মৃত্যুদণ্ড বা প্রাণদণ্ড (Capital Punishment) হল আইনি পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। যেসব অপরাধের
শাস্তি হিসাবে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলিকে বলা হয় মৃত্যুদণ্ডার্হ
অপরাধ। অতীতে প্রায় সকল দেশেই মৃত্যুদণ্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে মাত্র ৫৮টি
দেশ প্রত্যক্ষভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে। ৯৫টি দেশ এই প্রথা অবলুপ্ত করে দিচ্ছে।
অবশিষ্ট দেশগুলি দশ বছর এই দণ্ড ব্যবহার করছে না বা যুদ্ধ ইত্যাদি ব্যতিক্রমী ঘটনা
ছাড়া মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করছে না। অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ড একটি বিতর্কের বিষয়।
তবে একই রাজনৈতিক আদর্শ ও সাংস্কৃতিক অঞ্চলে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে মতান্তর রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকার সনদের ২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ভুক্ত দেশগুলির উপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আজ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল অধিকাংশ দেশকেই "অ্যাবোলিশনিস্ট" অর্থাৎ
মৃত্যুদণ্ড বিলোপের পক্ষপাতী মনে করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল
মৃত্যুদণ্ড বিলোপের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘে একটি অ-বাধ্যতামূলক প্রস্তাবনায় ভোটের
অনুমোদন দিয়েছে। যদিও বিশ্বের ৬০% মানুষ সেই সব দেশে বাস করেন, যেখানে
মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট
চারটি দেশও (গণচিন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়া)। চারটি দেশই ২০০৮
সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় "রেজোলিউশন অন আ মোরোটোরিয়াম অন দি ইউজ অফ
দ্য ডেথ পেনাল্টি"-এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। আসলে রাষ্ট্র তখনই সেই ব্যক্তিকে
মৃত্যুদণ্ড দেবে, যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষে ঝুঁকিকর হতে পারে। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেই মৃত্যুদণ্ডই
কাঙ্ক্ষিত, যদি কোনো ব্যক্তি বিদ্রোহী হয় – এই বিদ্রোহীদেরই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবেই প্রতিপন্ন করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডপূর্বক
হত্যা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড হল অপরাধীর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি।
যদিও পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না। কিন্তু
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধি আছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি একেক সময়ে একেক পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছেও।
আমি এখানে মৃত্যুদণ্ডের ৩৬টি পদ্ধতি উল্লেখ করব। অবশ্য সবকটি পদ্ধতি এখন আর কার্যকর
হয় না। তবুও জেনে রাখব।
(১) ইলেকট্রিক চেয়ার : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিটিকে একটা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে বসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেই ব্যক্তির মাথায় একটা ভেজা স্পঞ্জ লাগানো হয়, যাতে বিদ্যুৎপ্রবাহ সহজেই কার্যকর
হতে পারে। তার মাথায় এবং পায়ে
ইলেকট্রোড লাগিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত দু-বার বিদ্যুৎপ্রবাহ
তার শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো করা হয়। প্রথমবার ২০
সেকেন্ডের জন্য ২০০০
ভোল্ট বিদ্যুৎ। এর ফলে ব্যক্তিটির হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয়বারের বিদ্যুৎপ্রবাহের ফলে
তার
শরীরের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুড়ে
যায়।
(২) গ্যাস চেম্বার : একটি চেম্বারে ছোটো একটা এয়ার-টাইট চেয়ার রাখা
হয়। যাকে মৃত্যুদণ্ড
দেওয়া হবে তাকে এই চেয়ারে বসিয়ে
বেঁধে দেওয়া হয়। চেয়ারের
নীচে একটা পাত্রে পটাশিয়াম সায়ানাইড ক্যাপসুল রেখে বাইরে থেকে চেম্বার
বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর একটা নলের সাহায্যে বাইরে থেকেই চেয়ারের নীচে রাখা আর-একটি পাত্রে
সালফিউরিক অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি তখন তার শেষ কথা বলে বা
ইচ্ছা প্রকাশ করে। এরপরই
মেসিনের সাহায্যে সায়ানাইড ক্যাপসুল এবং অ্যাসিড একসঙ্গে মেশানো হয়। এর ফলে চেম্বার পটাশিয়াম
সায়ানাইড গ্যাসে ভরে যায়। যাতে মৃত্যু ত্বরান্বিত হয় সেইজন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে ঘনঘন শ্বাস নিতে বলা হয়। ঘনঘন শ্বাস নেওয়ার ফলে শরীরে
তাড়াতাড়ি গ্যাস প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তবে অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিটি মৃত্যুভয়ে শ্বাস আটকে রাখে বলে মৃত্যু বিলম্বিত হয়ে যায়।
(৩) ফায়ারিং স্কোয়াড : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির চোখ এবং হাত বেঁধে একটা
খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হয়। এরপর তার বুকে গোল একটা টার্গেট পেপার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিছুটা দূরে পাঁচ-পাঁচজন শ্যুটার দাঁড়িয়ে থাকে। এদের প্রত্যেককে একটা করে গুলি দেওয়া হয়। পাঁচজনের জন্য চারজনের কাছে আসল গুলি থাকে না, থাকে ব্ল্যাংক
গুলি। কিন্ত কোন চারজনের কাছে ব্ল্যাংক গুলি আছে সেটা পাঁচজন শ্যুটারের একজনও জানতে পারবে না। কারণ ওদের কেউই বুঝতে পারবে না ঠিক কার গুলিতে
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। “ফায়ার” -- হুকুম বা
নির্দেশের
সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজন
শ্যুটারই
একসঙ্গে গুলি করে এবং ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তবে কোনো শ্যুটার যদি গুলি না-করে তাহলে তারও শাস্তির ব্যবস্হা থাকে।
(৪) ফাঁসি : আইনানুগ সকল
ফর্মালিটি শেষে ফাঁসির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয় কনডেম সেলে।
সেখানে শুধু ফাঁসির আসামীরাই থাকে।
অনেকটা ওয়েটিং রুমের মতো। এখানে কয়েকদিন
রাখা হয়। তার সঙ্গে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করা হয়। ফাঁসির
জন্য বিদেশ থেকে আনা হয় দড়ি। সাধারণত জার্মানি থেকে
বিশেষ এই দড়ি আনা হয়। নিয়ম করে কয়েকবার এতে
মাখানো হয় সবরি কলা আর মাখন। জল্লাদ নির্বাচন করা হয় কয়েদিদের মধ্য থেকেই অথবা পেশাদার জল্লাদ। কোনো কোনো দেশে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের দিয়ে ফাঁসি দেওয়ালে প্রতিটি ফাঁসি কার্যকরের জন্য ওই কয়েদির ২ মাস
করে সাজা কমে। আসামীর সম-ওজনের বালির বস্তা দিয়ে কয়েকবার ফাঁসির প্র্যাকটিস করা
হয়
কয়েকদিন আগেই। কনডেম সেলে আসামীর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করানো হয়। তবে অনেকক্ষেত্রেই কবে ফাঁসি কার্যকর হবে তা আসামী এবং আত্মীয়স্বজন কাউকেই
বুঝতে দেওয়া হয় না। কিন্তু
ফাঁসির দিন কয়েদি বুঝতে পারেন যে আজই তার জীবনের শেষ রাত। দণ্ডপ্রাপ্তকে মাথা ঢেকে দেওয়া হয় এবং গলায় দড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়।
জেল সুপার হাতে রুমাল নিয়ে ফাঁসির
মঞ্চের
পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। দাঁড়িয়ে থাকেন
অন্যান্য চিকিৎসকসহ আরও কয়েকজন। জল্লাদের চোখ তখন রুমালের দিকে। ওই মুহূর্তে এই রুমালই একজন
মানুষকে এ-পার থেকে ও-পারে পাঠিয়ে দেওয়ার ভূমিকা পালন করে। রুমালের হেলনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির
পায়ের
নিচ থেকে পাটাতন সরে যায়। গলায় আটকে যায় মোটা দড়ি। শুরু হয় রহস্যময় যাত্রা। ১০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর একজন ডাক্তার এসে ঘাড়ের
চামড়া কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
পড়ে থাকে নিথর দেহ। ফাঁসির সাধারণত ভিডিও করা হয় না। তবে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান ও জাপানি যুদ্ধাপরাধীদের
ফাঁসি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছিল। জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সেই ভিডিওটি ইউ
টিউব ঘাঁটলেই দেখতে পাবেন। প্রায়
৬৫ বছর আগের ভিডিও, যেটা ২৮ মে ১৯৪৬ সালে কার্যকর
করা হয়েছিল ল্যান্ডসবার্গ জেলে। সংক্ষিপ্ত সময়ের ট্রাইবুন্যালের রায়ের কোনো আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
(৫) ফাঁসি, জলে
ডুবানো এবং খণ্ডকরণ : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একটি কাঠের সঙ্গে বেঁধে ঘোড়া দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করার জায়গায়, অর্থাৎ বধ্যভূমিতে। এরপরে
সেই ব্যক্তিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হত
ফাঁসির দড়িতে। মৃত্যু হওয়ার আগেই সেই ব্যক্তির গলা থেকে ফাঁসির দড়ি থেকে খুলে দেওয়া হত। এ
অবস্থায় তাকে জলে ডুবানো হত। এরপরও মৃত্যু না
হলে
আধমরা ব্যক্তিকে হাত-পা বেঁধে তার পেট
কেটে পেটের মধ্য থেকে ভুড়ি বের করে আনা হত। এসময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হত যেন
কোনোভাবেই তার মূল রক্ত পরিবাহীতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হত না। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সামনেই তারই নাড়িভুঁড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে
দেওয়া
হত। এরপর ধারালো কুড়োল দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জীবন্ত অবস্থায় কেটে
চার
টুকরো করা হত। সবশেষে তার মাথা কেটে
ফেলা হত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা কাটার আগে পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি বেঁচে থাকত। এখানেই শেষ নয়, এরপরে তার দেহের বিভিন্ন অংশ
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হত, জনগণকে দেখানোর উদ্দেশ্যে। বীভৎস এই নরহত্যা
হত রাষ্ট্রের নির্দেশে, শাসনের নামে। ফাঁসি, জলে ডুবানো,
খণ্ডকরণ পদ্ধতিতে
একসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ইতিহাসে
সব থেকে অমানবিক পন্থা বলে বিবেচিত। বর্তমানে এই পদ্ধতিটি আর কার্যকর হয় না।
এখন মৃ্ত্যুদণ্ড পদ্ধতি নিয়ে নীচে যে আলোচনা করব যেগুলি বর্তমানে প্রচলিত না থাকলেও প্রাচীন যুগে ছিল।
(৬) মুণ্ডচ্ছেদ বা শিরকর্তন : মুণ্ডচ্ছেদ বা শিরকর্তন (Guillotine) পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার
পদ্ধতি মূলত চালু করা হয় মানবিক দিক বিবেচনা করে!! ১৭০০ শতকে
এই পদ্ধতি চালু করা হয়, কেন-না তৎকালীন
আমলে বিশেষজ্ঞদের মতে এই পদ্ধতিতে আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে, তার কষ্ট কম হয় ! তাই তৎকালীন সময়ে অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে থাকে। কোনো মানুষ দোষী সাব্যস্ত হলে তার মুণ্ডচ্ছেদ করাই ছিল এই
গিলোটিনের কাজ। ডা. জোশেফ ইগনেস গিলোটিন ১৭৮৯ সালে প্রথম এই মারণযন্ত্রের প্রবর্তন করেন। বিপ্লব
চলাকালীন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দোষীকে শাস্তি দেওয়ার
জন্য তিনি এই অভিনব যন্ত্রটির সুপারিশ করেন। প্রায় ২২৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গে বন্দুকের আওয়াজের মধ্যে ফরাসি বিপ্লবের নতুন অধ্যায়ের
সূচনা। তার ২ বছর পর ১৭৯১ সালে সে দেশের রাজা ষোড়শ লুই ছদ্মবেশে ভার্নেতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন জুন মাসের ২০-২১ তারিখে।
তার ঠিক এক বছর সাত মাসের মাথায় ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি রাজাকেই ধরে
গিলোটিনে চালান করে দেওয়া হয়।
মাটিতে
গড়িয়ে পড়ে রাজার মুণ্ড। এভাবে কত যে
মানুষের মুণ্ডচ্ছেদ হয়েছে তার শেষ নেই। এজন্যই ফরাসি বিপ্লবের কাহিনি থেকে গিলোটিনকে কিছুতেই আলাদা করা যায় না। ১৭৯২ সালের ২৫ এপ্রিল ডি গ্রিভ শহরের উন্মুক্ত
প্রান্তরে এটিকে স্থাপন করা হয় এবং সর্বপ্রথম
একজন 'হাইওয়ে ম্যান'-এর মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়। এরপর ওই বছরই পেরিসের ডি লা কনকর্ডে প্রায় ৪০০০ মানুষের শিরশ্ছেদ হয়
একইভাবে। উল্লেখযোগ্যতার মধ্যে
১৭৯৩ সালের জানুয়ারিতে রাজা ষোড়শ
লুইয়ের পর ১৬ অক্টোবর রানি মারি আঁতোয়ানে, ৩১ অক্টোবর জিরদঁযাদের, ৮ নভেম্বর মাদাম রোঁলা, ১৭৯৪ সালে ৩০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে জর্জ দাঁত ও
তাঁর অনুগামীদের গিলোটিনে হত্যা করা
হয়। চাকা কীভাবে ঘোরে ! দাঁতে ও তার পন্থীদের গিলোটিনে পাঠানোর মূল হোতা যে
বিপ্লবী নায়ক ব্যারিস্টার মেক্সিমলিয়ান মারি ইশিদর দ্য রোবসপিয়েরকেও সেই নিমর্ম গিলোটিনে মাথা দিতে হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করা বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রান্সে গিলোটিনে
শেষ মৃত্যুটি হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যেই গিলোটিনে মৃত্যুর হার কমে আসে। ১৯৮১ সালে ফ্রান্সে মৃত্যুদণ্ড
নিষিদ্ধ হয় ও সেইসঙ্গে মুণ্ডচ্ছেদও বন্ধ হয়ে যায়। ডা গিলোটিনও খুব
অল্পের জন্য গিলোটিনে মৃত্যু থেকে বেঁচে যান।
(৭) হাতির পায়ে পিষ্ট করে
: মৃত্যদন্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতি কিন্তু সুদুর কোন দেশের প্রচলিত পদ্ধতি না,
বরং আমাদের এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভাবিত এবং
একসময়ের বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিশাল আকৃতির
হাতি তার পা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথা থেঁতলে দিত। এক্ষেত্রে আবার হাতিকে প্রশিক্ষণ
দেওয়া হত, যাতে সে ধীরে ধীরে পায়ের চাপ বাড়ায়, যাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তি সর্বোচ্চ শাস্তি পায় মৃত্যুর সময়। এই পদ্ধতি মূলত ব্যবহৃত হত রাজা বাদশাহদের আমলে।
(৮) চামড়া ছড়ানো
: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির চামড়া ছাড়ানো (Flaying Skin) ছিল এক বীভৎস মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে জীবিত অবস্থায় একটা
লম্বা টেবিলের উপর বেঁধে তার চামড়া ছাড়ানো হয়। এই ছাড়ানো চামড়া জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে টানিয়ে রাখা হয়, যাতে সবাই দেখতে
পারে এবং শাসককে ভয় পায়।
(৯) স্কাফিজম : অতীতে পার্সিয়ান্দের
মধ্যে প্রচলিত মৃত্যদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতিই হল স্কাফিজম (Scaphism) । এ পদ্ধতির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে একটি ডোবার কাছে আনা হত। এরপর ডোবার সব থেকে কাছের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হত। এরপর সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রচুর
পরিমাণে দুধ এবং মধু খাওয়ানো হত, যত সময় পর্যন্ত না তার ডাইরিয়া শুরু হত। ডাইরিয়া শুরু হলে তার সারা শরীরে
মধু মাখিয়ে দেওয়া হত। এই মধু মেখে দেওয়ার ফলে
আশেপাশের অনেক কীটপতঙ্গরা আকৃষ্ট হত এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির গায়ের চামড়া ভেদ
করে বাসা বানাত। এই পদ্ধতিতে আসামির মৃত্যু
হতে সময় লাগত ২ সপ্তাহের মতো। ব্যক্তিটির ডাইরিয়া, গ্যাংগ্রিন এবং
অনাহারে মৃত্যু হত।
(১০) তক্তার উপর
: এই উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত সাধারণত জলদস্যুরা, যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাহাজ আক্রমণ করে জাহাজের সব কিছু লুট করে নিত। আর যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলত তাদের
এইভাবে শাস্তি দিত। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে শুধুমাত্র
তক্তার উপর দিয়ে হাঁটিয়ে জলে ফেলে দেওয়া হত। কিন্তু তার হাত-পা কিছুই বাঁধা থাকত না বলে জলে ভেসে থাকতে পারবে। কিন্তু জলে ভাসমান এইসব জাহাজের
চারিপাশে সবসময় কিছু হাঙ্গর ঘুরে বেড়াত, আর জলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই হাঙ্গরের বলি হত এবং মৃত্যু কার্যকর হত।
(১১) মৃত্যু ঘটানোয় করাতের
ব্যবহার : এই পদ্ধতি আগে চালু ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে। এক্ষেত্রে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে
সম্পূর্ণ নগ্ন করে উলটো করে দুই পা দুই দিকে ফাঁক করে বেঁধে রাখা হত। এরপর মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির
যৌনাঙ্গ বরাবর করাত রেখে দেহকে মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হত। আর উলটো করে করে ঝোলানোর কারণে ব্যক্তিটির মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণ
রক্ত পেত, যাতে ব্যক্তিটি এই শরীরের মাঝ বরাবর
কেটে ফেলায় ব্যথা সম্পূর্ণটাই অনুভব করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কাটার আগে পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকতেন।
(১২) রিপাবলিকান বিবাহ
: রিপাবলিকান
বিবাহ
(Republican Marriage) হল মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার এক অভিনব পদ্ধতি। এই পদ্ধতি হল একজন পুরুষ এবং মহিলাকে
নগ্ন করে এবং মুখোমুখি করে একসঙ্গে বেঁধে নদীর জলে ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। শুধুমাত্র ফ্রান্সে এই পদ্ধতি
চালু ছিল।
(১৩) বেস্টিয়ারাই
: বেস্টিয়ারাই
(Bestiarii), আদি রোমান সাম্রাজ্যের একটা ক্রীড়া। যেখানে বীরেরা হিংস্র প্রাণীর মুখোমুখি হয়ে তাদের পরাস্ত করত। কিন্তু এই ক্রীড়াকেও ব্যাবহার
করা হত মৃত্যুদন্ড কার্যকরের উপায় হিসাবে। যে সমস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত তাদের সম্পূর্ণ নগ্ন
করে ছেড়ে দেওয়া হত হিংস্র প্রাণীদের মধ্যে এবং কোনোরূপ প্রতিরোধ ছাড়াই হিংস্র প্রাণীরা মেরে ফেলত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে এবং
অবশ্যই খেয়ে ফেলত। এই মৃত্যু দেখে এই ক্রীড়া
দেখতে আসা দর্শকেরা উল্লাসে গলা ফাটাত। মৃত্যুও শুধুমাত্র বিনোদন, ভাবা যায়!
(১৪) নিষ্পেষণ : নিষ্পেষণ
(Crushing) পদ্ধতি মূলত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার
হত না, তবে যে সকল ব্যক্তির উপর ব্যবহার করা হত তারা সকলেই মৃত্যুবরণ
করত। এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল
আমেরিকায়। আর সেখান থেকে ইউরোপের
বিভিন্ন দেশে এটির প্রসার ঘটে। তৎকালীন সময়ে কোনো সাধারণ
ব্যক্তি যদি কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিশেষ
ব্যক্তিদের দ্বারা দোষী হিসাবে আখ্যা পেত, তাহলে তাদের দিয়ে দোষ স্বীকার করানোর কাজেই
ব্যাবহার করা হত এই পদ্ধতি। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিটিকে মাটিতে শুইয়ে তার উপর ভারী বস্তু রাখা হত এবং প্রতিবার তাকে তার দোষ স্বীকার
করার কথা বলা হত। স্বীকার না-করা পর্যন্ত ওজন
বাড়িয়ে যাওয়া হত, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মারা যায়। তবে দোষ স্বীকার করলেও যে মুক্তি
পেত তা নয়, সেই দোষের জন্য এবং সবাইকে মিথ্যা বলার দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।
(১৫) সিমেন্টের জুতো : এই জুতো যেই সেই
জুতো নয়, সিমেন্টের তৈরি। এই পদ্ধতি অনেকটাই "রিপাবলিকান বিবাহ" পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো, অর্থাৎ নদীর জলে
ডুবিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। শুধু পার্থক্য হল এখানে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে না বেঁধে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তির পায়ে পরিয়ে দেওয়া হবে এই সিমেন্টের জুতো, যাতে ব্যক্তিটি
জলের মধ্যে ভেসে থাকতে না পারেন। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সবচেয়ে বেশি প্রচলন ছিল
আমেরিকার মাফিয়াদের মধ্যে।
(১৬) রক্ত ঈগল :
ফিনল্যান্ডে
রক্তের ঈগল বা
Blood Eagle পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রথা চালু ছিল । এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে টান টান করে বেঁধে তার মেরুদণ্ড বরাবর কেটে তার বুকের পাজরের
হাড় বের করে ভেঙে ঈগলের পাখার মতো মেলে রাখা হত। এরপরে পিছন থেকে ফুসফুস বের করে রাখা হয়। এখানেই শেষ না, এর পরে বাইরে
ঝুলে থাকা ফুসফুস এবং ক্ষত জায়গায় লবণ মাখিয়ে দেওয়া হত। এই পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ কম হওয়ার
কারণে ব্যক্তি অনেক সময় ধরে বেঁচে থাকত এবং মৃত্যুর তীব্রতাও বৃদ্ধি পেত।
(১৭) ন্যায়ের ঝাঁকি
: ন্যায়ের ঝাঁকি বা Upright
Jerker পদ্ধতি প্রথম চালু হয় আমেরিকাতে। কিন্তু আমেরিকাতে বর্তমানে এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে
ইরানে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে গলায় দড়ি পরিয়ে দড়িটি উপরে দিকে টেনে তোলা হয়। দড়িটি তোলার সময় ঝাঁকি দেওয়া হয়,
যাতে আসামির ঘাড় ছিঁড়ে যায়। দড়িটি তুলতে সাধারণত ক্রেন ব্যবহার করা হয়।
(১৮) মাজাটেল্লো
: অত্যন্ত বীভৎস এই পদ্ধতি। মাজাটেল্লো বা Mazzatello হল এমনই একটি মৃত্যুদণ্ড প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতি হল শহরের মাঝে উঁচু মঞ্চে
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আনা হয় এবং তার মাথায় কাঠের তৈরি এক হাতুড়ি দিয়ে জোড়ে
আঘাত করা হয়। তারপর আঘাতে আঘাতে মাথা
থেঁতো করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। অষ্টাদশ দশকের দিকে ইউরোপের যে সমস্ত দেশে যেখানে পোপের আইন
চালু ছিল, সেখানেই এই প্রক্রিয়া চালু ছিল ।
(১৯) জাফরি : জাফরি বা Gridiron পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে জ্বলন্ত কয়লার বিছানার উপর জোড় করে চেপে রাখা হত। যতক্ষণ-না মৃত্যু না হত ততক্ষণ পর্যন্ত এইভাবে জ্বলন্ত কয়লার
বিছানায় শুইয়ে রাখা হত। এই পদ্ধতি বহুক্ষণ ধরে
চলত। মৃত্যুও আসত অনেক দেরিতে। তারপর শরীরের চামড়া পুড়ে সম্পূর্ণটাই
কালো হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি ।
(২০) ক্যাথেরিনের চাকা
: ক্যাথেরিনের চাকা বা Catherin Wheel বা Breaking
Wheel পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে
সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে একটি চাকার সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা
দেওয়া হয়। এরপর চাকাটি খুব জোরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় জল্লাদ ঘুরতে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শরীরে চাবুক বা লাঠি দিয়ে সজোরে উপর্যুপরি আঘাত করা
হয়। এরপর জল্লাদ মোটা লোহা
দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাতে আর পায়ে পেরেক পুঁতে দেয়। পুনরায় চাবুক আর লাঠি দিয়ে আঘাত দিতে
শুরু করে জল্লাদ। এরপর পেরেক পোঁতা অবস্থায়
ব্যক্তিকে শহরের মাঝে জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে সকলে এই নির্মমতা দেখতে পারে।
(২১) বাঁশ : এশিয়ার দেশগুলিতে একসময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার
ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার হত। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করার এক অভিনব এবং খুবই কষ্টদায়ক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বাঁশের সঙ্গে শক্ত
করে বেঁধে রাখা হত। যেহেতু বাঁশ গাছ অনেক তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় (দৈনিক সর্বোচ্চ
এক ফুটের মতো), তাই ধীরে ধীরে ছোটো বাঁশ ব্যক্তির দেহ ফুটো
করে বের হয়ে যেত। এটি বেশ ধীরে হত বলে ব্যক্তিটি অমানবিক যন্ত্রণা পেত এবং মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর হত।
(২২) সুড়সুড়ি : স্প্যানিসদের সুড়সুড়ি যন্ত্র বা Spanish Tickler বা বিড়ালের থাবা বা Cat's Paw পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতির
উৎপত্তি স্প্যানিসে।
এদের দ্বারাই ব্যবহৃত হওয়ার কারণে “স্প্যানিসদের সুড়সুড়ি যন্ত্র” নামেই বেশি পরিচিত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শক্ত করে বেঁধে রাখা হত
শহরের জনবহুল এলাকায়। তারপর জল্লাদ এই “সুড়সুড়ি দেওয়ার
যন্ত্র” পরে যথেচ্ছ ভাবে ব্যক্তিটির শরীরে আঁচড় দিত। এই আঁচড়
যে সে আঁচড় নয়, এক্কেবারে শরীর থেকে চামড়া আলাদা হয়ে যেত। কিন্তু
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হত না এত সহজে। কিন্তু যন্ত্রণা ভোগ করতে হত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির
মৃত্যু হত মূলত রক্তক্ষরণের কারণে।
ইনফেকশনের কারণেও মৃত্যু হত।
(২৩) জীবিত কবর : প্রেমের অপরাধে আনারকলিকে জীবিত অবস্থায় কবর
দেওয়া হচ্ছে, “মুঘল-ই-আজম”-এর এ দৃশ্যটি নিশ্চয় কেউ ভুলে যাননি। এমনই জীবিত কবর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতিটি ইতিহাসে অনেক
রাষ্ট্র গ্রহণ করেছিলেন। এই জীবিত অবস্থার কবর ঠিক আনারকলির মতো নয়। সাধারণত বিদ্রোহীদের বা
একাধিক হত্যাকারী বা ধর্ষণকারীদের এই ভাবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হত। সর্বশেষ
এরকম কবর দেয় জাপানিরা, যখন তারা চিনে হামলা
করেছিল তখন অনেক চাইনিজদের এইভাবে মৃত্যদণ্ড পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
(২৪) বেঁধে পোড়ানো
: খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পোড়ানো বা Burning
at the Steak পদ্ধতিটি মৃত্যুদণ্ড হিসাবে জনপ্রিয়(!) ছিল। মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিদের একা অথবা একই সঙ্গে অনেককে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। ১৬০০ সালে
জিওনার্দো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০) নামে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে রোমে কোপার্নিকাসের
সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদকে সমর্থন করার 'অপরাধে' জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ব্রুনোকে আগুনে পোড়ানোর আগ পর্যন্ত
চার্চ থেকে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল যেন তিনি কোপার্নিকাসের ভুল মতবাদ
পরিত্যাগ করে বাইবেলের বিশ্বাসের সাথে সংগতিপূর্ণ টলেমির 'পৃথিবী কেন্দ্রিক' মতবাদকে সত্য বলে মেনে
নেন। বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রতি অবিচল ব্রুনো ঘৃণাভরে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন। বরং বিচারকদের দিকে তাকিয়ে অবিচলভাবে ব্রুনো উচ্চারণ করেছিলেন – “Perhaps you, my judges, pronounce
this sentence against me with greater fear than I recieve it.” বোঝাই যাচ্ছে, ব্রুনোর নশ্বর দেহ যখন
আগুনের লালচে উত্তাপে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল, “ধর্ম বেঁচে গেল” ভেবে ধর্ম-ব্যবসায়ীরা কী উল্লাসই-না প্রকাশ করেছিল সেদিন। তারপরেও ঈশ্বর এবং তার
পুত্ররা সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণন শেষ পর্যন্ত কি থামাতে
পেরেছিলেন ?
(২৫) নির্লজ্জ ষাঁড় : নির্লজ্জ ষাঁড় বা Brazen Bull পদ্ধতিতে
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা আর-একটি অমানবিক পদ্ধতি। সিসিলির স্বৈরশাসক Akgragas এই পদ্ধতি প্রথম চালু করেছিলেন। পরামর্শদাতা ছিলেন তৎকালীন
সময়ের ধাতু কারুকার্যকর প্রিলিয়স (Prilios)। ধাতু
দ্বারা নির্মিত এই ষাঁড়কে এতটা বড়ো করে বানানো হত যেন এর পেটের মধ্যে একজন মানুষকে
ঢোকানো সম্ভব হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ওই ষাঁড়ের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে
থেকে পেটের দিকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। এর ফলে ষাঁড়ের ভিতরে থাকা ধীরে ধীরে সরাসরি আগুনে না ঝলসে আগুনের গনগনে তাপে
ব্যক্তিটির মৃত্যু হত। ষাঁড়টিকে
এমনভাবে নির্মাণ করা হত যাতে ভিতরে পুড়তে থাকা ব্যক্তিটির চিৎকার শুনে মনে হত যেন
ষাঁড় চিৎকার করছে।
পুড়তে থাকা ব্যক্তিটির ধোঁয়া ষাঁড়ের নাক দিয়ে বেরিয়ে আসত।
(২৬) লিং চি : লিং চি বা Ling Chi মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতিটি চিনে চালু ছিল। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে লোকালয়ে এনে বেঁধে ফেলত। এরপর একজন জল্লাদ বিশেষ ছুরি দিয়ে ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ তার
দেহ থেকে ধীরে ধীরে আলাদা করে দিত। সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিটি যাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে সর্বাধিক যন্ত্রণা ভোগ করে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করা
ছিল জল্লাদের প্রধান উদ্দেশ্য। এ পদ্ধতি কার্যকর করা
হয় না।চিনেই ২০ সহস্রাব্দের
শুরুতে এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ।
(২৭) কলম্বিয়ার নেকটাই : এই পদ্ধতিতে
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় শুধুমাত্র মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তির গলা কাটা হয়, সেই কাটা অংশ থেকে ব্যক্তির জিভ বের করে রাখা হয়। প্রকাশ্যে প্রদর্শনীর জন্যও
রাখা হয়। যাতে অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়। কলম্বিয়ার নেকটাই বা
Colombian Necktie পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি এখনও
কলম্বিয়া সহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে।
(২৮) সেপপুকু : সেপপুকু বা Seppuku মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করার পদ্ধতি আসলে আত্মহত্যার সামিল। জাপানের সামুরাইদের
মধ্যে বেশি প্রচলিত। এই
পদ্ধতি মৃত্যুবরণ করা অনেকটা সন্মানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করার পর্যায়ে পরে। সামুরাই
নিজের তলোয়ার দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করে নিজের পেটের ভিতর দিয়ে নাড়িভুঁড়ি বাইরে বের
করে নিয়ে আসে। সে সময় তার কাছের
কোনো বন্ধু তলোয়ার দিয়ে এক কোপে আত্মহত্যাকারীর মাথা শরীর থেকে পৃথকটা করে ফেলা হয়। এহেন মৃত্যুবরণ করা অমানবিক
মনে হলেও মৃত্যুবরণকারী সামুরাইয়ের কাছে এটি অনেক সন্মানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করা
এবং তার বন্ধুর কাছে বন্ধুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো।
(২৯) ক্রুশকাঠে বিদ্ধ করা : ক্রুশকাঠে
বিদ্ধ করে হত্যা বা Crucifixion যদিও ধর্মীয়ভাবে
খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে অনেক পবিত্র।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সমস্ত ব্যক্তিকে এভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া
হত। এটি ছিল রোমানদের সব থেকে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তিকে অনেক অত্যাচার করা হয়। তারপর তাকে বাধ্য করা
হত তাকে যে ক্রুশকাঠে ঝোলানো হবে সেই ক্রুশকাঠটিকে নিজের কাঁধে করে মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর তাকে ক্রুশকাঠের উপর শুইয়ে তার দু-হাতের তালু
বরাবর লোহার পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়। এছাড়াও তার দু-পা এক করে লোহার পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়
খুঁটির সঙ্গে। এভাবেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
ব্যক্তি ঝুলে থাকত মৃত্যু না-হওয়া পর্যন্ত। সাধারণত সপ্তাখানেক সময় লাগত মৃত্যু
হতে। মৃত্যু সম্পন্ন শ্বাস বন্ধ হয়ে। জিশুখ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ধারণা থেকেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের
কাছে ক্রুশ একটি পবিত্র চিহ্ন বা প্রতীক। কিন্তু খ্রিস্টজন্মের বহু আগে থেকেই
রোমান সভ্যতায় খুঁজে পাওয়া যায় ইংরেজি 'T' অক্ষর সদৃশ তিনবাহু বিশিষ্ট মানুষ হত্যা
করার বিশেষ অস্ত্র বিশেষ। উল্লেখ্য, 'T' থেকেই ক্রুশচিহ্ন এর সৃষ্টি হয়েছে এমন দাবি কারও পক্ষেই জোর করে করা সম্ভব
নয়। তবে দুটি প্রতীকের
কাজের মিল এবং গাঠনিক মিল বেশ স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান। অনেকেই মনে করে থাকেন জিশুখ্রিস্টর ক্রুসিফিকেশন ইতিহাসের প্রথম
নির্মম হত্যাকাণ্ড।
কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। আসিয়রিয়ান, গ্রিক এবং পারসিয়ান সভ্যতায়
ভুঁরি ভুঁরি উদাহারণ খুঁজে পাওয়া যায় ক্রুসিফিকেশন করে দেশদ্রোহী এবং ক্রীতদাসদের
হত্যা করার জন্য।
(৩০) বিষাক্ত ইনজেকশন : মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রথমে স্নান করিয়ে তার শেষ খাবার
দেওয়া হয় এবং তার নিজ
ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করানো হয়। পরে তাকে একটা ছোটো চেম্বারে নিয়ে একটা বিছানার সঙ্গে বাঁধা হয়। তার শরীরে দুটো
নল ঢুকানো হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। তার শরীরে প্রথমে সোডিয়াম থিওপেনটাল ৫০০০ মিলিগ্রাম দেওয়া হয়, যা এনেসথেসিয়ার কাজ
করে। তারপরে পানকুরিয়াম ব্রোমাইড দেওয়া হয় ফুসফুস অবশ করার জন্য। এর পরে দেওয়া হয় পটাশিয়াম
ক্লোরাইড, হৃৎপিণ্ড বন্ধ হওয়ার জন্য।
(৩১) পাথর নিক্ষেপ : এ পদ্ধতিতে পুরুষের ক্ষেত্রে
কোমর পর্যন্ত এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে বুক পর্যন্ত মাটিতে পোঁতা হয়। কাছ থেকে মাঝারি
সাইজের পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পাথর যেন
খুব বড়ো না হয়, যাতে হঠাৎ করেই ওই ব্যক্তি মারা না যায়। তবে নিয়ম আছে যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি
পাথর নিক্ষেপের সময় গর্ত থেকে উঠে আসতে পারে, তবে তার মৃত্যুদণ্ড মকুব হয়ে যাবে।
(৩২) বিষপান : বিষ পান করিয়েও অনেক দেশে
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। এ বিষয়ে আমরা দার্শনিক
সক্রেটিসের কথা মনে করতে পারি। গ্রিসের এথেন্সে তখনকার
দিনের অন্যতম রাজনীতিবিদ আনুতুস তাঁর বিরুদ্ধে মুখ্য অভিযোগ আনেন যে, তিনি
রাষ্ট্রের তরুণ সম্প্রদায়ের মনে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র এবং সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে
সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধার ভাব সৃষ্টি করে চলেছেন৷ এসব অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তিনি বিচারকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। বিচারকদের বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
এথেন্সের কেন্দ্রবিন্দুতে বসেছে এ আদালত। আদালতের বিচারক সংখ্যা ৫০০।
বিচারকরা আসীন কাঠের বেঞ্চিতে। বিচারকদের চারপাশ ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়।
সক্রেটিসের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তিন এথেনীয় নাগরিকও সেখানে হাজির। তিন
অভিযোগকারীকে তাদের অভিযোগ উত্থাপন করে বক্তব্য রাখার জন্য তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
এরপর সক্রেটিসকে সময় দেওয়া হবে তিন ঘণ্টা সময়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডনের জন্য। বিচারকরা অভিযোগের সত্য-মিথ্যা নির্ধারণে ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় জানাবেন। বিচারকদের সামনে দুটি গোলাকার কলসি। একটিতে লেখা “guilty”, আর অপরটিতে “not guilty”। বিচারকরা তাদের ইচ্ছেমতো যে-কোনো একটি কলসে তাদের নিজ নিজ চাকতি ফেলে সক্রেটিসের বিচারের রায় সমাধা করবেন। এভাবে ভোটাধিকারভিত্তিক আদালতের রায়ে সক্রেটিসের পক্ষে ২২০ বিচারক ও বিপক্ষে ২৮০ বিচারকের ভোট পড়ে। অতএব বিচারে সক্রেটিস দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর এল সক্রেটিসের শাস্তি নির্ধারণের পালা। অভিযোগকারী সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। সক্রেটিসকে সুযোগ দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ রাখার জন্য। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন সক্রেটিস হয়তো বলবেন তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে নির্বাসনে দেওয়া হোক। তা না-করে সক্রেটিস বরং সেদিন বলেছিলেন, তিনি ভণ্ড জ্ঞানীদের মুখোশ খুলে দিচ্ছেন। সক্রেটিসের নিজের ভাষায় : “রাষ্ট্ররূপ মন্থরগতি অশ্বের জন্য আমি হচ্ছি বিধিদত্ত এক ড্যাঁশ পোকা।” অতএব তাকে পুরস্কৃত করাই উচিত। এমনি পরিস্থিতিতে তার ওপর চাপ আসে বাস্তবভিত্তিক কোনো শাস্তির পরামর্শ দিতে। তখন তিনি চাপের মুখে বলেন, তাকে মোটা দাগে জরিমানা করা যেতে পারে। বিচারকরা শেষপর্যন্ত তার মৃত্যুদণ্ডই ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর তাকে কাছাকাছি একটি কারাগারে নেওয়া হয়। এথেনীয় আইন অনুযায়ী তার মৃত্যুদণ্ড সেখানেই কার্যকর করা হয়। আর সক্রেটিস নিজ হাতে হেমলক বিষপানে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বিষপাত্র হাতে নিয়ে বলেছিলেন : “I to die, you to live, but
only God knows who is correct.”
(৩৩) শূলে চড়ানো : ‘শূলে চড়ানো’ বা ‘শূলবিদ্ধ করা’ একটি প্রাচীন শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পদ্ধতি।
নিঃসন্দেহে এটি ছিল ভয়াবহ ও বর্বরোচিত শাস্তি। প্রথম শূলে চড়ানোর ইতিহাস পাওয়া যায়
প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে। সে সময় রাজদ্রোহীদের শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। তৎকালীন পারস্যের রাজা প্রথম
দারায়ুস ব্যাবিলন জয় করার পর প্রায় ৩ হাজার ব্যাবিলনবাসীকে শূলে চড়িয়েছিলেন। একটি সুচালো
দণ্ড বা খুঁটিকে দেহের বিভিন্ন ছিদ্রপথে বিশেষ করে পায়ুপথে প্রবেশ করানো
হত। তারপর খুঁটিটিকে
মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হত। একসময়
সুচালো অংশটি অপরাধীর শরীর ভেদ করে বুক অথবা ঘাড় দিয়ে বের হয়ে যেত। অপরাধী ব্যক্তিটি
এভাবে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না-করে
ভোঁতা রাখা হত, যাতে হৃৎপিণ্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি
মারা না যায়। এতে অপরাধী বেশি কষ্ট পেত। কেন-না মারা যেতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি
একদিন সময়ও লাগত। শূলে চড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি
কুখ্যাত ছিল প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ওয়ালেশিয়া রাজ্যের যুবরাজ তৃতীয় ভ্লাদ যাকে
বলা হয় ড্রাকুলা। তৎকালীন তুরস্কে এ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। তুর্কিদের
হাতে একবার আটক হওয়ার সময় তৃতীয় ভ্লাদ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এ পদ্ধতিটি শিখে
নেয়। ড্রাকুলা যুদ্ধবন্দি ও রাজদ্রোহীদের শূলে চড়াত সাধারণ প্রজাদের সামনেই, যাতে
তারা ড্রাকুলাকে ভয় পায়। তার শত্রুদের জন্যও এটা ছিল তার ভয়াবহতার
ইঙ্গিত। তবে ড্রাকুলার শূলে চড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভিন্নতর। পেট অথবা পিঠের
মধ্য দিয়ে সুচালো কোনো দণ্ড ঢুকিয়ে দিয়ে তা মাটিতে গেঁড়ে দেওয়া হত। এভাবে একসঙ্গে অনেক মানুষকে
শূলে চড়িয়েছেন ড্রাকুলা। আফ্রিকান উপজাতি জুলুদের মধ্যে শূলে চড়ানো প্রচলিত ছিল।
জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায়ও একসময় এ পদ্ধতি
প্রচলিত ছিল। পাক-ভারত উপমহাদেশের
মধ্যে ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালা প্রদেশে
নিকট অতীতে শূলে চড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত।
(৩৪)
চূর্ণ বা পিষ্টকরণ : চূর্ণকরণ বা Crushing কোনো কিছু চাপা দিয়ে পিষ্ট করা ব্যাপারটা
ইউরোপ, আমেরিকায় বেশি প্রচলন ছিল। সাধারণত জোরপূর্বক কিছু আদায়
করার ক্ষেত্রে তারা এই শাস্তিটি ব্যবহার করত। এই পদ্ধতিতে বন্দিকে মাটির সঙ্গে শুইয়ে তার উপর কাঠের
তক্তা রাখা হত এবং কাঠের তক্তার উপর ভারী ভারী পাথর রাখা হত। ততক্ষণ পর্যন্ত এই শাস্তি চলতে থাকত যতক্ষণ-না বন্দি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হত। এছাড়া আরও একভাবে এটা করা হত।
(৩৫) বিশাল পাথর বেঁধে জলে
নিক্ষেপ : প্রাচীনকালে অপরাধ করলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে সমুদ্র বা নদীর জলে ডুবিয়ে
মারা হত। যাতে জলের উপর ভেসে
উঠতে না পারে এবং সাঁতরে পালিয়ে যেতে না পারে সে কারণে ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে বিশাল
পাথরের চাঁই দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হত।সেই পাথরের ভারে ব্যক্তির দেহ জলের অতলে তলিয়ে যেত। ভাগবতপুরাণে বর্ণিত হিরণ্যকশিপু-কায়াদু
পুত্র প্রহ্লাদকে বিষ্ণুভক্ত
হওয়ার অপরাধে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় পিতা হিরণ্যকশিপু স্বয়ং।কিন্তু
যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান,
ততবারই
বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়। তারই মধ্যে প্রহ্লাদকে শরীরে পাথর বেঁধে জলে নিক্ষেপ করা ছিল একটি উপায়। যদিও সব উপায়ই ব্যর্থ হয়েছিল গল্পের খাতিরে।
(৩৬) ঘোড়ার পিছনে
বেঁধে : মধ্যযুগে রাজা সম্রাটরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর দুই পায়ে
শক্ত দড়ি বেঁধে সেই দুটি ঘোড়ার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হত। এরপর ঘোড়া দুটিকে ছুটিয়ে দেওয়া হত। দুটি ঘোড়া দু-দিকে তীব্র বেগে ছুটে যাওয়ার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির পা
ছিঁড়ে শরীর দু-ভাগ হয়ে মারা যেত।
মানবসমাজে আসামীদের সর্বোচ্চ
শাস্তি Capital
Punishment হিসাবে বহুকাল আগে থেকেই প্রচলিত মৃত্যুদণ্ড। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড প্রথম
কার্যকর করা হয় মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ষোলো শতকে। তখন কুঠার দিয়ে মুণ্ডচ্ছেদ করা
হত। ১৭০০ সালে ব্রিটেনে সাধারণ অপরাধের জন্যও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ খ্রিস্টাব্দে
কাদার মধ্যে পুঁতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত ব্রিটিশরা। ১৫৩১ সালে ব্রিটেনে
নতুন আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জীবন্ত সিদ্ধ করে। ব্রিটিশ আমেরিকান কলোনীতে
১৬০৮ সালে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ভার্জিনিয়ার জর্জ
কেন্ডাবালাকে। ১৯৭৭ সালে টেক্সাসে প্রথম বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এখন দেখি কোন্ দেশে কী ধরনের
মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন আছে। (১) শিরচ্ছেদ - সৌদি আরব, কাতার।
(২) ইলেকট্রিক চেয়ার - আমেরিকা, ফিলিপাইন। (৩) ধাক্কা মেরে পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া - ইরান, চিলি। (৪) গ্যাস চেম্বার – আমেরিকা। (৫) ফাঁসি
- আমেরিকা, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, মঙ্গোলিয়া, জাপান, পাকিস্তান,ভারত, মিশর, ফিলিপনস, সিঙ্গাপুর, লাইবেরিয়া, কোরিয়া, বাংলাদেশ সহ অনেক দেশে।
(৬) ইনজেকশন - আমেরিকা, ফিলিপিনস, গুয়েতমালা, থাইল্যান্ড, চিন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম। (৭) ফায়ারিং স্কোয়াড - আমেরিকা, চিন, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, লেবানন সহ অনেক দেশে। (৮) ছুরিকাঘাত –
সোমালিয়া
ইত্যাদি।
শুধু সেই রাষ্ট্রের বিচার-ব্যবস্থাই নরহত্যায়
সামিল হয় তা নয়, রাষ্ট্রের যন্ত্র তথা পুলিশ মায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর
সমস্ত শাখাই নরহত্যা করে থাকে নির্বিচারে।পুলিশী হেফাজতে কত অভিযুক্তকে বিচারের আগে মেরে ফেলা হচ্ছে, তার হিসাব কে
রেখেছে! সেনাবাহিনীর কর্মীরা বিনা প্ররোচনায় মানুষ হত্যা করে। সেইরকমই এক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে
আজও প্রায় ১২ বছর ধরে শর্মিলা চানু অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।
থানা,
অর্থাৎ পুলিশ স্টেশনের কাছাকাছি যাদের বাড়ি তাদের প্রত্যেরই নিশ্চয় পুলিসের হেফাজতে থাকা ধৃত ব্যক্তির আর্তনাদ শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তারপর পরের দিন সকালে খবরের কাগজে পুলিশের বয়ানে আষাঢ়ে গল্পও পড়েছেন।আষাঢ়ে গল্প এক : ধৃত ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে। আষাঢ়ে গল্প দুই : এনকাউন্টারে মৃত্যু। সবাই যে এ ঢপের গপ্পো বিশ্বাস করে তা নয়। ফলে তারা ঘেরাও করে, ওসির শাস্তির দাবি করে।দু-চারদিন সেই প্রতিবাদের থাকে। তারপর সব শান্ত, যেন কিছুই হয়নি। অজানা থেকে যায় অত্যাচারী খুনী পুলিশের শাস্তি হল কি না। সকলের কাছে এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয় যে, পুলিশ ধৃত ব্যক্তিকে মারধোর করবেই এবং তা অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার স্বার্থে। তাই বলে মেরে ফেলবে ধৃত ব্যক্তিকে, তাও বিনা বিচারে ? পুলিশ মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে ? পুলিশের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে ? প্রশ্ন অনেক হলেও উত্তর একটাই : না। কারণ আইনের রক্ষক পুলিশ বাহিনীও আইনের অধীন। মূলত দুটি আইনের সাহায্যে পুলিশ ‘শান্তি-শৃঙ্খলা’ বজায় রাখে। (১) ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ও (২) সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৯৭৩ বা ক্রিমিন্যাল প্রসিডিওর কোড। এই আইনে ধৃত ব্যক্তির উপর নির্যাতনের কোনো অধিকার দেওয়া হয়নি পুলিশকে, কোনো অবস্থাতেই নয়। তা সত্ত্বেও পুলিশ ধৃত ব্যক্তিকে যথেষ্ট বলপ্রয়োগ ও মারধোর করে। ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৩০, ৩৩১ ধারায় ও ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৭ ধারায় পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তির বন্দোবস্ত করা আছে। ‘অপরাধ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য’ শারীরিক আঘাত বা ক্ষত সৃষ্টি করা পুলিশের অপরাধ। সেক্ষেত্রে পুলিশের সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে। ধৃত ব্যক্তি যদি গুরুতর আহত হন তাহলে সেক্ষেত্রে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আবার শারীরিক নির্যাতন না করেও যদি নির্যাতনের ভয়ও দেখানো হয় তাহলে তাও নির্যাতন করার অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। ১৯৮৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে রাষ্ট্রপুঞ্জের পৃষ্ঠপোষকতায় জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার কমিশনের ৪৫ তম অধিবেশনে ভারত সরকারের প্রতিনিধি ও সংসদ সদস্য এস এস আলুওয়ালিয়া তাঁর ভাষণে বলেন—“নিপীড়ন হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এও মনে করি যে, নিপীড়নের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য এই ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, যা সাংবিধানিক সমানাধিকারকে লঙ্ঘন করে।জঘন্যতম অত্যাচারগুলি সংঘটিত হয় টর্চার সেলে বা জেলখানায় ……… ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অথবা বাঁচার অধিকার ভারতীয় সংবিধানে সকল নাগরিককে অর্পণ করেছে ……….ভারতের আইনবিধিতে পুলিশ কর্তৃক ধৃত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। পলায়নরত অথবা বাধাদানকারী ধৃত ব্যক্তিকেও পুলিশ হত্যা করতে পারে না।……..জেরার সময় বন্দি ধৃতের উপর পুলিশ অফিসার ‘থার্ড ডিগ্রি’ পদ্ধতি গ্রহণ না করে তার জন্য বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছে।”
শুধু আইন নয়, সারা বিশ্বের কাছে ভারত সরকার ১৯৪৮ সালে ১০ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের দফা মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, সেই সনদের ৫ ধারা (“No one shall be subjected
to torture or to cruel, inhuman or degrading treatment or punishment.”) অনুসারে ভারতে কোনো বন্দিকে কোনো ধরনের নির্যানত করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। মনে রাখা প্রয়োজন, নির্দিষ্ট বিধি মেনে পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা মানেই সে ‘দোষী’ বা ‘অপরাধী’ নয়।যতদিন-না পর্যন্ত আদালতে ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুলিশ প্রমাণ করতে না-পারছে ততদিন পর্যন্ত ধৃত ব্যক্তি নিরপরাধ এবং সেই নিরপরাধকে অত্যাচারকরা সর্বাধিক ১৫ দিনের পুলিশ হাজতে শুধু বেআইনি নয়, তার ব্যক্তিসত্তার উপর চরমতম আঘাত। কারণ পুলিশ সাজা দেওয়ার অধিকারী নয়। সাজা দেওয়ার একমাত্র অধিকার আছে আদালতের।
কলকাতার টালিগঞ্জে ‘রিট্রিট’ নামে অত্যাচার গৃহ আছে। খোদ লালবাজার সহ ভারতের সর্বত্র থানা লক আপে পুলিশ কর্তৃক ধৃতদের উপর বীভৎস অত্যাচার চলে।নানা কায়দায় নির্যাতন করে বহু ধৃত ব্যক্তিকে অত্যাচার করা হয়। অমানুষিক অত্যাচারের ফলে ধৃতব্যক্তি মৃত্যুমুখে ঢলে পড়ে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ট্রেনিং স্কুলে পুলিশ প্রশিক্ষণের সময় ‘থার্ড ডিগ্রি’ কায়দায় অত্যাচারের যে ফিরিস্তি পেশ করা হয়েছে, তা জানলে শিউরে উঠতে হয়। এলোপাথারি মারধোর করা, শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া, খাবার ও জল না দেওয়া এবং ঘুমোতে না দেওয়া, পেচ্ছাব খেতে বাধ্য করা, ইলেকট্রিক শক দেওয়া, উলঙ্গ করিয়ে ভিড় রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া, বাঁশকল করে মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে আগাপাশতলা পেটানো, দু-পায়ে দড়ি বেঁধে মাথা নিচের দিক করে দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা, গরম জলের বোতল দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া, হাত-পা বেঁধে পাজামার ভিতর আরশোলা বা ইঁদুর ঢুকিয়ে দেওয়া, দু-পায়ে দড়ি বেঁধে মাথা নিচের দিক করে দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা অবস্থায় মাথা বস্তা বেঁধে দেওয়া হয় এবং বস্তার ভিতর জ্যান্ত ইঁদুর বা আরশোলা ছেড়ে দেওয়া হয়, মলদ্বারের ভিতর কাঠি বা বিদ্যুৎবাহী তার ঢুকিয়ে দেওয়া, দাড়ি বা চুল উপড়ে ফেলা, এক পায়ে এক হাত তুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা, ইংরেজি Z-এর মতো ত্রিভঙ্গ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হামাগুড়ি দেওয়ানো, ধৃত বন্দির শরীরে পেট্রোল অথবা কেরোসিন অথবা অ্যাসিড সিরিঞ্জ দিয়ে পুশ করা ইত্যাদি। এইরকম অমানুষিক অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক ধৃত ব্যক্তি মারা যান। ধৃত ছেড়ে দেওয়ার বাহানা করে মাঝরাতে লকআপ থেকে বের করে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গুলি মেরে ফেলার অভিযোগও পুলিশের বিরুদ্ধে আছে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এ এন মোল্লা ১৯৬৪ সালে জনৈক পুলিশ অফিসার নঈমের বিরুদ্ধে জনৈক ভারতীয় নাগরিকের মামলার রায়ে বলেছিলেন : “সমস্ত দায়িত্ব নিয়েই আমি একথা বলতে পারি যে, সারা দেশে এমন কোনো গোষ্ঠী নেই যাদের অপরাধের খতিয়ান ধারে কাছেও যেতে পারে সেই সংগঠিত গুণ্ডাবাহিনীর, যার নাম কিনা ভারতীয় পুলিশ বাহিনী।”
পুলিশ মানুষ হত্যা করে। অসহায় ধৃতদের নির্বিবাদে হত্যা
করে। বিচারে ধৃতের বিরুদ্ধে
অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই হত্যা করে।বস্তুত ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘লৌহমানব’
বল্লভভাই প্যাটেল উচ্চকিত কণ্ঠে বলেছিলেন – “এতদিন আমরা যে পুলিশ বাহিনীর সমালোচনা করেছিলাম, সে অন্য পুলিশ।
আর
এখনকার পুলিশ হল স্বেচ্ছাসেবক……”।
তারপর
অনেক জল গড়িয়ে গেছে গঙ্গা-যমুনা-কৃষ্ণা-গোদাবরী দিয়ে।
ভারতের
অন্য রাজ্যের কথা কথা তো বাদই দিলাম।
শুধু
পশ্চিমবঙ্গে খুনি পুলিশবাহিনীদের ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে চমকে যেতে হয়।
যত দিন যাচ্ছে ‘স্বাধীন’
রাষ্ট্রের পুলিশের নিশানা ততই অব্যর্থ হয়ে উঠছে। মাথা, বুক,
পেট ভেদ করে তপ্ত সিসা অনেকদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে – প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু, অধিকারের কথা বললেই বিচ্ছিন্নতাবাদী,
মুখ খুললেই দেশদ্রোহিতা। অতএব চুপ করে থাকো সবাই। কথা বললেই গুম। বিরোধিতা করলেই বিনাশ।অনুগত হও। অনুগত হও।
অনুগত
হও। বেগড়বাই করলেই রাষ্ট্রের
অঙ্গুলি হেলনে অন্তরীণ ।
গণতন্ত্রে
মানুষের কথাই শেষ কথা, মানুষের হৃদয়ের ভাষাই রাষ্ট্রের ভাষা – এই পরম সত্যটিকে বিদ্রূপ করতেই যেন পুলিশের কথাই শেষ কথা। পুলিশ-হাজতে বা
তত্ত্বাবধানে ধৃত ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, তা মানবসভ্যতার অপমৃত্যুকেই ডেকে আনছে।
১৯৪৭ সালের ১০ নভেম্বর। ‘স্বাধীন’
রাষ্ট্রের বয়স তখন মাত্র তিন মাস। আমরা সেদিন প্রথম বুঝলাম শাসক বিদেশি না স্বদেশি সেটা কোনো
বিষয় নয় – শাসক শাসকই হয়। বিদেশিই হোক অথবা স্বদেশি – আসল বিষয় ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতার হস্তান্তর।ব্রিটিশদেরই তৈরি ‘স্পেশাল পাওয়ার বিল’ (এ বিল মানুষকে অবাধে খুন করার বিল বা ছাড়পত্র) প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল বের করেছিল একদল ভারতীয় নাগরিক ভারতের মাটিতেই।সম্পূর্ণ নিরীহ ওই মিছিলের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল স্বাধীন ভারতের স্বদেশি পুলিশের গুলি।অকুস্থলে লুটিয়ে পড়ল আরডব্লিউএসির স্বেচ্ছাসেবক জনৈক শিশির মণ্ডল। স্বাধীন দেশের স্বদেশি পুলিশের বন্দুকবাজির প্রথম শিকার।১৯৫৯ এবং ১৯৬৬ সালে ভারতবাসী দু-দফায় খাদ্য আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভংয়কর দানবীয় রূপ প্রত্যক্ষ করেছিল। এ বছরেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দশ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রীর এক বিশাল মিছিলের উপর পুলিশের গুলি চালায়। নির্বিচারে এই গুলি বর্ষণে মৃত্যু হয় ১১ জনের। ৩ সেপ্টেম্বর আবার গুলি চলল কোলকাতা, হাওড়া ও ২৪ পরগণায় – মৃত্যু হল ১৫ জনের। পরের দিন আবার গুলিবর্ষণ । মৃ্ত্যু হল ১০ জনের। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহে পুলিশ হত্যা করেছিল প্রায় ৮০ জনকে।
এলো ১৯৬৭ সাল।তৎকালীন মন্ত্রী হরেকৃষ্ণ কোঙারের জ্ঞাতসারে যুক্তফ্রন্টের পুলিশ গুলি চালিয়ে সাতজন কৃষক মহিলাকে হত্যা করল। এদের মধ্যে একজনের পিঠে বাঁধা ছিল এক দুধের শিশু। পুলিশের গুলি মাকে হত্যা করে শিশুটিকেও এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছিল। সত্তর দশকে শুধুমাত্র কলকাতার বুকেই ১৭৮৩ জন যুবককে হত্যা করেছিল পুলিশ। সে সময় নকশাল মানেই সে বধযোগ্য।‘এনকাউন্টার’-এর নামে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় হাজার হাজার যবককে হত্যা করেছিল।সত্তরের দশক ছিল নরমেধ যজ্ঞের দশক। পুলিশের গলিতে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল এক সমমভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে।মরিচঝাঁপির নিরীহ অসহায় মানুষদের পুড়িয়ে গণহত্যা, আনন্দমার্গীদের গণহত্যা, নন্দীগ্রামের গণহত্যার ঘটনাগুলির মতো এরকম অজস্র ঘটনা আছে, সেগুলি পরপর সাল-তারিখ দিয়ে আলোচনা করলে একটা গোটা মহাভারতে আঁটবে না।
Supreme Court of India ধৃতের উপর পুলিশের অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর একটি JUDGMENT দিলেন (Shri D.K. Basu,Ashok K.
Johri vs State Of West Bengal,State Of U.P on 18 December, 1996)। আমি পাঠকদের জ্ঞাতব্যের জন্য হুবহু তুলে ধরলাম।
WITH WRIT PETITION (CRL) NO. 592 OF 1987 J U D G M E N T
DR. ANAND, J.
The Executive Chairman, Legal Aid Services, West Bengal,
a non-political organisation registered under the Societies Registration Act,
on 26th August, 1986 addressed a letter to the Chief Justice of India drawing
his attention to certain news items published in the Telegraph dated 20, 21 and
22 of July, 1986 and in the Statesman and India express dated 17th August, 1986
regarding deaths in police lock-ups and custody. The Executive Chairman after
reproducing the new items submitted that it was imperative to examine the issue
in depth and to develop "custody jurisprudence" and formulate
modalities for awarding compensation to the victim and/or family members of the
victim for attrocities and death caused in police custody and to provide for
accountability of the efforts are often made to hush up the matter of lock-up
deaths and thus the crime goes unpunished and "flourishes". It was
requested that the letter alongwith the new items be treated as a writ petition
under "public interest litigation" category.
Considering the importance of the issue raised in the
letter being concerned by frequent complaints regarding custodial violence and
deaths in police lock up, the letter was treated as a writ petition and notice
was issued on 9.2.1987 to the respondents.
In response to the notice, the State of West Bengal filed
a counter. It was maintained that the police was no hushing up any matter of
lock-up death and that whereever police personnel were found to be responsible
for such death, action was being initiated against them. The respondents
characterised the writ petition as misconceived, misleading and untenable in
law.
While the writ petition was under consideration a letter
addressed by Shri Ashok Kumar Johri on 29.7.87 to the Hon'ble Chief Justice of
India drawing the attention of this Court to the death of one Mahesh Bihari of
Pilkhana, Aligarh in police custody was received. That letter was also treated
as a writ petition and was directed to be listed alongwith the writ petition filed
by Shri D.K. Basu. On 14.8.1987 this Court made the following order :
"In almost every states there are allegations and
these allegations are now increasing in frequency of deaths in custody
described generally by newspapers as lock-up deaths. At present there does not
appear to be any machinery to effectively deal with such allegations. Since
this is an all India question concerning all States, it is desirable to issues
notices to all the State Governments to find out whether they are desire to say
anything in the matter. Let notices issue to all the State Governments. Let
notice also issue to the Law Commission of India with a request that suitable
suggestions may be returnable in two months from today."
In response to the notice, affidavits have been filed on
behalf of the States of West Bengal, Orissa, Assam Himachal Pradesh, Madhya
Pradesh, Harayana, Tamil Nadu, Meghalaya , Maharashtra and Manipur. Affidavits
have also been filed on behalf of Union Territory of Chandigarh and the Law
Commission of India.
During the course of hearing of the writ petitions, the
Court felt necessity of having assistance from the Bar and Dr. A.M. Singhvi,
senior advocate was requested to assist the Court as amicus curiae.
Learned counsel appearing for different States and Dr.
Singhvi, as a friend of the court. presented the case ably and though the
effort on the part of the States initially was to show that "everything
was well" within their respective States, learned counsel for the parties,
as was expected of them in view of the importance of the issue involved, rose
above their respective briefs and rendered useful assistance to this Court in
examining various facets of the issue and made certain suggestions for
formulation of guidelines by this court to minimise, if not prevent, custodial
violence and kith and kin of those who die in custody on account of torture.
The Law Commission of India also in response to the
notice issued by this Court forwarded a copy of the 113th Report regarding
"injuries in police custody and suggested incorporation of Section 114-B
in the India Evidence Act."
The importance of affirmed rights of every human being
need no emphasis and, therefore, to deter breaches thereof becomes a sacred
duty of the Court, as the custodian and protector of the fundamental and the
basic human rights of the citizens. Custodial violence, including torture and
death in the lock ups, strikes a blow at the Rule of Law, which demands that
the powers of the executive should not only be derived from law but also that
the same should be limited by law. Custodial violence is a matter of concern.
It is aggravated by the fact that it is committed by persons who are supposed
to be the protectors of the citizens. It is committed under the shield of
uniform and authority in the four walls of a police station or lock-up, the
victim being totally helpless. The protection of an individual from torture and
abuse by the police and other law enforcing officers is a matter of deep
concern in a free society. These petitions raise important issues concerning
police powers, including whether monetary compensation should be awarded for
established infringement of the Fundamental Rights guaranteed by Articles 21
and 22 of the Constitution of India. The issues are fundamental.
"Torture" has not been defined in Constitution
or in other penal laws. 'Torture' of a human being by another human being is
essentially an instrument to impose the will of the 'strong' over the 'weak' by
suffering. The word torture today has become synonymous wit the darker side of
human civilisation.
"Torture is a wound in the soul so painful that
sometimes you can almost touch it, but it is also so intangible that there is
not way to heal it. Torture is anguish squeezing in your chest, cold as ice and
heavy as a stone paralyzing as sleep and dark as the abyss.
Torture is despair
and fear and
rage and hate. It
is a desire to
kill and
destroy including
yourself."
Adriana P.
Bartow
No violation of any one of the human rights has been the
subject of so many Conventions and Declarations as 'torture'- all aiming at
total banning of it in all forms, but inspite of the commitments made to
eliminate torture, the fact remains that torture is more widespread not that
ever before, "Custodial torture" is a naked violation of human
dignity and degradation with destroys, to a very large extent, the individual
personality. IT is a calculated assault on human dignity and whenever human
dignity is wounded, civilisation takes a step backward-flag of humanity must on
each such occasion fly half-mast.
In all custodial crimes that is of real concern is not
only infliction of body pain but the mental agony which a person undergoes
within the four walls of police station or lock-up. Whether it is physical
assault or rape in police custody, the extent of trauma a person experiences is
beyond the purview of law.
"Custodial violence" and abuse of police power
is not only peculiar to this country, but it is widespread. It has been the
concern of international community because the problem is universal and the
challenge is almost global. The Universal Declaration of Human Rights in 1984,
which market the emergency of worldwide trend of protection and guarantee of
certain basic human rights, stipulates in Article 5 that "No one shall be
subjected to torture or to curel, inhuman or degrading treatment or
punishment." Despite the pious declaration, the crime continues unabated,
though every civilised nation shows its concern and takes steps for its
eradication.
In England, torture was once regarded as a normal
practice to ger information regarding the crime, the accomplices and the case
property or to extract confessions, but with the development of common law and
more radical ideas imbibing human though and approach, such inhuman practices
were initially discouraged and eventually almost done away with , certain
aberrations here and there notwithstanding. The police powers of arrest,
detention and interrogation in England were examined in depth by Sir Cyril Philips
Committee- 'Report of a Royal Commission on Criminal Procedure' (command -
Paper 8092 of 1981). The report of the Royal Commission is, instructive. In
regard to the power of arrest, the Report recommended that the power to arrest
without a warrant must be related to and limited by the object to be served by
the arrest, namely, to prevent the suspect from destroying evidence or
interfering with witnesses or warning accomplices who have not yet been
arrested or where there is a good reason to suspect the repetition of the
offence and not to every case irrespective of the object sought to be achieved.
The Royal Commission suggested certain restrictions on
the power of arrest on the basis of the `necessity principle'. The Royal
commission said :
".... We recommend that detention upon arrest for a
offence should continue only on one or more of the following criteria :
(a) the person`s`s unwillingness to identify himself so
that summons may be served upon him;
(b) the need to prevent the continuation or repetition of
that offence;
(c) the need to protect the arrested person`s himself or
other persons or property;
(d) the need to secure or preserve evidence of or
relating to that offence or to obtain such evidence from the suspect by
questioning him; and
(e) the likelihood of the person`s failing to appear at
court to answer anycharge made against him." The Royal Commission also
suggested :
"To help to reduce the use of arrest we would also
propose the introduction here of a scheme that is used in Ontario enabling a
police officer to issue what is called an appearance notice. That procedure can
be used to obtain attendance at the police station without resorting to arrest
provided a power to arrest exists, for example to be finger printed or to
participate in an identification parade. It could also be extended to
attendance for interview at a time convenient both to the suspect and to the
police officer investigating the case...."
The power of arrest, interrogation and detention has now
been streamlined in England on the basis of the suggestions made by the Royal
Commission and incorporated in police and Criminal Evidence Act, 1984 and the
incidence of custodial violence has been minimised there to a very great
extent.
Fundamental rights occupy a place of pride in the India
Constitution. Article 21 provides "no person shall be deprived of his life
or personal liberty expect according to procedure established by law".
Personal liberty, thus, is a sacred and cherished right under the Constitution.
The expression "life of personal liberty" has been held to include
the right to live with human dignity and thus it would also include within
itself a guarantee against torture and assault by the State or its
functionaries. Article 22 guarantees protection against arrest and detention in
certain cases and declares that no person who is arrested shall be detained in
custody without being informed of the grounds of such arrest and the shall not
be denied the right to consult and defend himself by a legal practitioner of
his choice. Clause (2) of Article 22 directs that the person arrested and
detained in custody shall be produced before the nearest Magistrate within a
period of 24 hours of such arrest, excluding the time necessary for the journey
from the place of arrest to the court of the Magistrate. Article 20(3) of the
Constitution lays down that a person accused of an offence shall not be
compelled to be a witness against himself. These are some of the constitutional
safeguard provided to a person with a view to protect his personal liberty
against and unjustified assault by the State, In tune with the constitutional
guarantee a number statutory provisions also seek to project personal liberty,
dignity and basic human rights of the citizens. Chapter V. of Criminal Procedure
Code, 1973 deals with the powers of arrest of a person and the safeguard which
are required to be followed by the police to protect the interest of the
arrested person. Section 41, Cr. P.C. confers powers on any police officer to
arrest a person under the circumstances specified therein without any order or
a warrant of arrest from a Magistrate. Section 46 provides the method and
manner of arrest. Under this Section no formality is necessary while arresting
a person. Under Section 49, the police is not permitted to use more restraint
than is necessary to permitted to use more restraint than is necessary to
prevent the escape of the person. Section 50 enjoins every police officer
arresting any person without warrant to communicate to him the full particulars
of the offence for which he is arrested and the grounds for such arrest. The
police officer is further enjoined to inform the person arrested that he is
entitled to be released on bail and he may arrange for sureties in the event of
his arrest for a non-bailable offence. Section 56 contains a mandatory
provision requiring the police officer making an arrest without warrant to
produce the arrested person before a Magistrate without unnecessary delay and
Section 57 echoes Clause (2) of Article 22 of the Constituion of India. There
are some other provisions also like Section 53, 54 and 167 which are aimed at
affording procedural safeguards to a person arrested by the police. Whenever a
person dies in custody of the police, Section 176 requires the Magistrate to
hold and enquiry into the cause of death.
However, inspite of the constitutional and statutory
provisions aimed at safeguarding the personal liberty and life of a citizen,
growing incidence of torture and deaths in police custody has been a disturbing
factor. Experience shows that worst violations of human rights take place
during the course of investigation, when the police with a view to secure
evidence or confession often resorts to third degree methods including torture
and adopts techniques of screening arrest by either not recording the arrest or
describing the deprivation of liberty merely as a prolonged interrogation. A
reading of the morning newspapers almost everyday carrying reports of
dehumanising torture, assault, rape and death in custody of police or other
governmental agencies is indeed depressing. The increasing incidence of torture
and death in custody has assumed such alarming proportions that it is affecting
the creditibility of the Rule of Law and the administration of criminal justice
system. The community rightly feels perturbed. Society's cry for justice
becomes louder.
The Third Report of the National Police Commission in
India expressed its deep concern with custodial demoralising effect with
custodial torture was creating on the society as a whole. It made some very
useful suggestions. It suggested :
".......An arrest during the investigation of a
cognizable case may be considered justified in one or other of the following
circumstances :-
(1) The case involves a grave offence like murder,
dacoity, robbery, rape etc., and it is necessary to arrest the accused and
bring his movements under restraint to infuse confidence among the terror
stricken victims.
(ii) The accused is likely to abscond and evade the
processes of law.
(iii) The accused is given to violent behaviour and is
likely to commit further offences unless his movements are brought under
restraint.
(iv) The accused is a habitual offender and unless kept
in custody he is likely to commit similar offences again. It would be desirable
to insist through departmental instructions that a police officer making an
arrest should also record in the case diary the reasons for making the arrest,
thereby clarifying his conformity to the specified guidelines......"
The recommendations of the Police Commission (supra)
reflect the constitutional concomitants of the fundamental right to personal
liberty and freedom. These recommendations, however, have not acquired any
statutory status so far.
This Court in Joginder Kumar Vs. State [1994 (4) SCC,
260] (to which one of us, namely, Anand, J. was a party) considered the
dynamics of misuse of police power of arrest and opined :
"No arrest can be made because it is lawful for the
police officer to do so. The existence of the power of arrest is one thing. The
justification for the exercise of it is quite another...No. arrest should be
made without a reasonable satisfaction reached after some investigation about
the genuineness and bonafides of a complaint and a reasonable belief both as to
the person's complicity and even so as to the need to effect arrest. Denying
person his liberty is a serious matter."
Joginder Kumar's case (supra) involved arrest of a
practising lawyer who had bee called to the police station in connection with a
case under inquiry on 7.1.94. On not receiving any satisfactory account of his
whereabouts, the family member of the detained lawyer preferred a petition in
the nature of habeas corpus before this Court on 11.1.94 and in compliance with
the notice, the lawyer was produced on 14.1.94 before this court the police
version was that during 7.1.94 and 14.1.94 the lawyer was not in detention at
all but was only assisting the police to detect some cases. The detenue
asserted otherwise. This Court was not satisfied with the police version. It
was noticed that though as on that day the relief in habeas corpus petition
could not be granted but the questions whether there had been any need to
detain the lawyer for 5 days and if at all he was not in detention then why was
this Court not informed. Were important questions which required an answer.
Besides, if there was detention for 5 days, for what reason was he detained.
The Court' therefore, directed the District Judge, Ghaziabad to make a detailed
enquiry and submit his report within 4 weeks. The Court voiced its concern
regarding complaints of violations of human rights during and after arrest. It
said:
"The horizon of human rights is expanding. at the
same time, the crime rate is also increasing, Of late, this Court has been
receiving complaints about violations of human rights because of indiscriminate
arrests. How are we to strike a balance between the two?
................................... A realistic approach
should be made in this direction. The law of arrest is one of balancing
individual rights, liberties and privileges, on the one hand, and individual
duties, obligations weighing and balancing the rights, liberties and privileges
of he single individual and those of individuals collectively; of simply deciding
what is wanted and where to put the weight and the emphasis; of deciding with
comes first-the criminal or society, the law violator or the abider....."
This Court then set down certain procedural
"requirements" in cases of arrest.
Custodial death is perhaps one of the worst crimes in a
civilised society governed by the Rule of Law. The rights inherent in Articles
21 and 22(1) of the Constitution required to be jealously and scrupulously
protected. We cannot wish away the problem. Any form of torture of cruel,
inhuman or degrading treatment would fall within the inhibition of Article 21
of the Constitution, whether it occurs during investigation, interrogation or
otherwise. If the functionaries of the Government become law breakers, it is
bound to breed contempt for law and would encourage lawlessness and every man
would have the tendency to become law unto himself thereby leading to
anarchanism. No civilised nation can permit that tp happen. Does a citizen shed
off his fundamental right to life, the moment a policeman arrests him? Can the
right to life of a citizen be put in abeyance on his arrest? These questions
touch the spinal court of human rights jurisprudence. The answer, indeed, has
to be an emphatic 'No'. The precious right guaranteed by Article 21 of the
Constitution of India cannot be denied to convicted undertrials, detenues and
other prisoners in custody, except according to the procedure established by
law by placing such reasonable restrictions as are permitted by law.
In Neelabati Bahera Vs. State of Orissa [1993 (2) SCC,
746], (to which Anand, J. was a party) this Court pointed out that prisoners
and detenues are not denuded of their fundamental rights under Article 21 and
it is only such restrictions as are permitted by law, which can be imposed on
the enjoyment of the fundamental rights of the arrestees and detenues. It was
observed :
"It is axiomatic that convicts, prisoners or
undertrials are not denuded of their fundamental rights under Article 21 and
its is only such restrictions, as are permitted by law, which can be imposed on
the enjoyment of the fundamental right by such persons. It is an obligation of
the State to ensure that there is no infringement of the indefeasible rights of
a citizen o life, except in accordance with law, while the citizen is in its
custody. The precious right guaranteed by Article 21 of the constitution of
India cannot be denied to convicts, undertrials or other prisoners in custody,
expect according to procedure established by law. There is a great responsibility
on the police or prison authorities to ensure that the citizen in its custody
is not deprived of his right to life. His liberty is in the very nature of
things circumscribed by the very fact of his confinement and therefore his
interest in the limited liberty left to him is rather precious. The duty of
care on the part of the State is responsible if the person in custody of the
police is deprived of his life except according to the procedure established by
law.
Instances have come to out notice were the police has
arrested a person without warrant in connection with the investigation of an
offence, without recording the arrest, and the arrest person has been subjected
to torture to extract information from him for the purpose of further
investigation or for recovery of case property or for extracting confession
etc. The torture and injury caused on the body of the arrestee has sometime
resulted into his death. Death in custody is not generally shown in the records
of the lock-up and every effort is made by the police to dispose of the body or
to make out a case that the arrested person died after he was released from
custody. Any complaint against such torture or death is generally not given any
attention by the police officers because of ties of brotherhood. No first
information report at the instance of the victim or his kith and kin is
generally entertained and even the higher police officers turn a blind eye to
such complaints. Even where a formal prosecution is launched by the victim or
his kith and kin, no direct evidence is available to substantiate the charge of
torture or causing hurt resulting into death as the police lock-up where
generally torture or injury is caused is away from the public gaze and the
witnesses are either police men or co- prisoners who are highly reluctant to
appear as prosecution witness due to fear of letaliation by the superior
officers of the police. It is often seen that when a complaint is made against
torture, death or injury, in police custody, it is difficult to secure evidence
against the policemen responsible for resorting to third degree methods since
they are incharge of police station records which they do not find difficult to
manipulate. Consequently, prosecution against the delinquent officers generally
results in acquittal. State of Madhya Pradesh Vs. Shyamsunder Trivedi &
Ors. [ 1995 (3) Scale, 343 =] is an apt case illustrative of the observations
made by us above. In that case, Nathu Bnjara was tortured at police station,
Rampura during the interrogation. As a result of extensive injuries caused to
him he died in police custody at the police station. The defence set up by the
respondent police officials at the trial was that Nathu Banjara had been
released from police custody at about 10.30 p.m. after interrogation 13.10.1986
itself vide entry EX. P/22A in the Roznamcha and that at about 7.00 a.m. on
14.10.1981, a death report Ex. P/9 was recorded at the police station, Rampura,
at the instance of Ramesh respondent No. 6, to the effect that he had found "one
unknown person" near a tree by the side of the tank riggling with pain in
his chest and that as a soon as respondent No. 6 reached near him, the said
person died. The further case set up by SI Trivedi, respondent No. 1, incharge
of the police station was that after making a Roznamcha entry at 7.00 a.m.
about his departure from the police station he (respondent No. 1- Shyamsunder
Trivedi) and Constable Rajaram respondent proceeded to the spot where the dead
body was stated to be lying for conducting investigation under Section 174
Cr.P.C. He summoned Ramesh Chandra and Goverdhan respondents to the spot and in
their presence prepared a panchnama EX. P/27 of the dead body recording the
opinion therein to the effect that no definite cause of death was known.
The First Additional Sessions Judge acquitted all the
respondents of all the charges holding that there was no direct evidence to
connect the respondents with the crime. The State of Madhya Pradesh went up in
appeal against the order of acquittal and the High Court maintained the
acquittal of respondents 2 to 7 but set aside the acquittal of respondent No.
1, Shyamsunder Trivedi for offences under Section 218, 201 and 342 IPC. His
acquittal for the offences under Section 302/149 and 147 IPC was, however, maintained.
The State filed an appeal in this court by special leave. This Court found that
the following circumstances have been established by the prosecution beyond
every reasonable doubt and coupled with the direct evidence of PWs 1, 3, 4, 8
and 18 those circumstances were consistent only with the hypothesis of the
quilt of the respondents and were inconsistent with their innocence :
(a) that the deceased had been brought alive to the
police station ad was last seen alive there on 13.10.81;
(b) That the dead body of the deceased was taken out of
the police station on 14.1.81 at about 2 p.m. for being removed to the
hospital;
(c) that SI Trivedi respondent No. 1, Ram Naresh shukla,
Respondent and Ganiuddin respondent No. 5 were present at the police station
and had all joined hands to dispose of the dead body of Nathu-Banjara:
(d) That SI Trivedi, respondent No. 1 created false
evidence and fabricated false clues in the shape of documentary evidence with a
view to screen the offence and for that matter, the offender:
(e) SI Trivedi respondent in connivance with some of his
subordinates, respondents herein had taken steps to cremate the dead body in
haste describing the deceased as a 'lavaris' though the identity of the
deceased, when they had interrogated for a sufficient long time was well known
to them. and opined that:
"The observations of the High Court that the
presence and participation of these respondents in the crime is doubtful are
not borne out from the evidence on the record and appear to be an unrealistic
over simplification of the tell tale circumstances established by the
prosecution."
One of us (namely, Anand, J.) speaking for the Court went
on to observe :
"The trial court and the High Court, if we may say
so with respect, exhibited a total lack of sensitivity and a 'could not
careless' attitude in appreciating the evidence on the record and thereby
condoning the barbarous there degree methods which are still being used, at
some police stations, despite being illegal. The exaggerated adherence to and
insistence upon the establishment of proof beyond every reasonable doubt, by
the prosecution, ignoring the ground realities, the fact situations and the
peculiar circumstances of a given case, as in the present case, often results
in miscarriage of justice and makes the justice delivery system a suspect. In
the ultimate analysis the society suffers and a criminal gets encouraged.
Tortures in police custody, which of late are on the increase, receive
encouragement by this type of an unrealistic approach of the Courts because it
reinforces the belief in the mind of the police that no harm would come to them
if an odd prisoner dies in the lock-up, because there would hardly be and
evidence available to the prosecution to directly implicate them with the
torture. The Courts, must not loose sight of the fact that death in police
custody is perhaps on of the worst kind of crime in a a civilised society,
governed by the rule of law and poses a serious thereat to an orderly civilised
society."
This Court then suggested : "The Courts are also
required to have a change in their outlook and attitude, particularly in cases
involving custodial crimes and they should exhibit more sensitivity and adopt a
realistic rather than a narrow technical approach, while dealing with the case
of custodial crime so that as far as possible within their powers, the guilty
should not escape so that the victim of crime has the satisfaction that
ultimately the Majesty of Law has prevailed."
The State appeal was allowed and the acquittal of
respondents 1, 3, 4 and 5 was set aside. The respondents were convicted for
various offences including the offence under Section 304 Part II/34 IPC and sentenced to various terms of imprisonment and fine
ranging from Rs. 20,000/- to Rs.. 50,000/-. The fine was directed to be paid to
the heirs of Nathu Banjara by way of compensation. It was further directed :
"The Trial Court shall ensure, in case the fine is
deposited by the accused respondents, that the payment of the same is made to
the heirs of deceased Nathu Banjara, and the Court shall take all such
precautions as are necessary to see that the money is not allowed to fall into
wrong hands and is utilised for the benefit of the members of the family of the
deceased Nathu Banjara, and if found practical by deposit in nationalised Bank
or post office on such terms as the Trial Court may in consultation with the
heirs for the deceased consider fit and proper."
It needs no emphasis to say that when the crime goes
unpunished, the criminals are encouraged and the society suffers. The victim of
crime or his kith and kin become frustrated and contempt for law develops. It
was considering these aspects that the Law Commission in its 113th Report recommended
the insertion of Section 114B in the Indian Evidence Act. The Law Commission
recommended in its 113th Report that in prosecution of a police officer for an
alleged offence of having caused bodily injury to a person, if there was
evidence that the injury was caused during the period when the person was in
the custody of the police, the Court may presume that the injury was caused by
the police officer having the custody of the person during that period. The
Commission further recommended that the court, while considering the question
of presumption, should have regard to all relevant circumstances including the
period of custody statement made by the victim, medical evidence and the
evidence with the Magistrate may have recorded. Change of burden of proof was,
thus, advocated. In sham Sunder Trivedi's case (supra) this Court also
expressed the hope that the Government and the legislature would give serious
thought to the recommendation of the Law Commission. Unfortunately, the
suggested amendment, has not been incorporated in the statute so far. The need
of amendment requires no emphasis - sharp rise i custodial violence, torture
and death in custody, justifies the urgency for the amendment and we invite
Parliament's attention to it.
Police is, no doubt, under a legal duty and has
legitimate right to arrest a criminal and to interrogate him during the
investigation of a an offence but it must be remembered that the law does not
permit use of third degree methods or torture of accused in custody during interrogation
and investigation with that view to solve the crime. End cannot justify the
means. The interrogation and investigation into a crime should be in true sense
purpose full to make the investigation effective. By torturing a person and
using their degree methods, the police would be accomplishing behind the closed
doors what the demands of our legal order forbid. No. society can permit it.
How do we check the abuse of police power? Transparency
of action and accountability perhaps are tow possible safeguards which this
Court must insist upon. Attention is also required to be paid to properly
develop work culture, training and orientation of police force consistent with
basic human values. Training methodology of the police needs restructuring. The
force needs to be infused with basic human values and made sensitive to the
constitutional ethos. Efforts must be made to change the attitude and approach
of the police personal handling investigations so that they do not sacrifice
basic human values during interrogation and do not resort to questionable form
of interrogation. With a view to bring in transparency, the presence of the
counsel of the arrestee at some point of time during the interrogation may
deter the police from using third degree methods during interrogation.
Apart from the police, there are several other
governmental authorities also like Directorate of Revenue Intelligence,
Directorate of Enforcement, Costal Guard, Central Reserve Police Force (CRPF),
Border Security Force (BSF), the Central Industrial Security Force (CISF), the
State Armed Police, Intelligence Agencies like the Intelligence Bureau, R.A.W,
Central Bureau of Investigation (CBI) , CID, Tariff Police, Mounted Police and
ITBP which have the power to detain a person and to interrogated him in
connection with the investigation of economic offences, offences under the
Essential Commodities Act, Excise and Customs Act. Foreign Exchange Regulation
Act etc. There are instances of torture and death in custody of these
authorities as well, In re Death of Sawinder Singh Grover [1995 Supp (4) SCC,
450], (to which Kuldip Singh, j. was a party) this Court took suo moto notice
of the death of Sawinder Singh Grover during his custody with the Directorate
of Enforcement. After getting an enquiry conducted by the additional District
Judge, which disclosed a prima facie case for investigation and prosecution,
this Court directed the CBI to lodge a FIR and initiate criminal proceeding
against all persons named in the report of the Additional District Judge and
proceed against them. The Union of India/Directorate of Enforcement was also
directed to pay sum of Rs. 2 lacs to the widow of the deceased by was of the
relevant provisions of law to protect the interest of arrested persons in such
cases too is a genuine need.
There is one other aspect also which needs out
consideration, We are conscious of the fact that the police in India have to
perform a difficult and delicate task, particularly in view of the
deteriorating law and order situation, communal riots, political turmoil,
student unrest, terrorist activities, and among others the increasing number of
underworld and armed gangs and criminals, Many hard core criminals like
extremist, the terrorists, drug peddlers, smugglers who have organised gangs,
have taken strong roots in the society. It is being said in certain quarters
that with more and more liberalisation and enforcement of fundamental rights,
it would lead to difficulties in the detection of crimes committed by such
categories of hardened criminals by soft peddling interrogation. It is felt in
those quarters that if we lay to much of emphasis on protection of their
fundamental rights and human rights such criminals may go scot-free without
exposing any element or iota or criminality with the result, the crime would go
unpunished and in the ultimate analysis the society would suffer. The concern
is genuine and the problem is real. To deal with such a situation, a balanced
approach is needed to meet the ends of justice. This all the more so, in view
of the expectation of the society that police must deal with the criminals in
an efficient and effective manner and bring to book those who are involved in
the crime. The cure cannot, however, be worst than the disease itself.
The response of the American supreme Court to such an
issue in Miranda Vs. Arizona, 384 US 436 is instructive. The Court said :
"A recurrent argument, made in these cases is that
society's need for interrogation out-weighs the privilege. This argument is not
unfamiliar to this Court. See. e.g. Chambers v. Florida, 309 US 227, 240-41, 84
L ed 716, 724, 60 S Ct 472 (1940). The whose thrust of out foregoing discussion
demonstrates that the Constitution has prescribed the rights of the individual
when confronted with the power of Government when it provided in the Fifth
Amendment that an individual cannot be compelled to be a witness against
himself. That right cannot be abridged. "
(Emphasis ours) There can be no gain saying that freedom
of an individual must yield to the security of the State. The right of
preventive detention of individuals in the interest of security of the State in
various situations prescribed under different statures has been upheld by the
Courts. The right to interrogate the detenues, culprits or arrestees in the
interest of the nation, must take precedence over an individual's right to
personal liberty. The latin maxim salus populi est supreme lex (the safety of
the people is the supreme law) and salus republicae est suprema lex (safety of
the state is the supreme law) co-exist an dare not only important and relevant
but lie at the heart of the doctrine that the welfare of an individual must
yield to that of the community. The action of the State, however must be
"right, just and fair". Using any form of torture for extracting any
kind of information would neither be 'right nor just nor fair' and, therefore,
would be impermissible, being offensive to Article 21. Such a crime-suspect
must be interrogated - indeed subjected to sustained and scientific interrogation
determined in accordance with the provisions of law. He cannot, however, be
tortured or subjected to third degree methods or eleminated with a view to
elicit information, extract confession or drive knowledge about his
accomplices, weapons etc. His Constitutional right cannot be abridged except in
the manner permitted by law, though in the very nature of things there would be
qualitative difference in the methods of interrogation of such a person as
compared to an ordinary criminal. Challenge of terrorism must be met wit
innovative ideas and approach. State terrorism is not answer to combat
terrorism. State terrorism is no answer to combat terrorism. State terrorism
would only provide legitimacy to 'terrorism'. That would be bad for the State,
the community and above all for the Rule of Law. The State must, therefore,
ensure that various agencies deployed by it for combating terrorism act within
the bounds of law and not become law unto themselves. that the terrorist has
violated human rights of innocent citizens may render him liable for punishment
but it cannot justify the violation of this human rights expect in the manner
permitted by law. Need, therefore, is to develop scientific methods of
investigation and train the investigators properly to interrogate to meet the
challenge.
In addition to the statutory and constitutional
requirements to which we have made a reference, we are of the view that it
would be useful and effective to structure appropriate machinery for
contemporaneous recording and notification of all cases of arrest and detention
to bring in transparency and accountability. It is desirable that the officer
arresting a person should prepare a memo of his arrest on witness who may be a
member of the family of the arrestee or a respectable person of the locality
from where the arrest is made. The date and time of arrest shall be recorded in
The memo which must also be counter signed by The arrestee.
We therefore, consider it appropriate to issue the
following requirements to be followed in all cases of arrest or detention till
legal provisions are made in that behalf as preventive measures :
(1) The police personnel carrying out the arrest and
handling the interrogation of the arrestee should bear accurate, visible and
clear identification and name togs with their designations. The particulars of
all such police personnel who handle interrogation of the arrestee must be
recorded in a register.
(2) That the police officer carrying out the arrest of
the arrestee shall prepare a memo of arrest at the time of arrest a such memo
shall be attested by atleast one witness. who may be either a member of the
family of the arrestee or a respectable person of the locality from where the
arrest is made. It shall also be counter signed by the arrestee and shall
contain the time and date of arrest. (3) A person who has been arrested or
detained and is being held in custody in a police station or interrogation
centre or other lock-up, shall be entitled to have one friend or relative or
other person known to him or having interest in his welfare being informed, as
soon as practicable, that he has been arrested and is being detained at the
particular place, unless the attesting witness of the memo of arrest is himself
such a friend or a relative of the arrestee. (4) The time, place of arrest and
venue of custody of an arrestee must be notified by the police where the next
friend or relative of the arrestee lives outside the district or town through
the legal Aid Organisation in the District and the police station of the area
concerned telegraphically within a period of 8 to 12 hours after the arrest.
(5) The person arrested must be made aware of this right
to have someone informed of his arrest or detention as soon he is put under
arrest or is detained.
(6) An entry must be made in the diary at the place of
detention regarding the arrest of the person which shall also disclose the name
of he next friend of the person who has been informed of the arrest an the
names and particulars of the police officials in whose custody the arrestee is.
(7) The arrestee should, where he so requests, be also examined at the time of
his arrest and major and minor injuries, if any present on his/her body, must
be recorded at that time. The "Inspection Memo" must be signed both
by the arrestee and the police officer effecting the arrest and its copy
provided to the arrestee.
(8) The arrestee should be subjected to medical
examination by trained doctor every 48 hours during his detention in custody by
a doctor on the panel of approved doctors appointed by Director, Health
Services of the concerned Stare or Union Territory. Director, Health Services
should prepare such a penal for all Tehsils and Districts as well. (9) Copies
of all the documents including the memo of arrest, referred to above, should be
sent to the illaga Magistrate for his record.
(10) The arrestee may be permitted to meet his lawyer
during interrogation, though not throughout the interrogation. (11) A police
control room should be provided at all district and state headquarters, where
information regarding the arrest and the place of custody of the arrestee shall
be communicated by the officer causing the arrest, within 12 hours of effecting
the arrest and at the police control room it should be displayed on a conspicuous
notice board.
Failure to comply with the requirements hereinabove
mentioned shall apart from rendering the concerned official liable for
departmental action, also render his liable to be punished for contempt of
court and the proceedings for contempt of court may be instituted in any High
Court of the country, having territorial jurisdiction over the matter.
The requirements, referred to above flow from Articles 21
and 22 (1) of the Constitution and need to be strictly followed. These would
apply with equal force to the other governmental agencies also to which a
reference has been made earlier.
These requirements are in addition to the constitutional
and statutory safeguards and do not detract from various other directions given
by the courts from time to time in connection with the safeguarding of the
rights and dignity of the arrestee.
The requirements mentioned above shall be forwarded to
the Director General of Police and the Home Secretary of every Stare/Union
Territory and it shall be their obligation to circulate the same to every
police station under their charge and get the same notified at every police
station at conspicuous place. It would also be useful and serve larger interest
to broadcast the requirements on the All India Radio besides being shown on the
National network of Doordarshan and by publishing and distributing pamphlets in
the local language containing these requirements for information of the general
public. Creating awareness about the rights of the arrestee would in out opinion
be a step in the right direction to combat the evil of custodial crime and
bring in transparency and accountability. It is hoped that these requirements
would help to curb, if not totally eliminate, the use of questionable methods
during interrogation and investigation leading to custodial commission of
crimes.
PUNITIVE MEASURES UBI JUS IBI REMEDIUM - There is no
wrong without a remedy. The law will that in every case where man is wronged
and undamaged he must have a remedy. A mere declaration of invalidity of an
action or finding of custodial violence or death in lock-up does not by itself
provide any meaningful remedy to a person whose fundamental right to life has
been infringed. Much more needs to be done.
Some punitive provisions are contained in the Indian
Penal Code which seek to punish violation of right to life. Section 220
provides for punishment to an officer or authority who detains or keeps a
person in confinement with a corrupt or malicious motive. Section 330 and 331
provide for punishment of those who inflict injury of grievous hurt on a person
to extort confession or information in regard to commission of an offence.
Illustration (a) and (b) to Section 330 make a police officer guilty of
torturing a person in order to induce him to confess the commission of a crime
or to induce him to confess the commission of a crime or to induce him to point
out places where stolen property is deposited. Section 330, therefore, directly
makes torture during interrogation and investigation punishable under the
Indian Penal Code. These Statutory provisions are, However, inadequate to
repair the wrong done to the citizen. Prosecution of the offender is an
obligation of the State in case of every crime but the victim of crime needs to
be compensated monetarily also. The Court, where the infringement of the
fundamental right is established, therefore, cannot stop by giving a mere
declaration. It must proceed further and give compensatory relief, nor by way
of damages as in a civil action but by way of compensation under the public law
jurisdiction for the wrong done, due to breach of public duty by the State of
not protecting the fundamental right to life of the citizen. To repair the
wrong done and give judicial redress for legal injury is a compulsion of judicial
conscience.
Article 9(5) of the International convent on civil and
Political Rights, 1966 (ICCPR) provides that "anyone who has been the
victim of unlawful arrest or detention shall have enforceable right to
compensation". of course, the Government of India as the time of its
ratification (of ICCPR) in 1979 had made a specific reservation to the effect
that the Indian legal system does not recognise a right to compensation for
victims of unlawful arrest or detention and thus did not become party to the
Convent. That reservation, however, has now lost its relevance in view of the
law laid down by this Court in number of cases awarding compensation for the
infringement of the fundamental right to life of a citizen. (See with advantage
Rudal Shah Vs. State of Bihar [ 1983 (4) SCC, 141 ]: Sebastian M. Hongrey Vs.
Union of India [ 1984 (3) SCC, 339] and 1984 (3) SCC, 82]; Bhim Singh Vs State
of J & K [1984 (Supp) SCC, 504 and 1985 (4) SCC, 677] Saheli Vs.
Commissioner of Police. Delhi [1990 (1) SCC 422]}. There is indeed no express
provision in the Constitution of India for grant of compensation for violation
of a fundamental right to life, nonetheless, this Court has judicially evolved
a right o compensation in cases of established unconstitutional deprivation of
person liberty or life. [See : Nilabati Bahara Vs. State (Supra)] Till about
tow decades ago the liability of the government for tortious act of its public
servants as generally limited and the person affected could enforce his right
in tort by filing a civil suit and there again the defence of sovereign
immunity was allowed to have its play. For the violation of the fundamental
right to life or the basic human rights, however, this Court has taken the view
that the defence of sovereign immunity is not available to the State for the
tortious act of the public servants and for the established violation of the
rights guaranteed by Article 21 of the Constitution of India. In Nilabati
Behera Vs. State (supra) the decision of this Court in Kasturi Lal Ralia Ram
Jain Vs. State of U.P. [1965 (1) SCR, 375] wherein the plea of sovereign
immunity had been upheld in a case of vicarious liability of the State for the
tort committed by its employees was explained thus:
"In this Context, it is sufficient to say that the
decision of this Court in Kasturilal upholding the State's plea of sovereign
immunity for tortious acts of its servants is confined to the sphere of
liability in tort, which is distinct from the State's liability for
contravention of fundamental rights to which the doctrine of sovereign immunity
has no application in the constitutional remedy under Articles 32 and 226 of
the Constitution which enables award of compensation for contravention of
fundamental rights, when the only practicable mode of enforcement of the
fundamental rights can be the award of compensation. The decisions of this
court in Rudul Sah and others in that line relate to award of compensation for
contravention of fundamental rights, in the constitutional remedy upon Articles
32 and 226 of the Constitution, On the other hand, Kasturilal related to the
value of goods seized and not returned to the owner due to the fault of
government Servants, the claim being of damages of the tort of conversion under
the ordinary process, and not a claim for compensation for violation of
fundamental rights. Kasturilal is, therefore, inapplicable in this context and
distinguishable."
The claim in public law for compensation for
unconstitutional deprivation of fundamental right to life and liberty, the protection
of which is guaranteed under the Constitution, is a claim based on strict
liability and is in addition to the claim available in private law for damages
of tortious acts of the public servants. Public law proceedings serve a
different purpose than the private law proceedings. Award of compensation for
established infringement of the indefeasible rights guaranteed under Article 21
of the Constitutions is remedy available in public law since the purpose of
public law is not only to civilise public power but also to assure the citizens
that they live under a legal system wherein their rights and interests shall be
protected and preserved. Grant of compensation in proceedings under Article 32
or 226 of the Constitution of India for the established violation or the
fundamental rights guaranteed under Article 21, is an exercise of the Courts
under the public law jurisdiction for penalising the wrong door and fixing the
liability for the public wrong on the State which failed in the discharge of
its public duty to protect the fundamental rights of the citizen.
The old doctrine of only relegating the aggrieved to the
remedies available in civil law limits the role of the courts too much, as the
protector and custodian of the indefeasible rights of the citizens. The courts
have the obligation to satisfy the social aspirations of the citizens because
the court and the law are for the people and expected to respond to their
aspirations. A Court of law cannot close its consciousness and aliveness to
stark realities. Mere punishment of the offender cannot give much solace to the
family of the victim - civil action for damage is a long drawn and cumber some
judicial process. Monetary compensation for redressal by the Court finding the
infringement of the indefeasible right to life of the citizen is, therefore,
useful and at times perhaps the only effective remedy to apply balm to the
wounds of the family members of the deceased victim. Who may have been the
bread winner of the family.
In Nilabati Bahera's case (supra), it was held:
"Adverting to the grant of relief to the heirs of a victim of custodial
death for the infraction or invasion of his rights guaranteed under Article 21
of the Constitution of India, it is not always enough to relegate him to the ordinary
remedy of a civil suit to claim damages for the tortious act of the State as
that remedy in private law indeed is available to the aggrieved party. The
citizen complaining of the infringement of the indefeasible right under Article
21 of the constitution cannot be told that for the established violation of the
fundamental right to life he cannot get any relief under the public law by the
courts exercising Writ jurisdiction, The primary source of the public law
proceedings stems from the prerogative writs and the courts have therefore, to
evolve ' new tools' to give relief in public law by moulding it according to
the situation with a view to preserve and protect the Rule of Law. While
concluding his first Hamlyn Lecture in 1949 under the title "freedom under
the Law" Lord Denning in his own style warned :
No one ca suppose that the executive will never be guilty
the of the sins that are common to all of us. Your may be sure that they will
sometimes to things which they ought to do : and will not do things that they
ought to do. But if and when wrongs are thereby suffered by any of us what is
the remedy? Our procedure for securing our personal freedom is efficient, out
procedure for preventing the abuse of power is not. Just as the pick and shovel
is no longer suitable for the winning of coal, so also the procedure of
mandamus, certiorari and actions on the case are not suitable for the winning
or freedom in the new age. They must be replaced by new and up-to date
machinery by declarations, injunctions and actions for negligence... This is
not the task of Parliament... the courts must do this. Of all the great tasks
that lie ahead this is the greatest.
Properly exercised the new powers of the executive lead
to the welfare state : but abused they lead to a totalitarian state. None such
must ever be allowed in this country."
A similar approach of redressing the wrong by award of
monetary compensation against the State for its failure to protect the
fundamental rights of the citizen has been adopted by the Courts of Ireland,
which has a written constitution, guaranteeing fundamental rights, but which
also like the Indian Constitution contains no provision of remedy for the
infringement of those rights. That has, however, not prevented the Court in
Ireland from developing remedies, including the award of damages, not only
against individuals guilty of infringement, but against the State itself.
The informative and educative observations of O' Dalaigh
CJ in The State (At the Prosecution of Quinn) v. Ryan [1965] IR 70 (122)
deserve special notice. The Learned Chief Justice said:
"It was not the intention of the Constitution in
guaranteeing the fundamental rights of the citizen that these rights should be
set at nought or circumvented. The intention was that rights of substances were
being assured to the individual and that the Courts were the custodians of
those rights. As a necessary corollary, it follows that no one can with
impunity set these rights at nought of circumvent them, and that the Court's
powers in this regard are as ample as the defence of the Constitution
require."
(Emphasis supplied) In Byrne v. Ireland [1972] IR 241,
Walsh J opined at p 264:
"In several parts in the Constitution duties to make
certain provisions for the benefit of the citizens are imposed on the State in
terms which bestow rights upon the citizens and, unless some contrary provision
appears in the Constitution, the Constitution must be deemed toe have created a
remedy for the enforcement of these rights. It follows that, where the right is
one guaranteed by the State. It is against the State that the remedy must be
sought it there has been a failure to discharge the constitutional obligation
impose"
(Emphasis supplied) In Maharaj Vs. Attorney General of
Trinidad and Tobago [ (1978) 2 All E.R. 670]. The Privy Council while
interpreting Section 6 of the Constitution of Trinidad and Tobago held that
though not expressly provided therein, it permitted an order for monetary
compensation, by way of 'redress' for contravention of the basic human rights
and fundamental freedoms. Lord Diplock speaking for the majority said:
"It was argued on behalf of the Attorney General
that Section 6(2) does not permit of an order for monetary compensation despite
the fact that this kind of redress was ordered in Jaundoo v. Attorney General
of Guyana. Reliance was placed on the reference in the sub- section to
'enforcing, or securing the enforcement of, any of the provisions of the said
foregoing sections' as the purpose for which orders etc. could be made. An
order for payment of compensation, it was submitted, did not amount to the
enforcement of the rights that had been contravened. In their Lordships' view
of order for payment of compensation when a right protected under Section 1
'has been' contravened is clearly a form of 'redress' which a person is
entitled to claim under Section 6 (1) and may well be any only practicable form
of redress, as by now it is in the instant case. The jurisdiction to make such
an order is conferred on the High Court by para (a) of Section 6(2), viz.
jurisdiction 'to here and determine any application made by any person in
pursuance of sub-section (1) of this section'. The very wide power to make
orders, issue writs and give directions are ancillary to this."
Lord diplock then went on to observe ( at page 680) :
"Finally, their Lordships would say something about the measure of
monetary compensation recoverable under Section 6 where the contravention of
the claimant's constitutional rights consists of deprivation of liberty otherwise
that by due process of law. The claim is not a claim in private law for damages
for the tort of false imprisonment, under which the damages recoverable are at
large and would include damages for loss of reputation. IT is a claim in public
law for compensation for deprivation of liberty alone."
In Simpson was, Attorney General [ Baigent's case ] (1994
NZLR, 667) the Court of Appeal in NewZealand dealt with the issue in a very
elaborate manner by reference to a catena of authorities from different jurisdictions.
It considered the applicability of the doctrine of vicarious liability for
torts, like unlawful search, committed by the police officials which violate
the New Zealand Bill of Rights Act, 1990. While dealing with the enforcement of
rights and freedoms as guaranteed by the Bill of Rights for which no specific
remedy was provided. Hardie Boys, J. observed :
"The New Zealand Bill of Rights Act, unless it is to
be no more that an empty statement, is a commitment by the Crown that those who
in the three branches of the government exercise its functions, powers and
duties will observe the rights hat the Bill affirms. it is I consider implicit
in that commitment, indeed essential to its worth, that the Courts are not only
to observe the Bill in the discharge of their own duties but are able to grant
appropriate ad effective remedies where rights have been infringed. I see no
reason to think that this should depend on the terms of a written constitution.
Enjoyment of the basic human rights are the entitlement of every citizen, and
their protection the obligation of every civilised state. They are inherent in
and essential to the structure of society. They do not depend on the legal or
constitutional form in which they are declared. the reasoning that has led the
Privy Council and the Courts of Ireland and India to the conclusions reached in
the cases to which I have referred (and they are but a sample) is in my opinion
equally valid to the New Zealand Bill of Rights Act if it is to have life and
meaning." (Emphasis supplied) The Court of appeal relied upon the judgment
of the Irish Courts, the Privy Council and referred to the law laid down in
Nilabati Behera Vs. State (supra) thus:
"Another valuable authority comes from India, Where
the constitution empowers the Supreme Court to enforce rights guaranteed under
it. In Nilabati Bahera V. State of Orissa (1993) Cri. LJ 2899, the Supreme
Court awarded damages against the Stare to the mother of a young man beaten to
death in police custody. The Court held that its power of enforcement imposed a
duty to "forge new tools", of which compensation was an appropriate
on where that was the only mode of redress available. This Was not a remedy in
tort, but one in public law based on strict liability for the contravention of
fundamental rights to which the principle of sovereign immunity does not apply.
These observations of Anand, J. at P 2912 may be noted.
The old doctrine of only relegating the aggrieved to the
remedies available in civil law limits the role of the courts too much as
protector and guarantor of the indefeasible rights of the citizens. The courts
have the obligation to satisfy the social aspirations of the citizens because
the courts and the law are for the people and expected to respond to their
aspirations. The purpose of public law is not only to civilize public that they
live under a legal system which aims to protect their interest and preserve
their rights."
Each the five members of the Court of Appeal in Simpson's
case (supra) delivered a separate judgment but there was unanimity of opinion
regarding the grant of pecuniary compensation to the victim, for the
contravention of his rights guaranteed under the Bill of Rights Act,
notwithstanding the absence of an express provision in that behalf in the Bill
of Rights Act.
Thus, to sum up, it is now a well accepted proposition in
most of the jurisdictions, that monetary or pecuniary compensation is an
appropriate and indeed an effective and sometimes perhaps the only suitable
remedy for redressal of the established infringement of the fundamental right
to life of a citizen by the public servants and the State is vicariously liable
for their acts. The claim of the citizen is based on the principle of strict
liability to which the defence of sovereign immunity is nor available and the
citizen must revive the amount of compensation from the State, which shall have
the right to be indemnified by the wrong doer. In the assessment of
compensation, the emphasis has to be on the compensatory and not on punitive
element. The objective is to apply balm to the wounds and not to punish the
transgressor or the offender, as awarding appropriate punishment for the
offender, as awarding appropriate punishment for the offence (irrespective of
compensation) must be left to the criminal courts in which the offender is
prosecuted, which the State, in law, is duty bound to do, That award of
compensation in the public law jurisdiction is also without prejudice to any
other action like civil suit for damages which is lawfully available to the
victim or the heirs of the deceased victim with respect to the same matter for
the tortious act committed by the functionaries of the State. The quantum of
compensation will. of course, depend upon the peculiar facts of each case and
no strait jacket formula can be evolved in that behalf. The relief to redress
the wrong for the established invasion of the fundamental rights of the
citizen, under he public law jurisdiction is, in addition to the traditional
remedies and not it derrogation of them. The amount of compensation as awarded
by the Court and paid by the State to redress The wrong done, may in a given
case , be adjusted against any amount which may be awarded to the claimant by
way of damages in a civil suit.
Before parting with this judgment we wish to place on
record our appreciation for the learned counsel appearing for the States in
general and Dr. A.M. Singhvi, learned senior counsel who assisted the Court
amicus curiae in particular for the valuable assistances rendered by them. (Soures
: http://indiankanoon.org/doc/501198/)
আদালত জাগ্রত ! মানবাধিকার কমিশন জাগ্রত ! তবুও পুলিশ পুলিশই আছে। পুলিশই বিচারক, পুলিশই দণ্ডদাতা, পুলিশই হত্যাকারী। সারা পৃথিবী জুড়ে কত যে হাজার হাজার নিরীহ অসহায় মানুষের মৃত্যু হয় শুধুমাত্র পুলিশের গুলিতে, তার হিসাব কে রেখেছে !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন