্ব কে. সি. পালের মতো বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতে পারেন, যারা ভাঙা রেকর্ডের মতো এখনও চলেছেন ‘সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে’।এই তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে থাকলে জ্যোতিষকে বিজ্ঞান বলতে অসুবিধা আছে। ভুল হবে রাশি-গ্রহের অবস্থান। সঠিক হবে না রাশিচক্র, কোষ্ঠী-ঠিকুজি।এ তত্ত্ব সঠিক হলে গ্রহ-উপগ্রহগুলিতে মহাকাশযান কিংবা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো সম্ভব হত না।ওই তত্ত্ব ভুল, তাই জ্যোতিষ ভুল।জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকেন।
(৬) কোষ্ঠী দেখে জ্যোতিষীবাবুরা যোটক বিচার করে। অর্থাৎ পাত্রপাত্রীদের রাজযোটক হলে দাম্পত্যজীবন বড়োই সুখময় হয় !!! যোটক বিচার কাকে বলে ? এককথায় – “বিবাহের পূর্বে পাত্র এবং পাত্রীর পরস্পরের জন্মরাশ্যাদি থেকে যে শুভাশুভ বিচার করা হয়, তাকে রাজযোটক বলে”।এই বিচার আট প্রকার, অর্থাৎ আট প্রকারের কূট। ‘কূট’ কথাটির অর্থ জটিল। জ্যোতিষীবাবুরা প্রবল কূট বলে দু-হাতেই আট প্রকারের ‘কূট’ সামাল দিতে পারেন। এই কূটগুলি হল – বর্ণকূট, বশ্যকূট, তারাকূট, যোনিকূট, গ্রহমৈত্রীকূট, গণমৈত্রীকূট, রাশিকূট এবং ত্রিনাড়িকূট। এদের আবার ‘গুণ’ আছে। ‘বর্ণকূট’ থেকে ‘ত্রিনাড়িকূট’ পর্যন্ত গুণ হবে ১,২,৩ ইত্যাদি। মোট নম্বর ৩৬-এর মধ্যে ১৮ নম্বর পেতেই হবে, আর তা না-হলে ডাহা ফেল।যদি ৩০-এর উপর নম্বর হয় তাহলে লেটার মার্কস হবে। একটু ‘যোনিকূট’ নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক – যোনি চোদ্দ প্রকার। দুটি করে নক্ষত্র নিয়ে এক-একটি যোনি। অভিজিৎ নক্ষত্রকে ধরে নক্ষত্রের সংখ্যা ২৮।অবশ্য সবকটি যোনিই ইতর-যোনি, অর্থাৎ ঘোড়াযোনি, মোষযোনি, বাঘযোনি, সিংহযোনি, হাতিযোনি, কুকুরযোনি, বেড়ালযোনি, ইঁদুরযোনি, বানরযোনি ইত্যাদি। না, মানুষের জন্য মনুষ্যযোনি নেই। তামাম মনুষ্যকুল ইতর-যোনির অংশ।ছাগল, কুমির, হাঙ্গর, গোরিলা, গোসাপ, শিম্পাঞ্জি, টিকটিকিদের কি যোনি নেই !
আমার বিয়ের সময় আমার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিস পাত্রের কোষ্ঠী দেখাতে হবে। বড়োই বিপদে পড়ে গেল আমার অভিভাবক। কারণ আমার কোনো কোষ্ঠী-ঠিকুজি ছিল না। অতএব জ্যোতিষে শরণাপন্ন। জ্যোতিষীকে বলে আমার একটা ‘রাজযোটক’-এ মিল হয়েছে এমন একটা কিছু করিয়ে আনা হল। কেল্লা ফতে, বিয়ে পাক্কা।আদতে আমার রাশি, লগ্ন, কোষ্ঠী কিছুই নেই – তার আবার রাজযোটক ! আমার ১২ বছরের সংসার দিব্য চলছে। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড়ো মেয়ের বিয়ে ছিল রাজযোটক। ভাটপাড়ার জনৈক জ্যোতিষী মেয়ে আর হবু জামাইয়ের কোষ্ঠীবিচার করে সেটাই বলেছিলেন। রাজযোটকের বিয়ে, তা সত্ত্বেও বিয়ের দুই বছরের মধ্যেই বঙ্কিমচন্দ্রের বড়ো মেয়ে বিধবা হয়ে যান। এরকম হাজার হাজার দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা যায়, যেখানে রাজযোটক হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে অকালে নষ্ট হয়ে গেছে। জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকেন। (৭) একদা, মানে দেড়শো বছর আগে পর্যন্ত জ্যোতিষীবাবুরা বলবান সপ্তমপতি কেন্দ্রে কোণে থাকলে বাল্যবিবাহের নিদান দিতেন। তাই ওই সময় প্রায় সকল মেয়েদেরই বলবান সপ্তমপতি কেন্দ্রে কোণে থাকার ফলে বাল্যবিবাহ হত। ১৯৯৯ সালে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন,১৯৯৯’ চালু হওয়ার পর থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়ে গেল। বলবান সপ্তমপতি গেল কোথায় ? কেন্দ্রের কোণে আর থাকেন না ? গেছে।ভুল।জ্যোতিষীবাবুরা কী বলেন এ ব্যাপারে ? নিরুত্তর থাকবেন।

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সব চরিত্রই কাল্পনিক !!!

ধর্ম কর্কটরোগের চাইতেও মারাত্মক। হাইড্রোজেন বোমার চাইতে ভয়ংকর। আদিযুগ থেকে শোষকশ্রেণির শ্রেষ্ঠতম এবং উৎকৃষ্ট হাতিয়ার -- ধর্ম। শাসকের প্রয়োজনেই ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের সৃষ্টি করা হয়েছে নিরাকার ঈশ্বরের নামে। প্রাচীনযুগে ধর্মগ্রন্থগুলিই ছিল সংবিধান, অনুশাসন-যন্ত্র, আইন-কিতাব। মানবসমাজের প্রগতির দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মের এক ভয়ংকর দিক হল ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। ফলে শোষিত মানুষগুলি আর একজোট হতে পারল না শোষণের বিরুদ্ধে।এই ভাগ-বিভাজনের ফায়দা লুটে ভোগ করেন দুর্বৃত্ত রাজনীতিকরা। এইসব শঠ রাজনীতিকরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থেই ধর্মান্ধতার অবসান চায় না। যে-কোনো ধর্মের যে-কোনো জাতপাতের দরিদ্র শ্রমিক-কৃষকদের একটিই পরিচয় – সে দরিদ্র। দরিদ্র মানুষদের বিরুদ্ধে দরিদ্রদের লড়িয়ে দেওয়াই হল এখনকার শোষকশ্রেণির হাতিয়ার, গবেষণার বিষয়। এরা উলটে ধর্মনিরপেক্ষতার ভান করে। কে ধর্মনিরপেক্ষ? কোন্ রাজনৈতিক দল ধর্মনিরপেক্ষ ? ভারতবর্ষে একটিও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল নেই। এরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ জাহির করে অন্যকে সাম্প্রদায়িক সাব্যস্ত করে। মানুষ জেনেছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মানে ‘সব ধর্মের সমান অধিকার’। তাই কি ? ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি দেশের মন্ত্রীসান্ত্রীদের মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়ে বেড়ানো ? মসজিদে গিয়ে মুসলমানি কায়দায় হিজাব বা রুমাল জড়িয়ে দোয়া করা ? গির্জায় ঢুকে শ্রদ্ধা জানানো ? ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি পুজোয় ফিতে কাটা? ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি রোজার শেষে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থেকে দোয়া করা ? ধর্মনিরপেক্ষতা মানে বড়োদিনে বেলাল্লপনা করা নয়।ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলার রাষ্ট্রে ধর্ম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয় হতে পারে, মাইক লাগিয়ে ক্যাওয়াজ করা নয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে তোমার ধর্মকথা শুনব কেন ? আমি বাধ্য নই, বাধ্য করতে পারো না কোনো অজুহাতেই। তাই রাষ্ট্রীয় জীবনে বা রাষ্ট্রীয় নীতিতে ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ্যে আচরণ করাটা স্বাস্থ্যকর নয় মোটেই। এ ব্যাপারে সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অতি সতর্ক থাকা উচিত ছিল।ভারতবর্ষের সংবিধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, সেটা আর রক্ষা করা গেল কোথায় ! ভারতের মন্ত্রী-নেতারাই প্রকাশ্যে বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মাচার পালন করে থাকে। ‘নিরপেক্ষ’ শব্দের অর্থ কোনো পক্ষে নয়। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ মানে কোনো ধর্মের পক্ষে নয়। সোজা কথায় – সমস্ত ধর্মের সম্পর্ক বর্জন। ‘Secularism’ মানে ধর্মনিরপেক্ষতা কি না তাই নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকতে পারে, তবে অভিধানিক অর্থ হল -- এমন একটি যা মনে করে রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি ধর্মীয় শাসন থেকে মুক্ত থাকা।কেউ কোনো ধর্মীয় মতবাদ প্রকাশ্যে প্রচার করবে না, অন্য ধর্মকে গালিগালাজ করবে না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে আস্তিকদের যতটুকু স্পেস থাকবে, নাস্তিকদের জন্যও ততটুকুই স্পেস থাকবে।ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হিন্দুরা যেমন রাস্তা বন্ধ করে দুর্গাপুজো-কালীপুজো করতে পারে না, ঠিক মুসলমানরা রাস্তা বন্ধ করে ইদের নামাজ পড়তে পারে না, অনুরূপ বড়োদিনের উৎসবের নামে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রাতভর হুল্লোড় করা যায় না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে হিন্দুরা মুসলিমদের ‘মোল্লা’ বা ‘কাটা’ বলে গালি দিতে পারে না, তেমনই মুসলমানরাও হিন্দুদের ‘মালাউন’ বা ‘মালু’ বলে গালি দিতে পারে না।অন্যথায় এদের সকলকেই, অর্থাৎ এই সংবিধান অবমাননাকারীদের ‘দেশদ্রোহী’ সাব্যস্ত করা উচিত। ব্রিটিশমুক্তির ৭০ বছর পরও আমরা কেউই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠতে পারলাম না – আমরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খ্রিস্টান, কেউ বৌদ্ধ, কেউ শিখ। আর এখানেই আক্ষেপ। সোসাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া – সর্বত্র চলছে উসকানিমূলক কথাবার্তা, প্ররোচণামূলক বিবৃতি। এরা কি ‘দেশপ্রেমী’ ?

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (প্রথম পর্ব)



প্ল্যাটফর্মে ধাতুর আংটি বিক্রেতা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে আংটিটি আঙুলে ঢোকানোর। শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেন। ব্যর্থ হবেন নাই-বা কেন ! আঙুলগুলিতে তো আর আংটি ঢোকানোর জায়গাই নেই।দশ আঙুলে কুড়িটা রত্নখোচিত আংটির উপর ওই আড়াই প্যাঁচের তামার আংটি কোথায় ঢুকবে ? পোখরাজ, গোমেদ, পান্না, চুনি, প্রবাল -- কী নেই সেই দশ আঙুলে ! ডাবল ডাবলও আছে। ‘রহিস আদমি’ পেয়ে জ্যোতিষীরা ওর দশ আঙুলে বিশটা আংটি ভজিয়ে দিয়েছে। ওই বিশটা আংটিতেও যে কাজ হয়নি, তা ওই আড়াই প্যাঁচের তামার আংটি পরার ব্যাকুলতাতেই আন্দাজ করা যায়।

আর-একটা ঘটনা বলি : বছর কুড়ি আগে আকাশবাণীর ‘বিজ্ঞানরসিকের দরবারে’ শিরোনামে অনুষ্ঠান হত।কোনো একদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতার স্বনামখ্যাত পাঁচজন জ্যোতিষীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট কোষ্ঠী বিচারের জন্য।পাঁচ জ্যোতিষীই জানতেন এই কাজটি করতে শুধুমাত্র তাঁকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যদিও ট্যবলেট বিক্রেতা এক স্বনামধন্য লাল-জ্যোতিষী ছাড়া বাকি চারজন জ্যোতিষী আকাশবাণীতে গিয়েছিলেন নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ প্রমাণ করতে। চারজন জ্যোতিষীকে চারটি ভিন্ন ঘরে বসতে দেওয়া হয়েছিল একই ব্যক্তির কোষ্ঠী দিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ে চারজন জ্যোতিষীর কাছ থেকে একই ব্যক্তির চারটি কোষ্ঠী জমা নেওয়ার পর দেখা গেল  চার ধরনের বিচার। কারোর সঙ্গে কারোর মিল নেই।এখানেই শেষ নয় বিস্ময়ের। সেই কোষ্ঠীর জাতক ছিলেন একজন মৃত শিশুর। সেই মৃত শিশুর কোষ্ঠী দেখে জ্যোতিষীরা বলেছিলেন যে জাতকের বিয়ে হবে, চাকরি হবে, ফাঁড়া ইত্যাদি ইত্যাদি হাস্যকর কথাবার্তা।
এরকম ঘটনার ঝুড়ি ঝুড়ি উল্লেখ করা যায়। তাতে লাভ কিছু নেই। মানুষ যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে, জ্যোতিষ এবং জ্যোতিষী যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। আমরা বরং দেখার চেষ্টা করি জ্যোতিষ আসলে কী ? জ্যোতিষ কি শাস্ত্র ? নাকি বিজ্ঞান ? প্রচুর বিতর্ক, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে এ বিষয়ে। তবুও আমি আমার মতো চেষ্টা করি। বোঝার এবং বোঝাবার।

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

বরফ

এ আঠা এমনই, বাতাসে এলে শুকিয়ে কংক্রিট। এতটাই যে সেবার ছেলের ভাঙা খেলনা জুড়তে গিয়ে বে-খেয়ালে তর্জনী-মধ্যমা জুড়ে গিয়েছিল ভয়ানকভাবে। বছর পাঁচেক আগে। বুক ঠেলে লম্বা নিশ্বাস বেরিয়ে এল সমিধের।
পাঁচ বছর আগে, আজকের দিনেই স্বর্ণালীর সঙ্গে সমিধের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়। আদালতের সেই রায় এখনো যেন কানের ভিতর গরম সিসা ঢেলে দেয় কেউ।
বিয়ের এক বছর যেতে না-যেতেই সমিধ বুঝতে পারল স্বর্ণালী কেমন যেন যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। শরীরের জন্য কাছে গেলে স্বর্ণালী খুবই বিরক্ত হয়। নামি দামি ডাক্তার দেখিয়েও কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। সন্তান গর্ভে আসার পরপরই এই অনীহা। ভেবেছিলাম সন্তান জন্মানোর পরই সব ঠিক হয়ে যাবে। চিকিৎসকরা বলে দিলেন, এটা ফ্রিজিটি। পারমানেন্ট ফ্রিজিটি। বারো বছর অপেক্ষার পর অবশেষে বিচ্ছেদের মামলা উঠল আদালতে।