শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

ভারতবর্ষে ইসলাম : প্রবেশ এবং প্রস্থান (প্রথম পর্ব)



[মুখবন্ধ : এই প্রবন্ধটির বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অতএব লেখা চলাকালীন  যথাযথ যুক্তি ছাড়া কারোকে আলটপকা মন্তব্য না-করার অনুরোধ রাখছি। লেখা প্রথম থেকে না-পড়ে মাঝখান থেকে কেউ মন্তব্য করবেন না। যদি কারোর মনে হয় তিনি আমার জানার বাইরে আরও বেশি কিছু জানেন, তাহলে লিখিতভাবে বক্তব্য রেখে আপনি যা জানেন সেটা সবাইকে জানান। সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোনোরকম কটুক্তি ডিলিট করে দেওয়া হবে, বারবার একই আচরণ করলে সোজা ‘নোটিশ’। বিতর্ক অনাবশ্যক, আলোচনা চলতেই পারে।এটি একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ, গবেষণা করতে গিয়ে যেসব গ্রন্থাদির সহায়তা নেব, সেগুলি শেষ পর্বে উল্লেখ করা হবে। যেহেতু প্রবন্ধটি ইতিহাস নয়, ইতিহাসের ইতিহাস – সে কারণে আমার জানার সঙ্গে আপনার জানা সবসময় নাও মিলতে পারে।প্রতিটি ধর্মব্যবস্থায় যেমন ভালোর দিক আছে, তেমনি মন্দের দিকও আছে -- আমার লেখায় দুটি দিকই আলোচিত হবে, কোনোরকম ফিল্টার ছাড়াই।]

“কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে/কত মানুষের ধারা/দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে/ সমুদ্রে হল হারা।/হেথায় আর্য, হেথা অনার্য/হেথায় দ্রাবিড়, চীন--/শক-হুন-দল পাঠান মোগল/এক দেহে হল লীন।/পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার,/সেথা হতে সবে আনে উপহার,/দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/যাবে না ফিরে,/এই ভারতের মহামানবের/সাগরতীরে।/……………..এসো হে আর্য, এসো অনার্য,/হিন্দু মুসলমান।/এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ,/ এসো এসো খৃস্টান।/এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন/ধরো হাত সবাকার,/এসো হে পতিত করো অপনীত/সব অপমানভার।/মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা/মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,/সবারে-পরশে-পবিত্র-করা/তীর্থনীরে।/ আজি ভারতের মহামানবের/সাগরতীরে।”

ভারতে ইসলাম তথা মুসলমানদের ইতিহাস নিয়ে লিখতে বসে মহামানব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লিখিত উদ্ধৃতিটি উল্লেখ না-করে শুরু করতে পারছিলাম না। প্রায় ৭০০ বছরের ইতিহাস তো সোজা কথা নয়। ভারতবর্ষের পরতে পরতে মুসলিমদের সুকীর্তিতে যেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে, কুকীর্তিতেও তেমন কালিমালিপ্ত হয়ে আছে।আর্য-অনার্য-হিন্দু-মুসলমান-ইংরাজ-খ্রিস্টান যখন এক দেহে লীন হয়, তখন সেই দেশে একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের ইতিহাস লেখা সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে সেই ধর্মাবলম্বীদের শাসনকাল যদি ৭০০ বছরের হয়। না, ঠিক ইতিহাস নয় হয়তো – ইতিহাসের ইতিহাস।
সেই ইতিহাসের সন্ধান তো করবই, তার আগে জানা প্রয়োজন ইসলাম ধর্মের ইতিহাস। ইসলাম একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম । কোরান দ্বারা পরিচালিত --  যা  এমন এক কিতাব যা  হবহু আল্লাহর বাণী এবং ইসলামের প্রধান নবি মোহাম্মদের প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি, জীবনাদর্শও এর ভিত্তি । বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে । ইসলামের অনুসারীরা মোহাম্মদকে শেষ নবি বলে মনে করেন।অনেকের ধারণা যে মোহাম্মদ হলেন এই ধর্মের প্রবর্তক। তবে মুসলিমদের মতে, তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রসুল বা পয়গম্বর। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। পবিত্র কোরান ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। পবিত্র কোরান আল্লাহর বাণী এবং এটি তার কর্তৃক মোহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মোহাম্মদ শেষ নবি। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কোরানকে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে কোনো হাদিসের মর্মার্থ কোরানের বিরুদ্ধে গেলে তা বাতিল বলে গণ্য হয়।