---চক্কোত্তি, চক্কোত্তিদা-আ-আ-আ-আ-আ।
আমার কণ্ঠ শুনে চক্কোত্তি স্ট্যাচু। আমার কণ্ঠস্বরকে ও একটু বেশিই ভয় পায়। কাছে এগিয়ে গেলাম।জিজ্ঞ্যেস করলাম --- কোথায় যাচ্ছ সক্কাল সক্কাল ?
--- যজমানের বাড়ি। বিয়ের কাজ আছে। দিনক্ষণ দেখতে হবে।
--- তোমার ভয় করে না ? এই তো নয় যে তোমার যজমানি না-করলে পেটে জুটবে না। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে যে বেতন পাও তাতে হয় না ?
--- কী-কী-কী-কীসের ভয় !
--- এই যে তুমি ব্রাহ্মণ নও। তুমি ব্রাহ্মণ নও সেটা আমার চেয়ে কে বেশি জানে বলো। বাংলাদেশের রাহা এপারে এসে চক্কোত্তির ভেক নিয়ে পুরোহিতগিরিতে নেমে পড়লে !
--- কে বললে আমি ব্রাহ্মণ নই ? এই দ্যাখো আমার পইতা ---
--- পইতা দেখাচ্ছ চক্কোত্তিদা ! উপনিষদ্যতে প্রাপ্যতে ব্রহ্মবিদ্যা অনয়া ইতি --- কী বললাম বলোতো ?
--- সংস্কৃত আমি জানি না ভাই।
--- সেকি, ব্রাহ্মণমানুষ. অথচ সংস্কৃত জানো না ? অথচ জানো না উপনিষদ শব্দের অর্থ ব্রহ্মজ্ঞান বা ব্রহ্মবিদ্যা ? তোমার তো ব্রহ্মজ্ঞানই হয়নি। ব্রাহ্মণ বলে দাবি করছ কীভাবে ?
--- শুধু আমাকে জেরা করে তোমার সমাজের কী লাভ হবে। আমি তো একা নই। তোমাদের দেশের কোন্ ব্রাহ্মণের ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে ?
মানুষের জন্য যা কিছু ক্ষতিকর, সেগুলির আদিতেই আছে বিশ্বাস। বিশ্বাস সত্যের বিরোধী। এইভাবে প্রতারণা আর কতদিন চলবে চক্কোত্তিদা ? বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা। তুমি তো বাংলাদেশে ছিলে। হুমায়ুন আজাদতে চিনতে ? তিনি বলেছেন --- বিশ্বাস থেকে কখনও জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না; জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে।
--- আজাদ সত্য, আমি মিথ্যা। চক্কোত্তিদা মাথা নীচু করে আউড়ে গেলেন।
চক্কোত্তিদা আর কোনোদিন যজমানি করেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন