রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

উচ্ছিষ্ট



উচ্ছিষ্ট-ভরা ভ্যানগুলি দ্রুত ভ্যাটের ভিতর ঢুকে গেল তাই দেখে ফড়িং, কালি, লালি, ভোলা, বিরজুদের কী লাফালাফি -- কী নাচানাচি ভ্যানগুলি উলটিয়ে যখন উচ্ছিষ্ট সব মাটিতে নামানো হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে কর্পোরেশনের জনা দশেক লোক ভ্যাটের দিকে এগিয়ে এল ফড়িং, কালি, লালি, ভোলা, বিরজুরা যে যেদিকে পারল ছুট লাগাতে চাইল কিন্তু অসম্ভব ! দক্ষ সাঁড়াশির ফাঁসে লটকে গেল গলা

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

কাকপুরাণ



আমি কোনো শিক্ষিত চিত্রশিল্পী নই এই অমোঘ অন্তরায় সত্ত্বেও আমি এঁকে ফেলতে পারি যে-কোনো মূর্ত অথবা বিমূর্ত ছবি, যেমন খুশি এই যেমন খরস্রোতা নদী, নগ্ন নারী, উদার আকাশ, শ্রমিক শিশুএই ধরুন কোনো কাকের ছবি কাক, একটা কাক আঁকা যাক
লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনিএইভাবে নানা রঙে রাঙিয়ে একটা বর্ণময় কাক তো বেশ আঁকা হল এবার যা হবারসবাইকে ডেকে ডেকে দেখাতে লাগলাম আমার চিত্রকর্ম অবশ্য সকলেই আমার আঁকা ছবিটি দেখল, ভালো করে দেখলআর যাঁরা দেখল তাঁরা সকলেই ভ্রূ কুঁচকে পাশ কটিয়ে চলে গেল আর যাঁরা ভাবল কিছু বলা দরকার, তাঁদের কেউ কেউ অবজ্ঞার ধ্বনি বাতাসে ছড়িয়ে বলল : “ছোঃ, তুই দেখছি একটা আকাট মূর্খ কেলো কাক আবার রঙিন হল কবে !” আবার যাঁরা চিত্রবোদ্ধা গোছের, তাঁরা গম্ভীর কণ্ঠ চড়িয়ে বলল : “হুম, পাগলাগারদই তোর উপযুক্ত ঠিকানা
আমি এবার সত্যিই হকচকিয়ে গেলাম, “পাগলাগারদ”! সামলে নিলাম দ্রূত এবং বললাম : সেই আদিকাল থেকে সেই মানুষগুলো যখন গণেশ নামে এক দেবতাজাতি মানুষের মাথাটা হাতির মতো এঁকে দিলো, তখন কোথায় যায় তোমাদের সংশয় ? যখন দুর্গা নামে এক খাণ্ডারনীর দশ-দশখানা হাত বানিয়ে ফেলে, তখন কোথায় থাকে তোমাদের যুক্তি ? যখন ব্রহ্মা নামের ওই লম্পট চতুর চতুরানন লোকটার একটা নয় দুটো নয় তিনটে নয় চার-চারটি মাথা এঁকে দিয়ে সর্বময় কর্তা বলে জাহির করায়, তোমার রিয়ালিটি তখন কোন্ কলুঙ্গীতে রেখে দাও ? আর আমি যখন কাক আঁকি, বর্ণময় কাকতখন আমার উপর শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ো, আর কী অবলীলায় বলে দাওতোর ঠিকানা পাগলাগারদ
অধুনালুপ্ত দেবতাগোষ্ঠীদের মতো কাকও একদিন চিরতরে লুপ্ত হয়ে যাবে, হয়তো তারপর সেদিন থেকে আরও কয়েক হাজার বছর পর এই মানুষই বিশ্বাস করতে চাইবে কাক ছিলবর্ণময়”, কিংবা কাকের ছিল হাজার চুরাশি মাথাকিংবা অন্য কোনো মস্তিষ্কপ্রসূত উদ্ভট ভাবনা
আর বিশ্বাস না-করেই বা উপায় কী ? প্রমাণ করার জন্য তো সেদিন একটা কাকেরও অস্তিত্ব থাকবে না, তাই না ?