বুধবার, ৩০ মার্চ, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (চতুর্থ/শেষ পর্ব)



গ্রহশান্তির জন্য জ্যোতিষবাবুরা রত্ন-পাথর ছাড়াও গাছের মূল বা শিকড় ও ধাতু বা মেটাল ব্যবহারের নিদান দেন। নাকের বদলে নরুন আর কী ! কী আছে শিকড়-বাকড়ে ? শরীরে শিকড়-বাকড় বাঁধলে দুষ্ট গ্রহরা পালিয়ে যায় ? শিকড়-বাকড়ের দোকানে লোকজন দেখি ভিড় করে থাকে, বিশেষ করে শনি-মঙ্গলবারে। মূল-বিক্রেতারা মূল-ক্রেতাদের একটা কার্যকরী আপ্ত্যবাক্য শুনিয়ে থাকে, তা হল – গাছ কথা বলে। গাছ তো কথা বলেই। কিন্তু জ্যোতিষবাবু, গাছকে কথা বলানোরক্ ক্ষমতা আপনাদের নেই। মানে গাছদের কথা বলিয়ে গ্রহদের খেদাতে পারবেন না। ওটা চিকিৎসকদের কাজ, চিকিৎসকরাই পারেন। চিকিৎসকরাই পারেন চিকিৎসা পদ্ধতিতে। দেখুন কীভাবে পারে -- জ্যোতিষবাবুদের মতে সূর্য বা রবি গ্রহের কোপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে বিল্বমূল অর্থাৎ বেলের শিকড় হাতে-গলায় বাঁধতে হবে। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য বলছেন--(১) বেলের শিকড়ের ছাল ৩/৪ গ্রাম মাত্রায় গরম জলে ৪/৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে ছেঁকে তার সঙ্গে একটু বার্লি বা খইয়ের মণ্ড ও অল্প চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের বমি ও অতিসার বন্ধ হয়ে যায়। (২) বেলের মূলের ছালচূর্ণ ৬ থেকে ১২ মাত্রায় দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হৃদ্দৌর্বল্য দূর হয়। এছাড়া অনিদ্রা ও ঔদাসীন্যভাবও কেটে যায়।(৩) বিল্বমূলের ছাল ১২ থেকে ১৪ গ্রেনের সঙ্গে ৬ গ্রেন জিরে বেটে গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ধাতুতারল্যে বা শুক্রতারল্যে উপকার পাওয়া যায়।জ্যোতিষবাবুরা বলেন রবির প্রকোপে হৃদরোগ, শিরঃপীড়া হয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র এ অসুখগুলি সারবে বলেনি যে। তাহলে বিল্বমূল ব্যবহার করবেন কেন ? ভেবেছেন ?

জ্যোতিষবাবুদের মতে চন্দ্র বা চাঁদ গ্রহের কোপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ক্ষীরিকা বা ক্ষীরা বা শশার মূল হাতে-গলায় বাঁধতে হবে। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য বলছেন--(১) সৌন্দর্য পিপাসু নারী-পুরুষেরা শশা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। (২) পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে শশার বিকল্প নেই। (৩) জলশূন্যতা দূর করে সারাদিন কাজের ব্যস্ততার কারণে পর্যাপ্ত জল পান করা হয় না অনেকেরই। এই জল ঘাটতি দূর করতে শশার তুলনা হয় না। শশায় ৯০ ভাগ জল থাকায় শরীরের প্রয়োজনীয় জলের অভাব দূর করে শরীর সুস্থ রাখে। (৪) শশা আমাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। বাইরে রোদে ঘুরা-ফেরা করার কারণে সূর্যের তাপে শরীরের চামড়ায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকে শশা আমাদেরকে অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে। এজন্য শশা চাক চাক করে কেটে শরীরের রোদে পোড়া অংশে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।(৫) শশার ভিতরের জলীয় অংশ শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম। নিয়মিত শশা খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে মুক্ত থাকা যায়।(৬) সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন দরকার হয় তার অধিকাংশের অভাব পূরণ করে থাকে শশা। ভিটামিন এ, বি ও সি--যেগুলি শরীরে শক্তি উৎপাদন ও শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে, তার অধিকাংশই পূরণ করে থাকে শশা।(৭) শশায় রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সলিকন। তাই শরীরে এসবের অভাবজনিত সমস্যার মূল সমাধান হলো শশা।(৮) শশায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জল এবং অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি। তাই আমার যারা শরীরের ওজন কমানোর ব্যাপারে সচেতন তাদের জন্য শশা বা ক্ষীরিকার একটি প্রধান উপাদান। আয়ুর্বেদশাস্ত্র তন্নতন্ন করে তালাশ করেও শিকড় বা মূলের সন্ধান পেলাম না।জ্যোতিষবাবুরা বলেন চন্দ্রের প্রকোপে অতি আবেগপ্রবণতা, মানসিক অসুস্থতা, বাত, শ্লেষ্মা হয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র এ অসুখগুলি সারবে বলেনি যে। তাহলে ক্ষীরিকা মূল ব্যবহার করবেন কেন ? ভেবেছেন ?

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (তৃতীয় পর্ব)



আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ আত্মনিবেদন করতে শেখে। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গর্ব অনুভব করে, দুঃখ-যন্ত্রণা-বঞ্চনাকে ভুলে থাকতে শেখে। এরা লড়াই জানে না, লড়াই দেখলে ভীত হয়।এমতাবস্থায় অদৃষ্ট বা নিয়তির শরণাপন্ন হয়।জেগে ওঠে জ্যোতিষ এবং জ্যোতিষীবাবুরা। হাত বড়িয়ে দেয় – একপক্ষে জ্যোতিষীবাবুর হাত, অপরপক্ষে জাতকের হাত।কী আছে হাতে ? রেখা ? রেখায় কী আছে ? আছে স্বল্প রেখাযুক্ত পরিষ্কার হাত এবং বহু সূক্ষ্ম রেখাযুক্ত হাত।লালচে হাত, গোলাপি হাত, সাদাটে হাত, হলদেটে হাত। আছে চওড়া তালু, বেঁটে ও মোটা আঙুল, কুশ্রী নখ।আছে চৌকো হাত, চৌকো হাতে লম্বা আঙুল, দার্শনিক হাত, শিল্পী হাত, আধ্যাত্মিক হাত। আছে নমনীয় বুড়ো আঙুল, অনমনীয় বুড়ো আঙুল।খুব লম্বা নখ, খুব লম্বা ও সরু নখ, খুব লম্বা নীলচে অথবা মলিন বর্ণের চোখ, ছোটো নীলচে নখ, ছোটো গোলাকার নখ, ছোটো অথচ নখের তলার দিকটা চ্যাপটা, ছোটো অথটচ নখের তলার দিকে সাদা চাঁদ, শরীরের ভিতর গভীরভাবে চেপে বসা চ্যাপটা নখ, নখে সাদা দাগ ইত্যাদি।
এমন কোনো মানুষ নেই যাঁর হাতে ভাঁজ বা কোঁচকানো দাগ বা রেখা নেই। কারোর ঘন দাগ, কারোর-বা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা।এইসব দাগগুলি আবার বিভিন্ন নামে পরিচয় আছে। যেমন—আয়ুরেখা, হৃদয়রেখা, ভাগ্যরেখা, রবিরেখা, বিবাহরেখা ইত্যাদি।এছাড়া হাতের উঁচুনীচু অংশগুলিতে আছে গ্রহস্থল – মানে কোথায় রবি অবস্থান করছে, কোথায় মঙ্গল অবস্থান করছে, কোথায় রাহু অবস্থান করছে ইত্যাদি।হাতের রং দেখেও জ্যোতিষবাবুরা ভাগ্যগণনা করে থাকেন। আছে তারা চিহ্ন, ক্রশ চিহ্ন, চতুষ্কোণ, যব বা দ্বীপ চিহ্ন, বৃত্ত বা চক্র চিহ্ন, ত্রিশূল, জাল চিহ্ন ইত্যাদি – এইসব চিহ্নগুলিও অনেক ভবিষ্যৎবার্তা দেয় বলে জ্যোতিষবাবুরা নিদান দেন।