বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী নয়


দুর্গা শব্দের ব্যুৎপত্তি হল দুর্ (দুঃখ) গম্ (গমন করা, জানা) + অ (র্ম্ম) = দুর্গ + আ (স্ত্রীং)। অর্থাৎ যাঁকে দুঃখে জানা যায়। কিংবা যিনি দুর্গ অর্থাৎ সংকট থেকে মুক্তি দেন। শব্দকল্পদ্রুমে আছে, যিনি দুর্গ বা দুর্গম নামে অসুরকে হত্যা করেছিলেন, তিনিই দুর্গা – “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা”। হিন্দুশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে – “দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিত। উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।। রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ। ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।” অর্থাৎ ‘দ’ অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, ‘গ’ অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। পুরোটা সাজিয়ে নিলে যেটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা হল – দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, যে দেবী “নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ”(সমস্ত দেবতা সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি), তিনিই দুর্গা। শব্দের ব্যুৎপত্তি যাই-ই হোক না-কেন, দেবী দুর্গা কখনো কোনোদিনই মানুষের সংকট মোচন সক্ষম হননি। তিনি সংকটমোচনকারী কেবল পুরাণের কাহিনিগুলিতেই। বাস্তবে তাঁর কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই।

যাই হোক, হিন্দুরা তাঁকে মহাশক্তির একটি উগ্র রূপ মনে করে। দুর্গার অন্য নামগুলি হল – চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহারিণী বা মহিষাসুরমর্দিনী, নারায়নী, মহামায়া, কাত্যায়নী ইত্যাদি। প্রত্যেক রূপেই আছে পৃথক পৃথক অসুর হত্যার কাহিনি। এঁদের কারোর আঠারোটা হাত, কারোর ষোলোটা হাত, কারোর দশটা হাত, কারোর আটটা হাত, কারোর-বা চারটি হাত। তবে দশ হাতের দুর্গা বা দশভূজাই বেশি জনপ্রিয়।তাঁর বাহন সিংহ এবং মহিষ নামক এক অসুরকে হত্যারত অবস্থায় দেখা যায়। বাংলার দুর্গাপুজোই অন্যত্র নবরাত্রি উৎসব হিসাবে উদযাপিত হয়।