পশ্চিমবঙ্গকে সরিয়ে রেখে ভারতের অন্য রাজ্যগুলির দিকে একটু তাকালে একই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি
দেখতে পারবেন। ভারতের বাইরে অন্যান্য তথাকথিত সভ্য দেশগুলিতেও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়। সেগুলি কিছু উল্লেখ করতে মন চাইছে। বীভৎসতার বিচারে কিছু বাছাই ঘটনা।
ঘটনা – ১ : আতঙ্কিত করা, যথেচ্ছ প্রহার, যন্ত্রণা দেওয়া, ভয় দেখানো এবং শেষ পর্যায়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারায় গেস্টাপো (গেহেইম স্ট্যাটসপোলজে) ছিল সিদ্ধহস্ত। গেস্টাপো, জার্মানের একটি সিক্রেট পুলিশ সংস্থা। গেস্টাপো ছিল মানুষের তৈরি জঘন্য, নৃশংস, হিংস্র এক সংস্থা। জার্মানিতে একটা সময় এসেছিল যখন গেস্টাপোর নাম শুনলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে শিউরে উঠত।বন্ধ হয়ে যেত হৃদস্পন্দন। নিরপরাধ মানুষদের উপর অকথ্য অত্যাচার করত এই সংস্থা। ‘ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট’ ও ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ যদি কোনো জার্মান নাগরিক, তবে তাদের যৌনাঙ্গে ইলেকট্রোডের শক, মহিলাদের ধর্ষণ, গোড়ালিতে দড়ি বেঁধে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য গাঁইতির হাতল বা রবারের ডাণ্ডা বা বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হত। অত্যাচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হত।
ঘটনা – ২ : রাশিয়ার পুলিশ সংস্থা কেজিবি। সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রের অসামরিক গোয়েন্দা পুলিশ বাহিনী ‘কমিটেট গাসুদোর্স্তভেন্নই বেজোপোসনোস্তি’, সংক্ষেপে কেজিবি। নাম শুনলেই প্যান্টে হিস্যু হয়ে যাবে অসাড়ে। সরকার চালাত কমিউনিস্ট পার্টি, আর সেই সরকারের নির্দেশে কেজিবি সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার করত। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, রাশিয়ার সিক্রেট পুলিশ বাহিনী কাজ করছে ১৯১৭ সাল থেকে।জারের আমলে রাজ্যপাট চালাতে অন্যান্য সরকারি দপ্তরের চেয়ে সিক্রেট পুলিশকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়েছিল। এটা গড়ে ওঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই পুলিশ বাহিনী কত লক্ষ রুশ নাগরিককে যে হত্যা করেছে তার হিসাব নেই।
ঘটনা – ৩ : ইরাকের সিক্রেট সিকিউরিটি পুলিশ। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সামরিক সরকারের সঙ্গে কুর্দদের সংঘর্ষ লেগেই থাকত। শিশু, মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে সুযোগ পেলেই নিরপরাধ কুর্দদের ঠান্ডা মাথায় খুন করত ইরাকের সিক্রেট পুলিশ। সাদ্দামের সামরিক সরকার প্রায় ৩০০০ সাধারণ নিরীহ কুর্দদের হত্যা করেছিল বলে জানা যায়।
ঘটনা – ৪ : ও জি পি ইউ, অর্থাৎ ‘ইউনাইটেট স্টেট পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন’। এই পুলিশ সংস্থাটি রাশিয়ার আর-একটি ঘাতকের দল।সামরিক বাহিনীতে কারা প্রশাসন ও পার্টির সমালোচক, অন্য অর্থে বিপ্লবের প্রতিবন্ধক বা দেশের শত্রু, তাদের খুঁজে বের করার কাজে ওজিপিইউ প্রথমদিকে ব্যস্ত থাকলেও পরে রাশিয়ার বৃহত্তম গণহত্যার জন্য এই সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিরিশের দশকে যখন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালেকটিভাইজেশন প্রোগ্রাম’ রূপান্তরিত হয় তখন দেশের কৃষকরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চারে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ওই প্রতিবাদী কৃষকদের কণ্ঠস্বরকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এই ওজিপিইউ। রাশিয়ার ইতিহাস অনুযায়ী বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই কোটি রুশ নাগরিক জার্মানদের হাতে নিহত হয়েছিল। কিন্তু তার আগে তিরিশের দশকে যে প্রায় সমসংখ্যক রুশি কৃষককে সে দেশের সরকার গুলি করে, ফাঁসি দিয়ে, বেয়নেটে বিদ্ধ করে ও লেবার ক্যাম্পে পাঠিয়ে হত্যা করেছিল।এই গণহত্যার নায়ক পরবর্তীকালে তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি, বরং আমজনতার সামনে তা গর্ব করে বলতেন। প্রথমদিকে অবশ্য ব্যাপারটা চেপে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানরা যখন সব ফাঁস করে দেয়, তখনই এই নৃশংস কৃষক হত্যার কথা বিশ্ব জানতে পেরেছিল। স্তালিনের দ্বিতীয় স্ত্রী নাজেদদা এই গণহত্যার মানসিক চাপ সহ্য করতে না-পেরে শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করেছিল।