মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০১৬

জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান (তৃতীয় পর্ব)



আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ আত্মনিবেদন করতে শেখে। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গর্ব অনুভব করে, দুঃখ-যন্ত্রণা-বঞ্চনাকে ভুলে থাকতে শেখে। এরা লড়াই জানে না, লড়াই দেখলে ভীত হয়।এমতাবস্থায় অদৃষ্ট বা নিয়তির শরণাপন্ন হয়।জেগে ওঠে জ্যোতিষ এবং জ্যোতিষীবাবুরা। হাত বড়িয়ে দেয় – একপক্ষে জ্যোতিষীবাবুর হাত, অপরপক্ষে জাতকের হাত।কী আছে হাতে ? রেখা ? রেখায় কী আছে ? আছে স্বল্প রেখাযুক্ত পরিষ্কার হাত এবং বহু সূক্ষ্ম রেখাযুক্ত হাত।লালচে হাত, গোলাপি হাত, সাদাটে হাত, হলদেটে হাত। আছে চওড়া তালু, বেঁটে ও মোটা আঙুল, কুশ্রী নখ।আছে চৌকো হাত, চৌকো হাতে লম্বা আঙুল, দার্শনিক হাত, শিল্পী হাত, আধ্যাত্মিক হাত। আছে নমনীয় বুড়ো আঙুল, অনমনীয় বুড়ো আঙুল।খুব লম্বা নখ, খুব লম্বা ও সরু নখ, খুব লম্বা নীলচে অথবা মলিন বর্ণের চোখ, ছোটো নীলচে নখ, ছোটো গোলাকার নখ, ছোটো অথচ নখের তলার দিকটা চ্যাপটা, ছোটো অথটচ নখের তলার দিকে সাদা চাঁদ, শরীরের ভিতর গভীরভাবে চেপে বসা চ্যাপটা নখ, নখে সাদা দাগ ইত্যাদি।
এমন কোনো মানুষ নেই যাঁর হাতে ভাঁজ বা কোঁচকানো দাগ বা রেখা নেই। কারোর ঘন দাগ, কারোর-বা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা।এইসব দাগগুলি আবার বিভিন্ন নামে পরিচয় আছে। যেমন—আয়ুরেখা, হৃদয়রেখা, ভাগ্যরেখা, রবিরেখা, বিবাহরেখা ইত্যাদি।এছাড়া হাতের উঁচুনীচু অংশগুলিতে আছে গ্রহস্থল – মানে কোথায় রবি অবস্থান করছে, কোথায় মঙ্গল অবস্থান করছে, কোথায় রাহু অবস্থান করছে ইত্যাদি।হাতের রং দেখেও জ্যোতিষবাবুরা ভাগ্যগণনা করে থাকেন। আছে তারা চিহ্ন, ক্রশ চিহ্ন, চতুষ্কোণ, যব বা দ্বীপ চিহ্ন, বৃত্ত বা চক্র চিহ্ন, ত্রিশূল, জাল চিহ্ন ইত্যাদি – এইসব চিহ্নগুলিও অনেক ভবিষ্যৎবার্তা দেয় বলে জ্যোতিষবাবুরা নিদান দেন।
মানুষের হাতের তালুতে থাকা যেসব ছাই-ছাতার উপর জ্যোতিষবাবুরা ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন বলে দাবি করেন সেগুলি আসলে কী ? মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা হাতের তালু মুঠো করতে পারে। হাতের তালু মুঠো করতে পারার কারণ তালুর এই ভাঁজগুলি।এই ভাঁজগুলি (গভীর রেখা ও সূক্ষ্ম রেখা) প্রাথমিকভাবে মানুষের মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই তৈরি হয়। শিশু মায়ের গর্ভে যখন থাকে তখন তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় শিশুর চামড়া ও মাংসপেশি সাত/আট সপ্তাহ নাগাদ তৈরি হয়।এই অবস্থায় মাংসপেশিতে জলের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকে। এরপর আস্তে আস্তে যতই মাংসপেশিগুলিতে জলের পরিমাণ কমতে থাকে ততই সংকোচনের ফলে মাংসপেশির উপর টান হয়ে এঁটে থাকা চামড়া ক্রমশ শিথিল হতে থাকে এবং কুঁচকে যেতে থাকে। ফলে হাতের তালুর চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় ভাঁজ পড়ে যায়। শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে এই কোঁচকানো চামড়াই দাগ হিসাবে দেখি।এ দাগ ব্যক্তির মৃত্যু পরও থাকে।পেশিতন্তুর সংকোচনে তৈরি হয় সূক্ষ্মরেখা এবং দুটি পেশি-অংশের সংযোগস্থলে সৃষ্টি হয় গভীর রেখা।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতের তালুতে চামড়ার নীচের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণের উপর নির্ভর করে হাতের তালুতে ছোটো ছোটো রেখা তৈরি হয়। মানুষের শরীরের যে অংশ সবচেয়ে বেশি ফোল্ড হয় এবং নড়াচড়া হয়, তা হল হাতের তালু, সে কারণে হাতের তালুতেই এত ভাঁজ সৃষ্টি হয়। যদি হাতের তালুর মতো পায়ের তালুও ভাঁজ করা যেত, তাহলে পায়েও এরকম দাগ আমরা পেতাম।মানুষ ছাড়াও গেরিলা, বাঁদর, শিম্পাঞ্জী গোত্রীয় প্রাণীদের হাতের তালুতে ভাঁজ লক্ষ করা যায়।তবে মানুষের তালুর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়।এই রেখা মানুষের কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না, করতে পারে না।নানা কারণে মানুষের হাতের কবজি বা আঙুল কেটে বাদ হয়ে যায়, কিংবা দুর্ঘটনায় দুটো হাতই বাদ চলে যায় – এই যে যাদের হাত বা কবজি বা আঙুল কেটে বাদ হয়ে যয়, তাদের ভূত-ভবিষ্যৎ কোথায় লেখা থাকে ভেবে দেখব না আমরা ! যেমন ধরুন, কোনো ব্যক্তির বুড়ো আঙুলটা যদি না থাকে, তবে তো তার আয়ুরেখাও নেই – আয়ুরেখা নেই মানে, মৃত্যুও নেই।তাই হয় নাকি ! জ্যোতিষবিদ্যার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হচ্ছে কিরোর বই। কিরোর বই আমিও পড়েছি। তবে কলকাতায় ভৃগু প্রণীত জ্যোতিষ শিক্ষার বইও পাওয়া যায়। এই ভৃগু একাধারে জ্যোতিষজ্ঞ, যৌনবিষয়ক লেখক, গোয়েন্দা গল্পকার। এই কিতাব পড়েও অনেকে জ্যোতিষী ফলায় গ্রামেগঞ্জে।যাই হোক, কিরোর বই আপনিও পড়ে দেখতে পারেন। হাতের রেখা কীরকম হলে সেই হাতের মালিক কেমন ভাগ্যের অধিকারী হবেন, সেগুলিই উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কার্যকারণ নেই। কোনো সংগত তথ্য নেই। আশাও করবেন না। কোনো কেনর উত্তর নেই।কারণ হস্তরেখাবিদদের সেই দায় আছে বলে তারা মনে করেন না। বরং বেশি লাফালাফি করলে মাসলম্যানদের দিয়ে কিমা করে দেবে আপনাকে।
জ্যোতিষীদের আর-একটি ভাগ্যগণনার পদ্ধতি হল সংখ্যাতত্ত্ব বা নিউমেরোলজি। অনেকে সংখ্যা-জ্যোতিষ বা অংক জ্যোতিষও বলে। তা অংকটা কী ? অবশ্য বলার চেষ্টা করব।সংখ্যাতাত্ত্বিক বা জ্যোতিষ মতে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মূহূর্তেই মানুষ নিজেকে, নিজের পরিমণ্ডলকে, সময়কে এককথায় সবকিছুকে একমাত্র সংখ্যা দ্বারাই পরিচিত করে। আর তা করে প্রায় অসচেতন থেকেই। যেমন,- ব্যক্তি বা বস্তুর নাম, স্থানের নাম, বিষয়ের নাম বা দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদি যা কিছুই বলি না-কেন সব কিছুর মাঝেই লুকিয়ে আছে সংখ্যা। সংখ্যার সেই আধিভৌতিক দিক নিয়েই আলোচনা করে সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা। জগতের সকল কর্মকাণ্ডই সংখ্যা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংখ্যার যে একটি আধিভৌতিক (Mistrious) ভূমিকা জীবনে ও জগতে আছে। সংখ্যার এই অতিন্দ্রীয় প্রভাবই আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যার (Modern Numerology) আলোচ্য বিষয়।
জ্যোতিষ মতে, সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা বস্তুত জ্যোতিষবিদ্যার চেয়েও প্রাচীন। জগতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থসমূহে এর উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন। বেদ, বাইবেল প্রভৃতিতে যেমন এর উল্লেখ দেখা যায়, তেমনি পবিত্র কোরান শরিফের সুরাগুলিতেও নাকি সংখ্যায়িত লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়। তাবিজ-কবজ লেখকগণ প্রায়শ সংখ্যায়ন পদ্ধতিতে লিখে থাকেন। সংখ্যাতত্ত্বের আবিষ্কার মানুষকে জ্যোতিষবিদ্যা (Astrology) এবং জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) প্রতি আকৃষ্ট করেছে। গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসকে (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮২-৬০৭) আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয়ে থাকে। অবশ্য তারও বহু পূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগেও এই বিদ্যার অনুশীলন হত বলে প্রমান পাওয়া গেছে। জ্যোতিষবিদরা মনে করেন, পিথাগোরাসের অনুসারী ফিলোলাস, নিকোমাকাস ছাড়াও হেরোডোটাস,সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ গ্রিক পণ্ডিতগণ, এমনকি আইনস্টাইন সহ অন্যান্য খ্যাতিমান পণ্ডিতগণ এই বিদ্যার অনুশীলন করেছেন।সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে ফলিত জ্যোতিষের (Applied Astrology) সম্পর্ক অতি নিবিড়। ফলিত জ্যোতিষে ১২টি রাশি আছে এবং ৯টি গ্রহ তাদের অধিপতি (Ruling Planet) অঙ্কের জগতে মৌলিক সংখ্যা ৯টি (১ থেকে ৯)। শূন্য কোনো সংখ্যা নয়, তবে সংখ্যার পাশে বসে তার মান বৃদ্ধি করে মাত্র। তা পৃথিবী  (Univers) এর প্রতীক। গাণিতিক অঙ্ক যত বড়োই হোক তার পারস্পরিক যোগফল মৌলিক একক সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। আর এই মৌলিক রূপান্তরই হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয়। যেমন ৯৮৭৬ সংখ্যাটি পরস্পর যোগ করলে হয় ৯ + ৮ + ৭ + ৬ = ৩০। আবার ৩০ কে পরস্পর যোগ করলে হয় ৩ + ০ = ৩। অর্থাৎ যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসবে ততক্ষণ পরস্পরকে যোগ করতে হবে। এক সময় তা ১ থেকে ৯ এর মধ্যে আসবেই। আর এই ১ থেকে ৯ সংখ্যা হল ৯টি প্রধান গ্রহের আধিভৌতিক বা অতিন্দ্রীয় প্রতিভূ যার প্রভাব মানব জীবনে অপরিসীম।
সংখ্যাতাত্ত্বিকগণ (Numerologist) প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু বা নামকে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে সংখ্যায়িত করে মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো সংখ্যাতত্ত্বভিত্তিক গণনা পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে ANIRBAN BANDYOPADHYAY নামে। প্রশ্ন দেখা দিতে পারে পৃথিবীতে এত ভাষা থাকতে ইংরেজি ভাষাকে বেছে নেওয়া হল কেন ? এ প্রশ্নের উত্তর সংখ্যাতাত্ত্বিকগণই দিয়েছেন, বলছেন -- প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রতীকই মূলত কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রাচীন ভাষায় সংখ্যাতত্ত্ব বর্ণিত হলেও আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা ইংরেজিকে বেছে নিয়েছেন এর আন্তর্জাতিক আবেদনের কথা বিবেচনা করেই। কেন-না এটি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং পৃথিবীর সকল গোলার্ধে এই ভাষা কমবেশি চর্চা হয়। অপরদিকে অন্যান্য প্রধান ভাষাগুলির আ-কার, ই-কার প্রভৃতি অথবা অক্ষর সংখ্যার প্রাচূর্যে বর্ণমালা অত্যন্ত জটিল। তাই ইংরেজিকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।এছাড়া পৃথিবীর আলাদা আলাদা ভাষায় আলাদা আলাদা সংখ্যাতাত্ত্বিক ভাগ্যবিচার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে । কারণ সর্বশেষ যোগফল সংখ্যা একেক রকম হবে। সে ব্যাপারটা হবে বড়োই বিভ্রান্তকর।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের প্রত্যেকের সংখ্যাগুলি। সংখ্যা দুই প্রকারে নির্ণয় করা যায় -- একটি জন্মসংখ্যা, অপরটি নামসংখ্যা। সঠিক জন্মতারিখ জানা থাকলেই শুধু জন্মসংখ্যায় নির্ণয়, নতুবা নামসংখ্যাই ধরতে হবে। জন্মসংখ্যার মতো নামসংখ্যা অতটা ভূমিকা রাখতে পারে না বলে জন্মসংখ্যার গুরুত্বই বেশি। আবার জন্মসংখ্যাও দুই প্রকারের, একটি জন্মদিনের সংখ্যা, অপরটি জন্মতারিখের সংখ্যা। আমরা জানি একক সংখ্যা হল ১ থেকে ৯ । শূন্য কোনো সংখ্যা নয়। বাকি সংখ্যাগুলি এই ১ থেকে ৯ এরই পুনরাবৃত্তি শুধু বা যৌগিক সংখ্যা। অতএব পুনরাবৃত্তির সংখ্যাগুলিকে পরস্পর যোগ করে একক সংখ্যায় আনতে হবে যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসে। যেমন, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ এর জন্মতারিখের সংখ্যা ৭ হল যেভাবে। ২ + ৪ + ১ (জানুয়ারি মাসের সংখ্যা) + ২ + ০ + ১ + ৬ = পরস্পর যোগ করে হয় ১৬। যেহেতু ১৬ কোনো একক সংখ্যা নয়, তাই এটিকেও পরস্পর যোগ করতে হবে। যেমন, ১ + ৭ = ৮ । আর জন্মদিনের সংখ্যা ৬ হল ২ আর ৪ এর যোগফল (২ + ৪ = ৬)। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসকে ১ থেকে ১২ ধরতে হবে। অর্থাৎ যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ১, ১০, ১৯ ও ২৮ তারিখে, তাদের ১ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ২, ১১, ২০ ও ২৯ তারিখে, তাদের ২ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৩, ১২, ২১ ও ৩০ তারিখে, তাদের ৩ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৪, ১৩, ২২ ও ৩১ তারিখে, তাদের ৪ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৫, ১৪ ও ২৩ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৫। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৬, ১৫ ও ২৪ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৬। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৭, ১৬ ও ২৫ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৭। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৮, ১৭ ও ২৬ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৮। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৯, ১৮ ও ২৭ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৯।
নামসংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র হল -- ইংরেজি বর্ণমালায় ২৬টি বর্ণ আছে। এই ২৬টি বর্ণকে ১ থেকে ৯ সংখ্যায় আনতে হবে এইভাবে -- 
A, I, J, Q, Y এর মান হল
B, K, R এর মান হল
C, G, L, S এর মান হল
D, M, T এর মান হল
E, H, N, X এর মান হল
U, V, W এর মান হল
O, Z এর মান হল
 F, P এর মান হল এই হল ২৬টি বর্ণের মান।
এবার নির্ণয় করি কারও নাম। ধরুন ANIRBAN নাম হলে তার নামসংখ্যা কত ? A ১ + N ৫ + I ১ + R ২ + B ২ + A ১ + N ৫ = ১৭ অর্থাৎ ১ + ৭ = ৮ এবং B ২+ A ১+ N ৫+ D ৪+ Y ১+ O ৭+ P ৮+ A ১+ D ৪+ H ৫+ Y ১+ A ১+ Y ১= ৪২  ।অর্থাৎ ৪ + ২ = ৬। পূর্ণ নামের সংখ্যা ৮ + ৬ = ১৪ অর্থাৎ ১ + ৪ = ৫। তাহলে দেখা যাচ্ছে ৮ ও ৫ দুটি সংখ্যাই এক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে। এভাবেই সমস্ত নামের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
সংখ্যা তো হল। কিন্তু সংখ্যা দিয়ে কী হবে? সংখ্যা দিয়ে ভাগ্যগণনা কীভাবে হবে ? সব উল্লেখ করব না। কলেবর বৃদ্ধি না-করে দু-চারটে উল্লেখ করছি। যে জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ১ হয়, তাহলে তাকে ধীরস্থির ও গম্ভীর মনে হলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে জানে, কর্মে সক্রিয়, তেজি, নির্ভীক, পরাক্রমশালী, আত্মবিশ্বাসী, অহংকারী, চতুর, বাস্তববাদী এবং উচ্চাকাঙ্খী। উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকে। সহজে হার স্বীকার করে না। মনোবল প্রচুর বলে ভয় পেয়ে পিছু হটে না। প্রবল বিপর্যয়ের মধ্যেও ধীরস্হিরভাবে কুটিল বুদ্ধির দ্বারা এগিয়ে যেতে পারে। অন্যকে বোকা বানাতে পারে। নিজের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য যা করা দরকার করতে পারে। চেহারায় আকর্ষণীয় শক্তি থাকায় সহজেই অন্যেরা আকৃষ্ট হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে সবসময় নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। কথাবার্তায় শাণিতভাব প্রকাশ পায়। নিজের ঢোল নিজে পেটায়। চাটুকাররা মন জয় করতে পারে। কোন্ কাজ কখন করতে হবে তা বোঝে। সব বিষয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। একরোখা স্বভাবের জন্য নিজের পছন্দমত না-হলে কারও কথা শুনে না। সব বিষয়ে সবার উপর কর্তৃত্ব করতে চায়। কারও অধীনে থাকা পছন্দ নয়। যে-কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে।সাংগঠনিক দক্ষতা থাকায় অন্যকে পরিচালনা করা, নেতৃত্ব দেওয়া এবং বড়ো বড়ো পরিকল্পনা ও চিন্তাধারার জন্য জনমনে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। সম্মান এবং উচ্চপদও পেতে পারে। আবার নিজেই সব ভালো বুঝে এই খামখেয়ালির জন্য অনেক সময় মাশুলও দিতে হতে পারে। গ্রহ অশুভ কালে বড়ো ধরনের পতনও ঘটতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাজে মন না দিয়ে যে-কোনো মুহূর্তে কাজে উৎসাহী। উদারতা, মানবতা, বিচক্ষণতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মভীরুতা এবং প্রতিভা যেমন আছে -- তেমনি ক্রুরতা, নিষ্ঠুরতাও অসম্ভব নয়।ভ্রমণে সদা উৎসুক বলে বন, জঙ্গল, শহর ও বিদেশ ভালোবাসে। সন্তানদের প্রতি স্নেহপ্রবণ। ভাবপ্রবণতা থাকলেও বাস্তবতার বাইরে যায় না। প্রেমের ব্যাপারে কোনো চিন্তা না-করেই হৃদয় দিতে পারে। আবার সামান্য আঘাতে ভালবাসার মানুষটিকে চিরতরে ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনা। কারো ক্ষেত্রে একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয়।
আবার কোনো জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ২ হয়, তাহলে আবেগপ্রবণ, অনুভূতিশীল, কোমল হৃদয়, কল্পনাপ্রিয়, ভদ্র, নম্র, লাজুক, বৈচিত্র্যপ্রিয় ও শিল্পীমনা। তারা ভাবপ্রকাশে কুণ্ঠিত এবং তাদের মন ও চিন্তা দ্বি-ধারায় প্রবাহিত হয়। তাদের মনের স্থিরতা নেই বলে ভাবধারায় দ্রুত পরিবর্তন আসে। তাদের আত্মসম্মান জ্ঞান প্রচণ্ড। তাই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তারা কোনৈ কিছু করতে পারে না। তারা সামাজিক রীতি-নীতির প্রতি আকৃষ্ট। জীবন ও ঘর-সংসার তাদের কাছে প্রিয়। তারা আত্মত্যাগী বলে প্রিয়জনদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে জানে। তাদের জীবনের ট্র্যাজেডি হল তবুও মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারে! তারা সহজেই ভুল স্বীকার করতে পারে। তারা খুব অল্পতেই কষ্ট পায় এবং খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। অন্যের বক্তব্য শোনার জন্য আগ্রহী।
কোনো জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ৩ হয়, তাহলে এটি বৃহস্পতির প্রতীক। চাকরি, ব্যাবসা বা ধর্মীয় বিষয়ে তারা কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতে পারে। তারা ধীর স্থির, নিয়মানুবর্তী, বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ও ধার্মিক। সবার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে। তাদের জীবনে উত্থান-পতনজনিত জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স খুব কমই দেখা যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে লোভনীয় নেতা হওয়ার সুযোগ এলেও অনেকে অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। তাদের মধ্যে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একটা আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। এরা বিশিষ্ট সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, ধর্ম প্রচারক, শিক্ষক ও কর্মক্ষেত্রে বড়ো কর্তা হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পদোন্নতির দৌড়ে তারাই এগিযে থাকেন। তাদের উচ্চাকাঙ্খা তীব্র, বুদ্ধি তীক্ষ্ণ এবং তারা পরিশ্রমী বলেই সাফল্য ধরতে তাদের দেড়ি হয়না। অনেক সময় টুকরো কথা দিয়ে তারা ঠাট্টা করতে পারে। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে বেশি কথা বলার জন্য সব কথার মধ্যে সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে। কেউ কেউ আবার অন্তঃমুখীও হতে পারে। তাদের যারা শত্রু হয় তারা সবাই প্রায় বুদ্ধিমান শত্রু। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার বোঝা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে ইত্যাদি।
সংখ্যাতত্ত্ব শুধু মানবজীবনেই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রেই সংখ্যার প্রভাব আছে বলে জ্যোতিষবাবুরা দাবি করেন। মনে করুন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।  বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলার এক মর্মান্তিক দৃশ্য । ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, অর্থাৎ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার টুইন টাওয়ারটি তাসের ঘরের মতো মাটিতে মিশে গেল। গোটা বিশ্ব কেঁপে উঠল। তারপর থেকে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজ্যবাদীদের সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা হল। আর আমরা দেখতে পাই এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে এক সর্বগ্রাসী দানবের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে।সবাই যখন নাচছে, তখন জ্যোতিষীবাবুরাই-বা বসে থাকবেন কেন !  তাঁরা নেচে উঠলেন, নেমে পড়লেন কোমর বেঁধে। ঘোলা জলে মাছ ধরার ফন্দি সম্বল করে। বললেন -- রাষ্ট্রপতি George W. Bush -এর মোট অক্ষর সংখ্যা হল ১১টি। ১১ সংখ্যাটি হল দারুণ অশুভ সংখ্যা। সমস্ত কিছুর মূলেই আছে এই ১১
এক নজরে তাহলে সেটাই দেখি : (১) হামলার তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর, (২) হামলার তারিখ ৯/১১, অর্থাৎ ৯ + ১ + ১ = ১১, (৩) ১১ সেপ্টেম্বর  হল বছরের ২৫৪ তম দিন = ২ + ৫ + ৪ = ১১, (৪) ১১ সেপ্টেম্বেরের পরে বছর শেষ হতে আর ১১১ দিন বাকি ছিল, (৫) টুইন টাওয়ার পাশাপাশি দাঁড়ানো, যা দেখতে ১১, (৬) প্রথম বিমান যেটি আঘাত হানে, সেটি ১১ নম্বর ফ্লাইট, (৭) American Airlines মানে AA, অর্থাৎ A হচ্ছে ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম অক্ষর, মানে American Airlines = AA = ১১, (৮) নিউইয়র্ক স্টেট হচ্ছে ইউনিয়নে যুক্ত হওয়া ১১ নাম্বার স্টেট, (৯) New York City, এখানেও ১১টি অক্ষর, (১০) Afghanistan, এখানেও ১১ টি অক্ষর, (১১) The Pentagon, এখানেও ১১ টি অক্ষর, (১২) ফ্লাইট ১১ – ৯২ অন বোর্ড – ৯ + ২ = ১১, (১৩) ফ্লাইট ৭৭ – ৬৫ অন বোর্ড – ৭৭ = ১১ x ৭ -  ৬ + ৫ = ১১, (১৪) Air Force One = ১১ অক্ষর, (১৫) Saudi Arabia = ১১ অক্ষর, (১৬) ww terrorism = ১১ অক্ষর, (১৭) ইউ এস স্টেট সেক্রেটারি Colin Powell = ১১ অক্ষর, (১৮) ১১ নভেম্বর  হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের Remembrance day, আবার নভেম্বর হল ১১তম মাস, (১৯) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আঘাত হানা বিমানের পাইলট ছিল Mohamed Atta, Mohamed Atta = ১১ অক্ষর।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা কোন্ সিদ্ধান্তে আসতে পারি দেখা যাক -- সিদ্ধান্ত : ১১ একটি অলৌকিক সংখ্যা, তাই ১১ সেপ্টম্বরের ঘটনাটি একটি অলৌকিক ঘটনা।বাইবেল ও বিভিন্ন প্রাচীন মিথে শয়তানের চিহ্নের সঙ্গে ১১ সংখ্যার একটা যোগ পাওয়া যায়। নিউ টেস্টামেন্টে শয়তানের চিহ্ন ৬৬৬, যা ১১ দ্বারা বিভাজ্য।ধর্মক্থা শব্দটি ইংরেজি বর্ণমালা বা রোমানে লিখি, তবে দেখা যায় ‘dharmakatha’, গুনে দেখুন ১১টি অক্ষর।
১১ তে মিল পেলেন অনেক, ১১ তে অমিলও পাবেন অনেক। টুইন টাওয়ারের দুর্ঘটনায় এমন অসংখ্য বিষয়-পূর্বাপর পাওয়া যাবে যার সঙ্গে ১১ সংখ্যার বা অক্ষরের কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন -- (১) হামলার বছর ২০০১ = ২ + ০ + ০ + ১ = ৩ -- ১১ নয়। (২) এরোপ্লেনগুলি আঘাত হানে সকাল ৯টার দিকে -- ১১ টার দিকে নয়।(৩) ৪টি বিমান হামলা করেছে -- ১১ নয়। (৪) এরোপ্লেনে লোকের সংখ্যা ২৬৬ = ২ + ৬ + ৬ = ১৪ -- ১১ নয়। (৫) একটি এরোপ্লেনের নম্বর ৭৬৭ = ৭ + ৬ + ৭ = ২০ -- ১১ নয়।(৬) আরেকটি এরোপ্লেনের নম্বর ৭৫৭ = ৭ + ৫ + ৭ = ১৯ -- ১১ নয়। (৭) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ফুয়েল ক্যাপাসিটি ২০,০০০ গ্যালন  -- ১১ হাজার গ্যালন নয়।(৮) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ডানার দৈর্ঘ্য ১২৪ ফুট = ১ + ২ + ৪ = ৭ -- ১১ নয়।(৯) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ডানার দৈর্ঘ্য ১৫৬ ফুট = ১ + ৫ + ৬ = ১২ -- ১১ নয়।(১০) একটি টাওয়ারের উচ্চতা ১৩৬২ ফুট = ১ + ৩ + ৬ + ২ = ১২ -- ১১ নয়।(১১) অন্যটির উচ্চতা ১৩৬৮ = ১ + ৩ + ৬ + ৮ = ১৮ -- ১১ নয়।(১২) অন্য ফ্লাইটগুলি UA ৯৩ = ৯ + ৩ = ১২ -- ১১ নয়।(১৩) UA ১৭৫ = ১ + ৭ + ৫ = ১৩ -- ১১ নয়।(১৪) ফ্লাইট ১১ এর প্যাসেঞ্জার ছিল ৮১ জন = ৮ + ১ = ৯ -- ১১ নয়।(১৫) Boston = ৬টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৬) Massachusetts = ১৩টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৭) Pennsylvania = ১২টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৮) Washington D.C. = ১২টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৯) Los Angeles = ১০ অক্ষর -- ১১ নয়।(২০) হাইজ্যাকারদের সংখ্যা ১৯ = ১ + ৯ = ১০ -- ১১ নয়।(২১) Tony Balair = ১০ অক্ষর -- ১১ নয়।

একই ঘটনাকে অন্য সংখ্যা দিয়েও প্রমাণ করা যাবে আরেকটি  অলৌকিক সংখ্যা দিয়ে। ২ সংখ্যা দিয়েও কিছু ঘটনা মেলানো যাচ্ছে।দেখুন -- (১) হামলার তারিখ ১১/৯ = ১১ – ৯ = ২, (২) হামলার তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর  = ১ + ১ = ২, (৩) ১১ সেপ্টেম্বর হচ্ছে বছরের ২৫৪ তম দিন = ২ + ৫ + ৪ = ১১ = ১ + ১ = ২, (৪) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা => ২ টি টাওয়ার, (৫) World Trade Center কে আঘাত হেনেছে ২ টি বিমান, (৬) প্রতি বিমানে ২ টি ডানা আছে,(৭) প্রথম আঘাতকারী বিমানের ফ্লাইট নাম্বার ১১ = ১ + ১ = ২, (৮) New York = ২টি শব্দ, (৯) The Pentagon = ২ টি শব্দ।
অনেকে ১৯ সংখ্যাটিকে খুব গুরুত্ব দেন। অথচ অনেক কিছুই আছে যা ১৯ সংখ্যার সঙ্গে খাপ খায় না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানের সংখ্যা দেখা যেতে পারে। যেমন দেখুন -- (১) কোরানে পারা ৩০, যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য নয়।(২) কোরানে রুকু ৫৫৮ টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৩) সিজদাহ ১৫টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৪) মাক্কি সুরা ৮৬, মাদানি সুরা ২৬টি, কোনোটিই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৫) নোকতা ১,০৫,৬৮৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৬) ‘আল্লাহ’ শব্দটি সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য ধরে নিলেও (আসলে নয়) -- রসুল, মোহাম্মদ সা, জিব্রাইল, মানুষ প্রভৃতি অসংখ্য শব্দ আছে যার সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৭) বিসমিল্লায় ১৯টি অক্ষর থাকলেও কলেমা তাইয়েবা (“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ…”), কলেমা শাহাদাত, আউজুবিল্লাহ, এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের অক্ষর ১৯টি নয়।(৮) সুরা ৯৬ এর অক্ষর সংখ্যা ৩০৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হলেও সুরা ১, ২, .,  এমনকি ১১০ বা অন্য সুরাগুলি অক্ষর সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৯) ১১০ নম্বর সুরায় শব্দের সংখ্যা ১৯টি, বাকি সুরাগুলির শব্দসংখ্যা ১৯ নয়।
৪ সংখ্যা দিয়েও অলৌকিক তত্ত্ব দেওয়া যেতে পারে। দেখুন -- (১) আল্লাহ শব্দটিতে অক্ষর ৪টি।(২) ৪ নম্বর সুরায় আয়াত ১৭৬ = ৪ x ৪৪ = ১৭৬।(৩) সুরা এখলাসের আয়াত সংখ্যা ৪।(৪) সুরা এখলাসের প্রথম আয়াত যেখানে আল্লাহর একত্ব সম্বন্ধে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে (কুলহু আল্লাহু আহাদ), প্রথম আয়াতটিতে শব্দ সংখ্যা ৪টি।(৫) সুরা এখলাস ১১২ নম্বর সুরা, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য = ১১২/৪ = ২৮ =  ২ + ৮ = ১০ = ১ + ০ = ১ অর্থাৎ আল্লাহ এক।(৬) কোরানে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য।(৭) আসমানি কিতাবের সংখ্যা ৪টি।(৮) আসমানি কিতাব নাজিলকৃত রসুল ৪ জন।(৯) প্রধান ফেরেশতা ৪ জন।অতএব প্রমাণিত হল যে কোরান অলৌকিক এবং এই ৪ সংখ্যাটি একটি অলৌকিক সংখ্যা। প্রকৃতিতেও এরকম ‘অলৌকিক’ সংখ্যার উদাহরণ হাজার হাজার পাওয়া যাবে।
নিউমেরোলজিস্টরা ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার জন্য আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখের ব্যাপারে নিউমেরোলজিস্টদের মতামতও ভিন্ন, স্ববিরোধিতায় ভরপুর।এ ব্যাপারে অবশ্য নিউমেরোলজিস্টদের কোনো ব্যাখ্যা নেই। নিউমেরোলজি বিজ্ঞানের কোনো শর্তকেই তোয়াক্কা করে না। সংখ্যা কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিউমেরোলজিস্টরা বলেন – “প্রত্যেকটি সংখ্যার একটি করে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আছে। সেই তরঙ্গই মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে”।মনে রাখতে হবে, তড়িৎ ও চুম্বকত্ব পদার্থের দুটি মৌলিক ধর্ম, এটি পদার্থের বিশেষ অবস্থায় প্রকাশ পায়।কিন্তু ‘সংখ্যা’ কোনো পদার্থ নয়, এটি একটি গাণিতিক ধারণা।অতএব সংখ্যায় তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ থাকার ব্যাপারটা হল একটি লোক ঠকানো উদ্ভট কল্পনা।আমি একজন কম্যুনিস্ট তথা বামপন্থী প্রাবন্ধিককে চিনতাম, যার পিতৃদত্ত নাম ছিল জ্যোতির্ময় ঘোষ – তিনি নিউমেরোলজিস্টের পরামর্শে নাম বদলে করলেন জ্যোতি ঘোষ। তিনি পেশায় ফিজিক্সের অধ্যাপক ছিলেন। নামের বানান থেকেই যদি ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাহলে যে ব্যক্তিরা একাধিক নামেই বিখ্যাত, তাদের ক্ষেত্রে কোন নামটি সঠিক বলে ধরবেন ? দেখুন -- মানিক, সত্যজিৎ রায়; রীনা, অপর্ণা সেন; রমা, সুচিত্রা সেন; মোহর, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়; বুম্বা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়; সুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজি, নেতাজি সুভাষ; গান্ধিজি, বাপুজি, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি; মার্ক টোয়েন, স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স; এপিজে আবদুল কালাম, আবুল ফকির জয়নুলাবউদ্দিন আবদুল কালাম; পিভি নরসিংহ রাও, পামুলাপ্রতি ভেঙ্কটনরসিমহা রাও; পিটি উষা, পিলাভুল্লাকান্দি থেক্কেপরম্বিল উষা; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইত্যাদি। নিউমেরোলজিস্টরা যদি এদের ভাগ্যগণনা করতে নামে তাহলে তো ন্যাজে আর গোবরে হয়ে যাবেন। নাম ভিন্ন, সংখ্যাও ভিন্ন – অতএব ভাগ্যবিচারও ভিন্ন হবে। তাহলে হলটা কী ! আর-একটা মোক্ষম উদাহরণ দিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের আলোচনা শেষ করব। আডলফ হিটলার, এই ব্যক্তিকে চেনেন না এমন কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন বলে মনে হয় না। সেই বিশ্বত্রাস হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক হিটলার – জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে ২০ এপ্রিল। হিটলারের জন্মসংখ্যা হল ২ + ০ + ০ + ৪ + ১ + ৮ + ৮ + ৯ = ৩২ = ৩ + ২ = ৫।নিউমেরোলজিস্টদের বিচারে ৫ জন্মসংখ্যা ব্যক্তিরা দয়া ও ন্যায়নিষ্ঠায় ভরপুর হয়ে থাকেন। ইতিহাস কাঁদবে, না হাসবে ?
জ্যোতিষীবাবুরা মানুষের ভাগ্য বলে দেওয়ার জন্য আরও একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। সেই পদ্ধতিটি হল ‘তিল’। আমি আগে কখনো শুনিনি যে মানুষের শরীরে যে তিল দেখতে পাওয়া যায়, সেই তিল দেখে নাকি ভাগ্য বলে দেওয়া যায়। বছর পঁচিশ আগে হাবড়ায় এক জ্যোতিষালয়ে বিশাল গণ্ডগোল এবং জ্যোতিষবাবুকে উত্তমমধ্যম কেলানো। জ্যোতিষীবাবু তাঁর খরিদ্দার এক তরুণীর ডান স্তনে তিল আছে বলে দাবি করেন।তরুণীটি যতই বলে তাঁর ডান স্তনে কোনো তিল নেই, জ্যোতিষবাবু ততই বলতে থাকেন তাঁর ডান স্তনে তিল আছে, থাকতেই হবে। লক্ষণ তাইই বলছে। তিনি আরও একবার স্তন খুলে যাচাই করতে বলে। তরুণীটি মেজাজ ঠিক রাখতে না-পারে জ্যোতিষীবাবুর ফর্সা টুকটুকে গালে সপাটে চড় কষিয়ে লাল করে দেয়। চেম্বারে নারীঘটিত গন্ধ পেয়ে বাইরে লোকজনও চলে আসে এবং জ্যোতিষীবাবুর চেম্বার তুলে দেয়। এরপর থেকে তিলের উপর আমারও বেশ আগ্রহ জন্মালো। কারণ আমার শরীরেও যে গোটা কয়েক তিল আছে ! বইপত্রও কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হল। যত্তসব !
প্রাচীন সমুদ্র শাস্ত্রে তিল দেখে ভাগ্য নির্ধারণের পদ্ধতি বর্ণনা করা আছে।মানুষের দেহে তিলের উপস্থিতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। তিল দেখে ভাগ্য নির্ধারণের প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এখনও অনেকে এ প্রথাতে বিশ্বাসী। শরীরের বিভিন্ন অংশে তিলের উপস্থিতি, রং, আকৃতি প্রভৃতি দেখে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করা। বলা হয় -- পুরুষের শরীরে ডান দিকে এবং নারীদের শরীরে বাঁ দিকে তিল থাকা শুভ। আবার কোনো ব্যক্তির শরীরে ১২টির বেশি তিল হওয়া শুভ বলে মনে করা হয় না। ১২টার কম তিল হওয়া শুভ ফলদায়ক। দেশের একেক অংশে তিল একেক অর্থ বহন করে।
ভ্রু : যাদের ভ্রুতে তিল থাকে তারা প্রায়ই ভ্রমণ করেন। ডান ভ্রুতে তিল থাকলে ব্যক্তির দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। আবার বাঁ ভ্রুর তিল দুঃখী দাম্পত্য জীবনের সঙ্কেত দেয়।
মাথা : মাথার মাঝখানে তিল থাকলে তা নির্মল ভালোবাসার প্রতীক। ডান দিকে তিল থাকা কোনো বিষয়ে নৈপুণ্য বোঝায়। আবার যাদের মাথার বাঁ দিকে তিল আছে তারা অর্থের অপচয় করেন। মাথার ডান দিকের তিল ধন ও বুদ্ধির চিহ্ন। বাঁ দিকের তিল নিরাশাপূর্ণ জীবনের সূচক।
চোখের মণি : ডান চোখের মণিতে তিল থাকলে ব্যক্তি উচ্চ বিচারধারা পোষণ করেন। বাঁ দিকের মণিতে যাদের তিল থাকে তাদের বিচারধারা ভালো নয়। যাদের চোখের মণিতে তিল থাকে তারা সাধারণত ভাবুক প্রকৃতির হন।
চোখের পাতা : চোখের পাতায় তিল থাকলে ব্যক্তি সংবেদনশীল হন। তবে যাদের ডান পাতায় তিল থাকে তারা বাঁ পাতায় তিলযুক্ত লোকের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল।
কান : কানে তিল থাকা ব্যক্তি দীর্ঘায়ু হন।
মুখ : স্ত্রী বা পুরুষের মুখমণ্ডলের আশপাশের তিল তাদের সুখী ও ভদ্র হওয়ার সঙ্কেত দেয়। মুখে তিল থাকলে ব্যক্তি ভাগ্যে ধনী হন। তার জীবনসঙ্গী খুব সুখী হন।
নাক : নাকে তিল থাকলে ব্যক্তি প্রতিভাসম্পন্ন হন এবং সুখী থাকেন। যে নারীর নাকে তিল রয়েছে তারা সৌভাগ্যবতী হন।
ঠোঁট : যাদের ঠোঁটে তিল রয়েছে তাদের হৃদয় ভালোবাসায় ভরপুর। তবে তিল ঠোঁটের নিচে থাকলে সে ব্যক্তির জীবনে দারিদ্র্য বিরাজ করে।
গাল : গালে লাল তিল থাকা শুভ। বাঁ গালে কালো তিল থাকলে, ব্যক্তি নির্ধন হয়। কিন্তু ডান গালে কালো তিল থাকলে তা ব্যক্তিকে ধনী করে। থুতনি : যে স্ত্রীর থুতনিতে তিল থাকে তিনি সহজে মেলামেশা করতে পারেন না। এরা একটু রুক্ষ স্বভাবের হন।
কাঁধ : ডান কাঁধে তিল থাকলে সে ব্যক্তি দৃঢ়চেতা। আবার যাদের বাঁ কাঁধে তিল থাকে তারা অল্পেই রেগে যান।
হাত : যার হাতে তিল থাকে তারা চালাক-চতুর হন। ডান হাতে তিল থাকলে ব্যক্তি শক্তিশালী হন। আবার ডান হাতের পেছনে তিল থাকলে তারা ধনী হয়ে থাকেন। বাঁ হাতে তিল থাকলে সে ব্যক্তি অনেক বেশি টাকা খরচ করতে পছন্দ করেন। আবার বাঁ হাতের পেছনের দিকে তিল থাকলে সে ব্যক্তি কৃপণ স্বভাবের হন।
বাহু : যে ব্যক্তির ডান বাহুতে তিল থাকে তারা প্রতিষ্ঠিত ও বুদ্ধিমান। বাঁ বাহুতে তিল থাকলে ব্যক্তি ঝগড়াটে স্বভাবের হন। তার মাথায়ও খারাপ চিন্তাভাবনা থাকে।
আঙুল : যাদের আঙুলের তর্জনীতে তিল থাকে তারা বিদ্বান, ধনী এবং গুণী হয়ে থাকেন। তবে তারা সব সময় শত্রুদের কারণে সমস্যায় থাকেন। বৃদ্ধাঙ্গুলে তিল থাকলে ব্যক্তি কর্মঠ, সদ্ব্যবহার এবং ন্যায়প্রিয় হন। মধ্যমায় তিল থাকলে ব্যক্তি সুখী হন। তার জীবন কাটে শান্তিতে। যে ব্যক্তির কনিষ্ঠায় তিল রয়েছে তারা ধনী হলেও জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়। অনামিকায় তিল থাকলে ব্যক্তি জ্ঞানী, যশস্বী, ধনী ও পরাক্রমী হন।
গলা : গলার সামনের দিকে তিল থাকলে ব্যক্তির বাড়িতে বন্ধু-বান্ধবের আনাগোনা লেগে থাকে। গলার পিছনে তিল থাকলে সে ব্যক্তি কর্মঠ হন। কোমর : যে ব্যক্তির কোমরে তিল থাকে, তার জীবনে সমস্যার আনাগোনা লেগেই থাকে।
বুক : ডান দিকের বুকে তিল থাকা শুভ। এমন স্ত্রী খুব ভালো হয়। পুরুষ ভাগ্যশালী হয়। বাঁ দিকের বুকে তিল থাকলে স্ত্রীপক্ষের তরফে অসহযোগিতার সম্ভাবনা থাকে। বুকের মাঝখানের তিল সুখী জীবনের সঙ্কেত দেয়।
পা : যে জাতকের পায়ে তিল রয়েছে তারা অনেক ভ্রমণ করেন।
পেট : যে ব্যক্তির পেটে তিল আছে তারা খুব খাদ্যরসিক হয়। মিষ্টি তাদের অত্যন্ত প্রিয়। তবে তারা অন্যকে খাওয়াতে খুব একটা পছন্দ করে না।
হাঁটু : ডান হাঁটুতে তিল থাকলে গৃহস্থজীবন সুখী হয়। বাঁ হাঁটুতে তিল থাকলে দাম্পত্য জীবন দুঃখময় হয়।
উঃ, ভাবা যায় না। জ্যোতষীবাবুদের কী সৃজনশীলতা ! তিলকে তাল করা জ্যোতিষীবাবুদের তিল প্রসঙ্গে কী বলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান ? তিল কখনোই মানুষের ভাগ্য নির্ণায়ক ও নিয়ন্ত্রক নয়। মানুষের শরীরের তিল আদতে আপাতনিরীহ স্কিন ডিজিজ। তিল আমরা সবাই কম বেশি ফ্রিকেলস শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে তিল বা ক্ষুদ্র চিহ্ন। এটি এমন ধরনের দাগ যার বর্ণ বাদামি, আকারে ২ থেকে ৪ মিলিমিটারের মত গোলাকার, ত্বকের সমান স্তরে অবস্থান করে এবং মূলত ত্বকের কোনো ক্ষতিসাধন করে না। তবুও সবাই এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে থাকেন। যদিও এটা কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যা নয়, এটি অনেকের কাছেই বিব্রতকর। ফর্সা ত্বকে এ দাগ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটা অনেকটাই বংশগত, পরিবারের কারও এ সমস্যা থেকে থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফ্রিকেলস সূর্য রশ্মিতে আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করে তাই সান এক্সপোজড জায়গাগুলিতে বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়া সারা শরীরেই ফ্রিকেলস হতে পারে। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের ফ্রিকেলস আউট ক্রিম পাওয়া যায়, যার সবই কম-বেশি ব্লিচিং উপাদান দিয়ে তৈরি। আর ব্লিচিং পদার্থ আমাদের স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য হুমকি স্বরূপ।
তিল বা ফ্রিকেলস সাধারণত দুই ধরনের হয় – (১) এফিলাইডস এরা সমতল এবং লালচে বাদামি রঙের হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় এবং শীত এলেই চলে যায়। এই রকমের ফ্রিকেলস বংশগত হতে পারে। (২) লেনটিজাইন্স লেনটিজাইন্স সম্ভবত ছোটো ছোটো ট্যানের দাগের মতো বাদামি বা কালো রঙের হতে দেখা যায়। এ ধরনের তিল এফিলাইডস থেকেও গাঢ় রঙের হয়। আর শীতকালে চলেও যায় না। সারা বছর ব্যাপী এটি আপনার সুন্দর ত্বকে রাজত্ব করে বেড়ায়। এটিও অনেকটা বংশগত সমস্যা। ফ্রিকেলস প্রধানত কালো বা বাদামি দাগ যা মুখের ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে নাকের দুই পাশের জায়গাগুলিতে। ফর্সা বা ফ্যাকাসে ত্বক এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। রোদের আলোতে ফ্রিকেলস আরও স্পষ্ট ও তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর আসল কারণ জেনিটিকাল। কারও পরিবারে বাবা-মা দুই জনের তিল থাকলে তার হওয়ার সম্ভবনা ৮০ %। আর যে-কোনো একজনের থাকলেও এ মাত্রা ৬০ থেকে ৬৫ %। রোদ ফ্রিকেলসের প্রধান শত্রু । অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিতে ঘোরাঘুরির ফলেও হতে পারে। অনেকে আছেন গাড়িতে চলাফেরা করেও ফ্রিকেলস কবলিত হন এবং ভাবেন গাড়িতে থাকার কারণে তার ত্বক হয়তো সূর্যরশ্মির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এটা ভুল ধারণা। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে খুব সহজেই সূর্যরশ্মি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ত্বকে এবং তৈরি করতে পারে ফ্রিকেলস ।
এই তিল বা ফ্রিকেলস শরীর থেকে নিশ্চিহ্নও করে দেওয়া সম্ভব, প্রয়োজন হলে। মুখের অতিরিক্ত তিল দূর করার কতকগুলি উপায় – (১) প্রতিদিন টক দই ব্যবহার করুন। এটি ধুয়ে ফেলবেন না, ময়েশ্চারাইজারের মতো করে লাগান এবং রেখে দিন ত্বকে।(২) লেবুর রসে যদি আপনার এলার্জি না থাকে তবে নিয়মিত লেবুর রস লাগান। দিনে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করুন। দ্রুত ফল পাবেন।(৩) মৌসুমি ফল ও সবজি দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। এতে থাকতে পারে আলু, শশা, গাজর, লাউ, বাঁধাকপি, এপ্রিকট, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি।(৪) দুধ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।(৫) মধু সামান্য গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালেও উপকার পাবেন।(৬) পার্সলি রসের সঙ্গে লেবুর রস, কমালার রস এবং গাজরের রস মিশিয়ে নিন সমান পরিমাণে। এটি ব্যবহার করতে পারেন আপনার রেগুলার ক্রিম ব্যবহার করার ঠিক আগে। এতে ফ্রিকেলস দেখা যাবে না।(৭) চিনি ও লেবুর রসের স্ক্রাব ভালো কাজে দেয়।(৮) কাঁচা হলুদের রস ও তিলের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।জল দিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে আক্রান্ত জায়গায় লাগান।(৯) নিয়মিত তরমুজের রস ব্যবহারে ফ্রিকেলসের দাগ হালকা হয় অনেকটাই।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকা, বয়সের প্রভাব, রোদে পোড়া, ড্রাগ নেওয়া, হরমোনের প্রভাব বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মুখের ত্বকে কালো বা ফ্যাকাশে অগণিত তিল দেখা যায়।এর কোনোটি সামান্য উঁচু হয়, আবার কোনোটি চামড়ার উপর অযাচিত তিলের রং ধরে। এই স্কিন পিগমেন্টেশন তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। লোমকূপের ফাঁকে ফাঁকে তেল জমে থেকে একসময় সমস্যাটি হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে নিজেই নিতে পারেন আরও কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থার মাধ্যমে। শিখে নেওয়া যাক, প্রাকৃতিকভাবে স্কিন পিগমেন্টেশন সারিয়ে তোলার সহজ উপয়।(১) টমেটো মাস্ক : এক চামচ পাকা টমেটোর রসের সঙ্গে এক চামচ ভেজানো ওটস ও আধা চামচ টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে হালকা মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। টমেটোর রস পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত কাজ করে থাকে। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন নিয়মিত ব্যাবহার করলে দ্রুত পিগমেন্টেশন দূর হবে।(২) হলুদের মাস্ক  : রোদে পোড়ার জন্য যে তৈরি পিগমেন্টেশন সারাতে হলুদ গুড়ো অনেক উপকারী। এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়োর সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি দিনেও ব্যাবহার করা যাবে। কিন্তু এটা লাগিয়ে কখনো রোদে মুখ শুকানো যাবে না, এতে করে স্কিন কালো হয়ে যেতে পারে।(৩) এলোভেরা জেল : শুধু এলোভেরা জেল সম্পূর্ণ মুখে ৩০ মিনিট অথবা সারারাত লাগিয়ে রাখুন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা লাগানোর ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। যে-কোনো ধরনের পিগমেন্টেশনের জন্য এলোভেরা জেল খুবই উপকারী। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতিদিন রাতে ব্যাবহার করতে পারেন। (৪) কমলার মাস্ক : স্কিন পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে আরেকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে কমলার রস। এক্ষেত্রে ১ চামচ কমলার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও আধা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। ফ্রেশ কমলার রশ না-পাওয়া গেলে কমলার শুকনো খোসা গুড়ো করেও এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করা যায়। এটা সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
তিল বিশ্বাসীরা এবার নিশ্চয় খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন ! ভাবছেন তিল ভ্যানিশ করে দিলে কী হবে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ ? আপনি ভাগ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেই পারেন, কিন্তু আমি ভাবব গবেষকদের নিদান। ব্রিটেনের প্রায় তিন হাজার জনের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, তিল বা আঁচিলের যে-কোনো অস্বাভাবিকতাই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।গবেষকদের মতে, শরীরে তিল বা আঁচিলের সংখ্যা থেকে ত্বকের ক্যান্সারের বিষয়ে ধারণা করা যায়।কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা প্রায় আট বছর ধরে নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন এবং সেসব নারীদের ত্বকের ধরন, তিল ও আঁচিলের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করেন।এর পাশাপাশি ত্বকের বিশেষ এক ধরনের ক্যানসার যেটিকে মেলানোমা বলা হয় ওই মেলানোমায় আক্রান্ত চারশোজন নারী ও পুরুষের ওপর গবেষণা চালান গবেষক দল।গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, যেসব নারীর ডান হাতে সাতটির বেশি তিল বা আঁচিল রয়েছে, তাদের ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।আর যাদের ডান হাতে ১১টির বেশি তিল বা আঁচিল আছে এবং সারা শরীরে একশোটির বেশি তিল বা আঁচিল আছে, তাদের মেলানোমার ঝুঁকি অনেক বেশি।গবেষকদের মতে, শরীরে কোনো তিল বা আঁচিল দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে বা ব্যথা হলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি কোনো ত্বকের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজনে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমানে জ্যোতিষবাবুরা জ্যোতিষকে শাস্ত্র বলে চালাতে চায়, অনেকে আবার একটু দুঃসাহসিক হয়ে বিজ্ঞানও বলে থাকেন। বেদে জ্যোতিষশাস্ত্রের কথা নেই।বৈদিক যুগে জ্যোতিষ বলতে বোঝাত দিন, বছর, ঋতু ইত্যাদির গণিতসিদ্ধ বিচার পদ্ধতি।সেখানে আছে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের সঙ্গে বৃষ্টি ও কৃষি সম্বন্ধীয় বিষয়। এই গ্রহ-নক্ষত্রদের সঙ্গে মানুষের ভাগ্য যুক্ত করা হয়নি।এই জ্যোতিষে ভবিষ্যকথন নেই, ভাগ্যকথা নেই, গ্রহ-নক্ষত্রের অহেতুক রাগরোষের কথা নেই। শুভাশুভ বিচার মুখ্য নয়। সংখ্যার রহস্যে আরোপ নেই। এই জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রিস যাযাবরদের হাত ধরে জ্যোতিষ হয়ে গেল।বস্তুত ভারতে গ্রিক শাসনের অবসানের পর রেখে গেছে মূর্তিপুজোর ধারণা, গণিত এবং অবশ্যই জ্যোতিষ।গ্রিকদের এই জ্যোতিষের মধ্যেই যেমন জ্যোতির্বিদ্যা ছিল, ছিল ঋতুকাল নির্ণয়।তেমনই গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণের আজগুবি বকওয়াস।এই বকওয়াসের জনক ছিলেন ব্যাবিলনের রাজারা, যাঁরা একইসঙ্গে পুরোহিত। তৎকালীন সমাজে ধর্মযাজকরাই শাসক হতেন। সম্ভবত ইরানের আয়াতোল্লা খোমেইনিই ছিলেন সর্বশেষ ধর্মীয় শাসক।যাই হোক, ব্যাবিলন থেকে গ্রিস, গ্রিস থেকে ভারতে সংক্রামিত হল জ্যোতিষ-ভণ্ডামি।আলেকজান্ডারের আগমনের পর থেকে ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়কাল ‘ফলিত-জ্যোতিষ’, অর্থাৎ মানুষের ভাগ্য গণনার বকওয়াস পদ্ধতি ভারতে টিমটিম করত -- যত দিন যাচ্ছে,  মানুষের চাহিদা বাড়ছে, না-পেয়ে হতাশ হচ্ছে ততই জ্যোতিষীবাবুদের রমরমা বাড়ছে। গলিতে গলিতে এখন জ্যোতিষী গড়াচ্ছে। হোর্ডিংয়ে ছড়াছড়ি। কত জ্যোতিষবাবু সরকারি চাকরিও করছেন, তৎসহ অতিরিক্ত রোজগার করছেন হাত দেখে, পাথর বেচে। অফিসের কলিগদের কাছেও পাথর বেচছেন। অথচ তৎকালীন সময়ে এইসব গ্রিক যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষরা ব্রাত্য বা পতিত বলে বিবেচিত হত (‘বৃহৎসংহিতা’ পড়ুন)।বৈদিক যুগে যে ভাগ্য বিচার ছিল ব্রাত্য, সেই ব্রাত্য সমাজের উঁচুস্তরে উঠে এসেছে এক শ্রেণির অন্ধ মানুষদের জন্য।
ভারতীয় জ্যোতিষীদের কাছে বরাহমিহিরই ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রের জনক। তিনিই ভারতীয় ফলিত-জ্যোতিষের, অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে ভাগ্যযুক্ত তত্ত্ব আদলটি সৃষ্টি করেন। কোন্ গ্রহদোষ কাটাতে কোন্ রত্ন ধারণ করতে হবে সেটাও বরাহমিহিরের মস্তিষ্কপ্রসূত। বরাহমিহিরের সময়কালে ফলিত-জ্যোতিষকে ‘যবনশাস্ত্র’ বলা হত।আর্যরা এদেরকে ঘৃণা করতেন। গ্রিক যাযাবরেরাই মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ বলে রোজগার করত, পেট চালাত। বস্তুত সমাজে ভাগ্য-গণকদের কোনো মর্যাদা ছিল না। ‘ম্লেচ্ছ’ বলে অবজ্ঞা করা হত।অবশ্য ভাগ্য-গণকদের হয়ে বরাহমিহিরই এগিয়ে এলেন। বরাহমিহির বুঝলেন মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিলে মানুষ খুব খুশি হয়। মানুষকে খুশি করলে রোজগারও মন্দ হয় না। অতএব বরাহমিহিরই ভাগ্য-গণকদের জাতে তুলতে উঠেপড়ে লাগলেন।কিছু বইপত্রও লিখে ফেললেন।মনে রাখতে হবে, এই বরাহমিহিরই আর্যভট্টের আহ্নিক গতি তত্ত্ব মানতেন না।আর্যভট্টের সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ তত্ত্বও বিশ্বাস করতেন না।আমরাও কি আর্যভট্টের সিদ্ধান্ত বা তত্ত্ব মানলাম ! যদি মানতাম তাহলে আর্যভট্টের চাইতে বরাহমিহির কিংবদন্তি হতে পারত না। ভারতে আজ আর্যভট্ট চরম উপেক্ষিত, অপরদিকে বরাহমিহিরের পুজো হচ্ছে।বরাহমিহিরের মতো ব্রহ্মগুপ্তও আর্যভট্টকে মানতেন না। ব্রহ্মগুপ্ত আর্যভট্টের গ্রহণতত্ত্বকে না-মেনে রাহু-কেতুর গল্পকেই বিশ্বাস করতেন। ভাবা যায়, ইনিই নাকি ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চায় বিশিষ্ট ব্যক্তি !
বিজ্ঞানের কিছু প্রাচীন শাখার মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানও একটি সময় পর্যন্ত জ্যোতিষশাস্ত্রের মতো অপ-বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ভেবে দেখুন তো, কেমিস্ট্রি মানে রসায়ন ছিল অ্যালকেমি বিদ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত।কারণ প্রাচীনকালে পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা ও গাণিতিক হিসাব পদ্ধতি অনুন্নত থাকার ফলে সে সময় ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ তালগোল পাকিয়ে এ ধরনের অপ-বিজ্ঞানের জন্ম নেয়। যাই হোক, সেই সময়কার মানুষজন রাতের আকাশ দেখে বুঝতে পেরেছিল যে, বছরের বিভিন্ন সময়ে কিছু নিদিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডলের আবির্ভাব ঘটে। এসব পর্যবেক্ষণ তাদেরকে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সম্পর্কে বেশ আগে থেকেই পূর্বাভাস দিতে পারত। যেমন মিশরের প্রাণ নিলনদের বন্যা বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে হত এবং বন্যায় ভেসে আসা পলিতে উর্বর জমিতে ভালো চাষ হত। একটি নিদিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডলে সূর্যের অবস্থানই তাদের বন্যার আগমনের কথা জানান দিত। এইভাবে ক্রমেই তারা চন্দ্র–সূর্য-নক্ষত্রের নিয়মবদ্ধ চলাচল আবিষ্কার করেছিল এবং আকাশে চন্দ্র–সূর্য–নক্ষত্রের অবস্থান ধীরে ধীরে তাদের ধর্মীয়, সামাজিক রীতিনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। আকাশে চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্রের নিয়মবদ্ধ চলাচল আবিষ্কার হওয়ার ফলে ‘বর্ষপঞ্জি’ তৈরি হয়। কোথাও তৈরি হয় সৌর বর্ষপঞ্জি, আবার কোথাও চন্দ্র বর্ষপঞ্জি ।সুমেরীয়রা ও ব্যাবিলনীয়ানরাই প্রথম বছরকে ১২ টি মাসে ভাগ করে ।জ্ঞাত তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন নক্ষত্র মণ্ডলের উপস্থিতি দেখে ব্যাবিলনীয়ানরাই ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সর্বপ্রথম রাশিচক্র প্রণয়ন করে ।পরে তা মহাবীর আলেকজান্ডারের হাত ধরে মিশর, গ্রিসে, ভারতে আসে। এছাড়া ব্যাবিলনীয়ানরা ৭৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দেই তখনকার আবিষ্কৃত পাঁচটি গ্রহের সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক তালিকা প্রণয়ন করেন। এর প্রায় ৯০০ বছর পর এই তালিকা ব্যবহার করে টলেমি গণিত সহযোগে ভূকেন্দ্রিক মানে পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্ব মডেলের ধারণা দেন। কোপার্নিকাসের পূর্ব পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই মডেলের ব্যাপক প্রভাব ছিল। আর এটিই এখন জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রামাণ্য মডেল। এই টলেমিতেই জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যোতিষশাস্ত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।একদিকে তার ‘আলমেজেস্ট’ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক অনন্য গ্রন্থ, অপরদিকে তাঁর ‘টেট্রাবিবলস’ জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, বলতে গেলে এটি জ্যোতিষীদের কাছে বাইবেলের মতো। অর্থাৎ, সে সময় একই ব্যক্তি একসঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করত। আর সে সময়ের রাজা বাদশাহদের জ্যোতির্বিজ্ঞানের বদলে জ্যোতিষশাস্ত্রে পৃষ্ঠপোষকতা এর অন্যতম একটি কারণ। তবে জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলাদা বা স্বতন্ত্র  হতে শুরু করল ষোড়শ শতকে কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক সৌর মডেলের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে।এর ফলে টলেমির ভূকেন্দ্রিক মডেল বাতিল হয়ে যায়। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে কেপলারের (১৫৭১-১৬৩০) পর থেকেই এই দুটি বিষয় পৃথকভাবে চর্চা হতে শুরু করে। কেপলারের সকল কাজ জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর হলেও তাঁর মাঝে জ্যোতিষশাস্ত্রের ভালো রকমের চর্চা লক্ষ করা যায়। পর্যবেক্ষণ ও গাণিতিক হিসাব পদ্ধতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কোপার্নিকাস, টাইকো, কেপলার, গ্যালিলিওদের হাত ধরে ধারাবাহিক ক্রমবিকাশের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান তাঁর আজকের অবস্থানে এসেছে। অপরপক্ষে ধীরে ধীরে রাজতন্ত্র বিলোপ এবং জ্যোতিষীদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় উপস্থিতি, কদর হ্রাস পেতে থাকলে এই শাস্ত্রটির ব্যাপক ভাবে সামাজিকীকরণ ঘটে।
কাকে বলবেন ! ভূত তো সরষের মধ্যেই ঢুকে বসে আছে। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় শিক্ষিতজন বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত জ্যোতিষ বিশ্বাস করে, এরাও কোনো যুক্তি-ব্যাখ্যা-কার্য-কারণের ধার ধারে না। এ যেন আর্ক লাইটের নীচে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের গায়ে কালি ঢেলে দেওয়া। সেই কারণে এরাও দিন-ক্ষণ-তিথি-নক্ষত্র বিচার করেই বিয়ে-শ্রাদ্ধ-অন্নপ্রাশন-গৃহপ্রবেশ করে থাকেন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও দিন-ক্ষণ মেনেই প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসেন। চলচ্চিত্রের পরিচালক- অভিনেতাও দিন-ক্ষণ দেখেই শুভ মহরৎ করেন। এমনকি সেই মুভি যদি জ্যোতিষ ও জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধেও হয়, সেটাও দিন-ক্ষণ দেখেই হবে। দিন-ক্ষণ-তিথি-নক্ষত্রের কথাই যখন উঠল, তাহলে বাঙালিদের একমাত্র প্রিয় গ্রন্থ ‘পঞ্জিকা’ নিয়ে আলোকপাত করা যাক। এমন একটি বাঙালি হিন্দুঘর পাওয়া যাবে না, যাঁর ঘরে ‘পঞ্জিকা’ নেই। অবশ্য শুধু বাঙালি-হিন্দু নয়, ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও ‘শুভদিন’ দেখার প্রথা আছে।
বর্ষপঞ্জি বা পঞ্জিকাকে বাদ দিয়ে ধর্মপ্রাণা ভিতু মানুষদের এক দণ্ডও চলে না। জ্যোতিষবাবুদের মতেপঞ্জিকা’ বছরের প্রতিদিনের তারিখ, তিথি, শুভাশুভ ক্ষণ, লগ্ন, যোগ, রাশিফল, বিভিন্ন পর্বদিন ইত্যাদি সংবলিত গ্রন্থ। একে পঞ্জি বা পাঁজিও বলা হয়। প্রাচীন  সংস্কৃত সাহিত্যে একে বলা হয়েছে ‘পঞ্চাঙ্গ’। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি এই নামে পরিচিত। এর কারণ এতে বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণ প্রধানত এই পাঁচটি অঙ্গ থাকে। বাংলায় অবশ্য এটি ‘পঞ্জিকা’ নামেই সুপরিচিত। সভ্যতা বিকাশের শুরু থেকেই সমাজসচেতন ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনায় কালবিভাগের ধারণাটি আসে। প্রয়োজনের তাগিদে তখন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপায়ে বছর, মাস, দিন ও তারিখ গণনার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। কালক্রমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের পাশাপাশি পূজা-পার্বণের সময় নিরূপণও পঞ্জিকা প্রণয়নের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কালনিরূপণে বিভিন্ন দেশে ভিন্নরকম পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে। বৈদিক যুগের ঋষিরা বিভিন্ন ঋতুতে নানারকম পূজা-পার্বণ করতেন। সেই কারণে তাঁরা বিশেষ ঋতুবিভাগের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাঁরা ঋতুভিত্তিক বছর হিসাব করে বছরকে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন এই দু-ভাগে ভাগ করতেন। সূর্য উত্তরদিকে আগমন করা থেকে উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণদিকে যাত্রা করা থেকে দক্ষিণায়ন গণনীয় হত। প্রাচীন মনীষিগণ বছরকে বারো ভাগে বিভক্ত করেন। যেমন -- তপঃ, তপস্যা, মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ইষ, ঊর্জ, সহস্ ও সহস্য। তপঃ থেকে শুচি পর্যন্ত উত্তরায়ণ এবং নভস্ থেকে সহস্য পর্যন্ত দক্ষিণায়ন। অনুমান করা হয় যে, এরূপ সময়বিভাগ যর্জুবেদের কালে (১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) প্রচলিত ছিল। তিথির প্রচলন হয় অনেক পরে। শুধু সেই সময়কালে পূর্ণিমা, অমাবস্যা ও অষ্টকা ব্যবহৃত হত। কৃত্তিকা নক্ষত্র থেকে গণনা করে ২৭টি বা ২৮টি নক্ষত্রে ভূচক্রকে বিভক্ত করা হত। এটাই এতদঞ্চলের পঞ্জিকা গণনার আদিরূপ। বৈদিক সাহিত্যে ফাল্গুনী পূর্ণিমার উল্লেখ পাওয়া যায়। এতে অনুমিত হয় যে, তখন চান্দ্রমাস গণনার প্রচলন ছিল, যা পূর্ণিমান্ত মাস নামে পরিচিত।
১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি পঞ্জিকায় বছর আরম্ভ হত উত্তরায়ণ দিবস থেকে এবং তাতে ১২টি চান্দ্রমাস ব্যবহূত হত। এই পঞ্জিকায় ৩০টি তিথি এবং ২৭টি নক্ষত্র গণনার নিয়ম ছিল। তখন প্রতি পাঁচ বছরে একটি যুগ গণনা করা হত এবং এক যুগ পরপর এই পঞ্জিকা গণনার পদ্ধতি আবর্তিত হত। ওই সময় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তিথ্যন্ত প্রভৃতি কাল গণনার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। মাত্র মধ্যমমানে প্রতিদিন এক তিথি এক নক্ষত্র এই হিসেবে তিথ্যাদি নির্ণয় করা হত এবং মাঝে মাঝে এক-একটি তিথি হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হত। পঞ্চবর্ষাত্মক যুগ ব্যতীত কোনো অব্দ গণনার প্রথা তখনও প্রবর্তিত হয়নি। দেড় হাজার বছর ধরে কালগণনা ও পূজা-পার্বণের সময় নিরূপণের কাজে এরূপ বেদাঙ্গজ্যোতিষ পঞ্জিকা খুবই সমাদৃত ছিল। গবেষকরা খ্রিস্টীয় চতুর্থ বা পঞ্চম শতকে তাঁরা সূক্ষ্ম গণনার কৌশল আয়ত্ত করেন। এসব বিষয়ে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাঁরা হলেন আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত প্রমুখ। তাঁরা পঞ্জিকার গণনাকে জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিথ্যাদির সূক্ষ্ম কালগণনার সূত্রাদি দ্বারা দৈনিক গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, লগ্ন, ক্ষণ, তিথি প্রভৃতির পূর্তিকাল পঞ্জিকার মধ্যে পরিবেশনের ব্যবস্থা করেন। এতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সহজেই পঞ্জিকা থেকে পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে সূর্যসিদ্ধান্ত জ্যোতির্বিদ্যার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মূল্যবান গ্রন্থ। পরে সূর্যসিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই পঞ্জিকার সবকিছু গণনা করা হত। পঞ্জিকার মধ্যে তখন স্থান পেত বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণযুক্ত প্রতিদিনের পঞ্চাঙ্গ এবং তা তালপাতায় লিপিবদ্ধ করে গণকঠাকুর বা ব্রাহ্মণরা বছরের প্রারম্ভে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে মানুষদেরকে অবহিত করতেন বা জনগণের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অনুলিপি সংরক্ষণ করতেন। এসবের ভিত্তিতে পূজা-পার্বণাদি বা ধর্মকৃত্য সাধনের কালও নির্ণয় করা হত।
সিদ্ধান্ত জ্যোতিষশাস্ত্রের উদ্ভবের আগে পঞ্জিকায় দৈনন্দিন গ্রহাবস্থান লেখা হত না। ক্রমে ক্রমে পঞ্চাঙ্গের সঙ্গে গ্রহসঞ্চারকালও পঞ্জিকায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। বিগত ১০০ বছরের অধিককাল যাবৎ বাংলা পঞ্জিকা মুদ্রিত হচ্ছে। পঞ্জিকায় এখন ফলিত জ্যোতিষের অনেক কিছু অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের দৈনিক অবস্থানসমূহও পাওয়া যাচ্ছে। এখনকার পঞ্জিকায় ফলিত জ্যোতিষও বিশেষ স্থান দখল করেছে। জনগণের চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখে এখন পঞ্জিকায় বর্ষফল, মাসফল, রাষ্ট্রফল, দৈনিক রাশিফল প্রভৃতি মুদ্রিত হচ্ছে।
প্রাচীনের মধ্যে স্মার্ত  রঘুনন্দন সম্পাদিত নবদ্বীপ পঞ্জিকার নাম পাওয়া যায়। রঘুনন্দনের পরে এর গণনার দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে রামরুদ্র বিদ্যানিধি (রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে) এবং বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব। কিছুদিন পরে এর গণনাকার্য বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ আমলে কৃষ্ণনগরের জনৈক সমাহর্তার প্রচেষ্টায় বিশ্বম্ভর পুনরায় পঞ্জিকা প্রকাশের কার্যক্রম আরম্ভ করেন। এটি তখন পুথির আকারে লিখিত হত। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকাটি মুদ্রিতাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন এটিই ছিল প্রথম মুদ্রিত পঞ্জিকা। পরবর্তীকালে ১২৯৭  বঙ্গাব্দ (১৮৯০) থেকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। অনুরূপ পঞ্জিকা বোম্বাই ও পুনা থেকেও প্রকাশিত হয়। পঞ্জিকার সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে একটি পঞ্চাঙ্গ শোধন সমিতি (ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি) গঠন করে প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির গণনাপদ্ধতির নিরীক্ষা ও প্রয়োজনবোধে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সমিতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পঞ্জিকা প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। সে মতে ভারতে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। বর্তমানে তা ১২টি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলা পঞ্জিকায় বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি সনের তারিখ, মাস ও বছরের উল্লেখ থাকে। বাংলা বর্ষপঞ্জি গণনার সনাতন নিয়মে কোন্ বছরের কোন্ মাস কত দিনে হবে তা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তা ছাড়া উক্ত গণনাপদ্ধতিতে কোনো মাস ২৯ দিনে আবার কোনো মাস ৩২ দিনে হয়ে থাকে। এ বিষয়টিকে জীবনের সর্বত্র বাংলা সন ব্যবহারের প্রধান অন্তরায় হিসাবে বিবেচনা করে ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মোহম্মদ শহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত সংস্কার কমিটির প্রস্তাব অনুসারে বছরের প্রথম ৫ মাস ৩১ দিনের এবং পরবর্তী ৭ মাস ৩০ দিনের করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে সরকারিভাবে খ্রিস্টীয় সনের পাশাপাশি বাংলা সন লেখার রীতি চালু হয় এবং তখন থেকে শহিদুল্লাহ কমিটির প্রস্তাবিত গণনাপদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির সম্পৃক্তির বিষয়টি মনে রেখে এবং প্রস্তাবিত গণনাপদ্ধতিকে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ও গ্রেগরীয় বর্ষগণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে একই বছর বাংলা একাডেমিতে একটি শক্তিশালী বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। পঞ্জিকাকে আরও উন্নত ও ত্রুটিমুক্ত করার জন্য ১৯৯৫ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রেরণায় একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়। পঞ্জিকা সংস্কারের জন্য তাদের সুপারিশ ছিল এরকম – (১) সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতিমাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে। (২) গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে, সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষরূপে গণ্য করা হবে এবং সেই বছরের ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণনা করা হবে। (৩) ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে এটি কার্যকর হবে এবং তারিখ পরিবর্তনের সময় হবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসারে রাত ১২টায়। জনকল্যাণে গৃহীত এ পদক্ষেপ সর্বত্র প্রশংসিত হয়।
পঞ্জিকার ক্ষেত্রে চাঁদের তিথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। পূর্ণ চান্দ্রমাসের স্থায়িত্ব ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা, ৪৩ মিনিট ১২ সেকেন্ড বা ২৯.৫ দিন। চাঁদ ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করে ২৯.৫ দিনে, তা হলে এক দিনে অতিক্রম করে ৩৬০ ÷ ২৯.৫ = ১২.২০ ডিগ্রি, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রম করে ১২.২০ ডিগ্রি। তার মানে এক দিনের চাঁদ পশ্চিম দিগন্তের ১২.২০ ডিগ্রি ওপরে ওঠে। আবার চাঁদ যখন অস্ত যায় তখন ১ ডিগ্রি অতিক্রম করতে সময় লাগে ৪ মিনিট, তা হলে ১২.২০ ডিগ্রি অতিক্রম করতে লাগে ১২.২০ x ৪ = ৪৮.৮০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৫০.৫২ মিনিট বা ৫১ মিনিট। অর্থাৎ প্রথম দিনের চাঁদ ৫১ মিনিটের বেশি পশ্চিম আকাশে থাকতে পারে না।
এই হল পঞ্জিকা। বস্তুত তিথি ও দিনের অংশকে বিভিন্ন করণ এবং যোগ নাম দিয়ে, তাদের শুভ অথবা অশুভ হিসাবে নির্ণয় করা সম্পূর্ণভাবে কল্পনাবিলাস, অবৈজ্ঞানিক জ্যোতিষগিরি ! একটু আলোচনা করা যাক।মূলগতভাবে ভারতে দুই প্রকারের পঞ্জিকা দেখা যায়। একটি দৃকসিদ্ধ, অপরটি অদৃকসিদ্ধ। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গ ইত্যাদি হল দৃকসিদ্ধান্ত। অন্যটি গুপ্তপ্রেস, পি এম বাগচি ইত্যাদি পঞ্জিকাগুলি অদৃকসিদ্ধ (বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালিরা ‘লোকনাথ ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা’ এবং মুসলিম বাঙালিরা ‘মোহাম্মদী পকেট পঞ্জিকা’ অনুসরণ করেন)। দূরবীন দিয়ে দেখা জ্যোতিষ্কদের অবস্থানের সঙ্গে গণিতের অবস্থানের সমন্বয় সাধনের নিরন্তর প্রক্রিয়ার ফলে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এফিমেরিসে অবস্থানগত নির্ভুল তথ্যাদি পাওয়া যায়। দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা জ্যোতিষ্কদের অবস্থান সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এফিমেরিস থেকে সংগ্রহ করা হয়।প্রতিনিয়ত সব তথ্য আপডেট হয়ে থাকে। অপরদিকে, আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থের উপর ভিত্তি করেই অদৃকসিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রণেতাদের যত দৌড়াদৌড়ি।সূর্যসিদ্ধান্ত যে সময় রচিত হয়েছিল তখনও পর্যন্ত দূরবীন আবিষ্কার হয়নি।খালি চোখে জ্যোতিষ্কদের কতটুকু দেখা যায়! বস্তুত অদৃকসিদ্ধ পঞ্জিকার প্রণেতারা সূর্যসিদ্ধান্ত অনুসারে যে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান গণনা করেন তা প্রকৃত অবস্থানের সঙ্গে এক্কেবার মেলে না। কারণ বিশাল মহাকাশে গ্রহদের নির্ভুল অবস্থান জানার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের ‘অয়নচলন’ সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থে নেই। অদৃকসিদ্ধান্ত অনুসারে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ নির্ণয় করলে সব গুবলেট হয়ে যাবে। তাই এঁরা সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ নির্ণয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারেই করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে অদৃকসিদ্ধান্তের প্রণেতাদের একমাত্র অবলম্বন ‘বাণবৃদ্ধিরসক্ষয়’।‘বাণবৃদ্ধিরসক্ষয়’ সূত্র অনুসারে তিথি বৃদ্ধি ৬৫ দণ্ডের বেশি এবং তিথি হ্রাস ৫৪ দণ্ডের কম হবে না, জ্যোতির্বিজ্ঞান এ সংজ্ঞা মেনে চলে না।
আমাদের পঞ্জিকায় যেন দেবতার বাণী। পঞ্জিকা ছাড়া এক পা-ও চলতে পারে না। কতটুকু মানেন ? ঠিক যতটুকু ব্যক্তিগতভাবে কোনো অসুবিধা হয় না ততটুকুই। সামান্যতম অসুবিধা থাকলে নিকুচি করেছে পঞ্জিকার ! অতএব নৈব নৈব চ। পঞ্জিকা বলছে – রবিবারের পঞ্চম, সোমবারের দ্বিতীয়, মঙ্গলবারের ষষ্ঠ, বুধবারের তৃতীয়, বৃহস্পতিবারের সপ্তম, শুক্রবারের চতুর্থ, শনিবারের যামার্দ্ধ এগুলিকে বলে কালবেলা। কালবেলা মানে, এ সময় যাত্রা করলে মৃত্যু হয়, বিবাহ দিলে কন্যার মৃত্যু হয়, মাথা ন্যাড়া করলেও মৃত্যু অনিবার্য। কে আছেন ? কোন্ নিকম্মা মেনে চলেন এসব নিষেধাজ্ঞা ? ভাবুন তো, বলছে আপনি যদি এমন কোনো বারে সেই বারের অধিপতির দিকে পিছন ফিরে যাত্রা শুরু করে, তাহলে তার মৃত্যু ঠেকায় কে ! কে ঠেকায় জানি না। তবে আমি নিজে বহুবার এ ধরনের যাত্রা করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই আছি। দিকশূলের বিধান শুনবেন নাকি ? শুনুন – রবিবার ও শুক্রবারে পশ্চিমদিক, মঙ্গলবার ও বুধবারে উত্তরে, সোমবার ও শনিবারে পূর্বে এবং বৃহস্পতিবারে দক্ষিণে যাত্রা করলে ভয়ানক বিপদ। ‘যাত্রা নাস্তি’ বলছে যে ! বিবাহ প্রকরণে বলছে – দিনের বেলা বিয়ে করা চলবে না। দিনের বেলায় বিয়ে করলে কন্যা পুত্রকন্যাবিবর্জিতা হন, বিরহানলদগ্ধা ও স্বামীঘাতিনী হয়, উচ্চবর্ণের কোনো মেয়েকে যদি নিম্নবর্ণের ছেলে বিয়ে করে তাহলে নির্ঘাত মৃ্ত্যু। আমি প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে দেখেছি রাত্রিবেলা অভ্যাগত অতিথিদের জন্য নিরাপদ নয় বলে দিনেরবেলাতেই বিয়ে সহ সমস্ত মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় । অন্যান্য ধর্মেও বিয়ে অনুষ্ঠান দিনেরবেলাতেই হয়। এ নিয়ম এ বিধান যদি বুজরুকি না-হয়, তাহলে তো গ্রাম-গঞ্জ-অন্য ধর্মের সমাজ তো বিধবায় ভরে যেত, পুত্রকন্যাহীনা কন্যায় ভরে যত সেসব অঞ্চল।এখানেই শেষ নয়, পঞ্জিকা বলছে – “সুখপ্রসবমন্ত্র অশত্থপত্রে লিখিয়া প্রসূতির কেশের সহিত বাধিয়া দিলে প্রসবে কষ্ট হয়না।” হয়েছে নাকি এমন কোনো মিষ্টিমধুর অভিজ্ঞতা, কোনো অভিজ্ঞতা ? এমন ঘটনা কি ঘটেছে কারোর, কখন আপনার সন্তান যন্ত্রণাহীন ভূমিষ্ঠ হয়ে গেছে আপনি বুঝতেই পারেননি ?
সাহা পঞ্জিকা কমিটির প্রস্তাব অনুসারে ভারত সরকার বাংলা দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা ‘রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গ’ রচিত হয়।রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গতেও সংযোজিত হয়েছে পৈতে, অন্নপ্রাশন, বিয়ের দিনক্ষণ, গণ-দশা, শুভাশুভ বিচার। দৃকসিদ্ধ পঞ্জিকা ‘বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত’-এ পাওয়া যাবে শুভদিনের নির্ঘণ্ট, তর্পণবিধি, নিত্যপূজাবিধি, জ্যোতিষ বচনার্থ, শবদাহ ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত বর্ষফল, রাষ্ট্রগত বর্ষফল, স্তব-কবচ প্রকরণ, ব্রত প্রকরণ ইত্যাদি।ভাষাচার্য সুকুমার সেন পঞ্জিকা বা পাঁজি  প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন – প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের পাঁজির মূল পার্থক্য হল, আমাদের পাঁজি ধর্মকর্ম করার জন্য। ওদের পাঁজি জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা করে। পাওয়া যায় কবে জোয়ারভাটা হবে, কোনদিন চাঁদের আলো পাওয়া যাবে, কোনদিন চাঁদের আলো পাওয়া যাবে না ইত্যাদি।অপরদিকে আমাদের পাঁজি জ্যোতিষবিজ্ঞানের চর্চা করে।তার সঙ্গে শ্রাদ্ধ-শান্তি জাতীয় পারফরমেন্স মিলেছে। তাই বলি আমাদের পাঁজিটা বুজরুকি।
আমি কালিদাস নামে এক জ্যোতিষবাবুকে জানতাম তিনি হাত-পা দেখতেন না, তিনি কেবলই রাশি রাশি কোষ্ঠী তৈরি করতেন। বেশিরভাগ হাত-পা দেখা জ্যোতিষবাবুরা কোষ্ঠী তৈরি করেন না। ওটা করা নাকি খুবই হ্যাপা ! তাই অন্য কোনো অভিজ্ঞ জ্যোতিষবাবুকে দিয়ে অল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে করিয়ে নেন। কোষ্ঠীর বিজ্ঞান-অপবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনার আগে জ্যোতিষবাবুরা কী বলছেন সেটা দেখে নিই।
কোষ্ঠী হল জন্মপত্রিকা। এতে নবজাতকের জন্মসময়ে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও সঞ্চরণ অনুযায়ী তার সমগ্র জীবনের শুভাশুভ নির্ণয় করা হয়। খ্রিস্টপূর্বকালে ভারতবর্ষে কোষ্ঠী গণনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের পরে শাকদ্বীপ (পারস্য-কান্দাহার-সাইথিয়া-কাশ্মীরের উত্তরের দেশ) থেকে আগত জনগোষ্ঠী এ দেশে কোষ্ঠী গণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করে বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টীয় ছয় শতকের ভারতীয় জ্যোতিষী বরাহমিহিরের গ্রন্থে কোষ্ঠীপদ্ধতির প্রথম পরিচয় পাওয়া যায়। তাই অনুমান করা হয়, এর দু-তিনশ বছর পূর্বে ভারতবর্ষে কোষ্ঠী গণনা শুরু হয়। কোষ্ঠী গণনা পাশ্চাত্যের অনেক দেশেও প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত আছে। কোষ্ঠী গণনার ক্ষেত্রে রাশি, গ্রহ ও লগ্ন তিনটি প্রধান বিষয়। মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন – এই বারোটি রাশি  এবং রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু – এই নয়টি গ্রহকে একটি চক্র বা ছকে বারোটি প্রকোষ্ঠে এ রাশিগুলি দেখানো হয়। পরে  পঞ্জিকা অনুযায়ী জাতকের জন্মকালে গ্রহগুলির রাশিভিত্তিক অবস্থান নির্ণয়পূর্বক উক্ত চক্র বা ছকে রাশি অনুযায়ী গ্রহগুলির নামের আদ্যক্ষর লেখা হয়। এরপর লগ্ন নির্ণয় করে লগ্নবোধক রাশিটিকে ‘লং’ শব্দ দ্বারা নির্দেশ করলেই জন্মপত্রিকা তৈরি হয়ে যায়।
কোষ্ঠী গণনার এই চক্র বা ছকের অঙ্কনপদ্ধতি সর্বত্র একরকম নয়। ভারতবর্ষেই তিন রকম এবং পাশ্চাত্যে অন্যরকম। দক্ষিণ ভারত ব্যতীত অন্য সব স্থানের চক্রের গতি বামাবর্তী। বঙ্গদেশ ও দক্ষিণ ভারতের রাশিচক্র স্থির -- মেষ রাশি থাকে সর্বদা শীর্ষদেশে এবং লগ্ন পরিবর্তনশীল। কিন্তু উত্তর ভারত ও পাশ্চাত্যে রাশিচক্র স্থির নয়, যে-কোনো স্থানে রাশি অবস্থান করতে পারে, তবে লগ্ন সর্বদাই একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। উত্তর ভারতের ছকে লগ্ন থাকে শীর্ষদেশে এবং পাশ্চাত্যে থাকে বাম পাশে।প্রতিটি রাশির নির্দিষ্ট অধিপতি গ্রহ থাকে, যেমন মকর ও কুম্ভ রাশির অধিপতি শনি, মীন ও ধনু রাশির বৃহস্পতি, মেষ ও বৃশ্চিক রাশির মঙ্গল, বৃষ ও তুলা রাশির শুক্র, মিথুন ও কন্যা রাশির বুধ, কর্কট রাশির চন্দ্র এবং সিংহ রাশির রবি। লগ্ন হল সূর্য কর্তৃক মেষাদি রাশি সংক্রমণের মুহূর্ত, অর্থাৎ সূর্য যখন যে রাশিতে অবস্থান করে তখন লগ্নও হয় সে রাশির নামানুসারে। যেমন সূর্যের মেষ রাশিতে অবস্থানকালে যদি কারও জন্ম হয় তাহলে তার লগ্ন হবে মেষলগ্ন। লগ্নের মেয়াদ হল দুই ঘণ্টা, অর্থাৎ দুই ঘণ্টা পরপর লগ্ন পরিবর্তিত হয়। কোষ্ঠী তৈরির সময় এ রাশি, গ্রহ ও লগ্ন নির্ণয়ে কোনোরূপ ভুল হলে জাতকের ভবিষ্যৎ গণনাও ভুল হবে। কোষ্ঠী অনুযায়ী কারও ভবিষ্যৎ গণনার সময় তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বারোটি ভাগে ভাগ করা হয়, যার নাম ‘ভাব’। বারোটি ভাব হচ্ছে তনু (শরীর), ধন, সহজ (সহোদর), বন্ধু (এবং মাতা), পুত্র (এবং বিদ্যা), রিপু (এবং রোগ), জায়া (বা স্বামী), নিধন (মৃত্যু), ধর্ম (এবং ভাগ্য), কর্ম (এবং পিতা), আয় ও ব্যয়। যে রাশিতে লগ্ন অবস্থিত সেখান থেকে তনুর বিচার শুরু হয়, তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভাব গণনা করা হয়। কোষ্ঠীবিচারের এসব মূল সূত্র প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সর্বত্রই প্রায় একরকম। তবে ভারতীয় জ্যোতিষে একটি বিশেষ বিষয় হল দশা গণনা পদ্ধতি। জাতকের ভবিষ্যৎ জীবনে কখন কী ঘটবে তা এ পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়। জাতকের জন্মনক্ষত্র অনুযায়ী দশা নির্ণীত হয়। দশা গণনার ৪২ রকম পদ্ধতি থাকলেও অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী পদ্ধতি দুটিই বেশি ব্যবহৃত হয়। অতীতে সম্ভ্রান্ত পরিবারে নবজাতকের কোষ্ঠী তৈরি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। কোষ্ঠী তার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত বিবাহের ক্ষেত্রে গুরুত্ব সহকারে বিচার করা হত। পাত্রপাত্রী উভয়ের কোষ্ঠী বিচার করে কোনো বিষয়ে কোনো অশুভযোগ দেখা না-গেলে তবেই তাদের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হত। বর্তমানে কোষ্ঠী তৈরির তেমন প্রচলন না-থাকলেও জন্মানোর ও জন্মক্ষণ অনুযায়ী রাশি নির্ণয় করে হস্তরেখাবিদগণ মানুষের ভাগ্যগণনা করে থাকেন এবং  হস্তরেখাবিদ্যা এখন একটি প্রায়োগিক বিদ্যা হিসেবে সমাজে প্রচলিত। (কৃতজ্ঞতা : দুলাল ভৌমিক)
জটিলতা এবং অনিশ্চয়তায় ভরা আমাদের জীবন।জীবন ছোটোই হোক কিংবা বড়ো – অনেক চড়াই-উৎড়াই পথ বেয়ে চলতে হয় সকলকে।অনেক ঘটনার স্রষ্টা আমরা নিজেরা হলেও, সব ঘটনাই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।তবে আপনি আমগাছ পুঁতলে কখনোই সেই গাছে আম না-ফললেও জাম ফলতে পারে না।ফলাতেও পারবেন না।যেমনভাবে জীবন গড়বেন ফল পাবেন তেমনই। খুব বেশি অন্যথা হয় না, যদি ফাঁকি না-থাকে।কোষ্ঠীতে যাই-ই লেখা থাক, সব বদলে যাবে আপনার অধ্যবসায়ে। কত বদলে যায় এরকম ! কোষ্ঠীতে লেখা অনেক কিছুই মেলে না। আমরা মেলানোর ভান করি। ছল করি। যা মেলে তাতে মানুষের কিছু যায় আসে না। কোষ্ঠীতে হয়তো আছে ২৩ বছর বয়সে জাতক/জাতিকা মাথার কোনো সমস্যা হতে পারে। দেখা গেল ২৩ বছর বয়সে জাতকের পিতৃবিয়োগ হওয়ার দরুন মস্তক মুণ্ডন করতে হল। কোষ্ঠী পিতৃবিয়োগের সংবাদ আগাম না-জানাতে পারলেও মাথার মুণ্ডন অবস্থাকে ‘মাথার সমস্যা’ বলে মিলিয়ে দেওয়া যাবে !
সিন্ধুলিপি এখনও পড়তে পারিনি ঠিকই, কিন্তু মানুষের বিধিলিপি পড়ে ফেলতে জ্যোতিষবাবুরা খুবই পটু। আপনার মৃত্যু পর্যন্ত জ্যোতিষবাবুরা দেখতে পান কোষ্ঠী-কোডে। চ্যানেলে চ্যানেলে কী আওয়াজ তাঁদের ! সব ভেক ধরে বসে আছে ছক হাতে ছকবাজিতে।  কোষ্ঠী যে সম্পূর্ণ ভাঁওতা তা আমি প্রবন্ধের শুরুতেই আকাশবাণীর ঘটনাতেই (দুর্ঘটনাই বলতে পারেন) জানিয়েছি।
শুধু হাত-পা দেখলেই কি জ্যোতিষবাবুদের পেট মানবে ! শুধু হাত দেখে বেড়ানো মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বোঝায়। তাই হাত দেখে জাতককে খুশি করার জন্য যতই ভালো ভালো কথা বলি-না কেন, মন্দ কথা তো বলতেই হবে। আপনাকে ভয় পাইয়ে দিতে না-পারলে আমার রোজগার আসবে কোত্থেকে ! পাথর বেচতে না-পারলে ফায়দা কীসের ? আপনি ভিখারি হবেন, আমার অট্টালিকা। সেটা অবশ্য আপনার আর্থিক অবস্থা কেমন সেটা আঁচ করে নেওয়া হবে। তারপর রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র, রাহু, কেতু – যেকোনো একটার অবস্থা খুব খারাপ এবং খারাপ থাকার জন্য আপনার ভয়ংকর হতে পারে। যদি পাথরের ব্যবস্থা নেন – তবে আপনি মামলা-মোকদ্দমায় জিতে যাবে, আপনার বা আপনার ছেলের বা মেয়ের চাকরি হয়ে যাবে, স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়া ছেড়ে ঘরে ফিরে আসবে ইত্যাদি। ঘরের সোনা বিক্রি করেই হোক বা জমি জমি বিক্রি করেই হোক, পাথর যে আপনাকে ধারণ করতেই হবে। জ্যোতিষবাবু বলেছেন !  কত রকম ভয় দেখিয়ে যে জ্যোতিষবাবুরা পাথর বেচেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। সত্যিই পাথর পারে এসব করে দিতে ? পাথর কী ?
রত্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরদিনের। সুপ্রাচীন কাল হতে রত্ন-পাথর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানুষ বিশেষ ভাবে মূল্য দিয়েছে রত্নকে আজও দিচ্ছে। পান্না, হীরা, মুক্তা, পোখরাজ, ওপ্যাল, গোমেদ ইত্যাদি রত্ন-পাথরগুলোর বেশীর ভাগই খনিজ পদার্থ। যুগ যুগ ধরে প্রচন্ড চাপ ও তাপে ভূগর্ভে সৃষ্টি হয়ে থাকে রত্ন-পাথর। সে কারণেই প্রাকৃতিক বা খাঁটি রত্নগুলো দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান। অনেক সাধারণ মানুয়ের ক্রয়ক্ষমতা ও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আসল রত্নের মূল্য প্রচুর। রাজা-বাদশারাই সেগুলি ব্যবহার করতে পারে। যেমন কোহ-ই-নুর বা কোহিনুর হিরে। একরকম বহু মূল্যবান রত্ন মণিমাণিক্য দিয়ে রাজা-বাদশা-রানিদের মুকুট, কোমরবন্ধ, বাজুবন্ধে খোচিত করে বারফাট্টাই দেখাত। কোন্ রাজা কত শৌখিন কত তাঁর রত্নভাণ্ডার আছে তা দেখানোর আয়োজন চলত পোশাকে-মুকুটে।কোহিনুর হিরে ছিল শাহজাহানের অহংকার, এখন ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের অহংকার।
সেই মহামূল্যবান রত্নের মর্যাদা এখন গ্রহশান্তির জন্য তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন ঠগ-প্রতারক জ্যোতিষীবাবুদের রুজিরোজগারের পথ দেখাচ্ছে।রত্ন (Gems) এখন পাথরে  (Stone) এসে জলের দামে বিকোচ্ছে। মামলা-মোকদ্দমা জিতিয়ে দিচ্ছে, সন্তানের চাকরি পাইয়ে দিচ্ছে, মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, অশান্ত সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। মুরগি, থুড়ি রোগীদের মহামূল্যের রত্ন ব্যবহার করতে বললে তো সব অজ্ঞান হয়ে যাবে। তাই ভুখা থেকে চোখা – সকলেই যাতে পাথর কিনে ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা হল। আধুনিক প্রযুক্তি আজ এগিয়ে এসেছে রত্নকে সুলভ করার কাজে।যাতে জ্যোতিষবাবুরা খেয়েপড়ে বেঁচে থাকে। কৃত্রিম উপায়ে রত্ন-পাথর তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে মানুষ।ফলে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম রত্ন, যেগুলি সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক রত্নের মতোই। কৃত্রিম রত্ন তৈরি হওয়ার ফলে রত্ন-পাথর চলে এসেছে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের ভিতর এবং পাওয়া যাচ্ছে দেশে দেশে। কৃত্রিম রত্ন তৈরির প্রচেষ্টাটি প্রচীনকালেও ছিল। প্রাচীন মিশরীয় এবং রোমানদের তৈরি বিভিন্ন রকম নমুনা জাদুঘরে দেখা যায়। তবে সেগুলি গুণগত মানে ও রূপে অক্ষম। কৃত্রিমভাবে তৈরি রত্ন-পাথরকে কয়েকটি সম্পূর্ণ আলাদা দলে বিভক্ত কর যায়। যেমন -- (১) ইমিটেশন অর্থাৎ নকল রত্ন।(২) সিনথেটিক অর্থাৎ সংশ্লেষিত রত্ন এবং(৩) কৃত্রিম ভাবে তৈরি ডাবলেট রত্ন। (১) ইমিটেশন বা নকল রত্ন প্রাকৃতিক রত্নের অনুকরণেই করা হয়। চোখে দেখার মিলটুকু ছাড়া আর কোনো অর্থেই এরা প্রাকৃতিক বা আসল রত্নের মতো সাধারণত হয় না। এতে একই রকম দেখতে অন্য জিনিসকে সুকৌশলে রত্নের মতো করে তোলা হয়। কিছুটা আসলের মতোই এই রত্ন প্রচুর তৈরি করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এদিক থেকে এদের উপযোগিতা আছে বৈকি।ইমিটেশন বা নকল রত্নের অধিকাংশ তৈরি হয় বিশেষ ধরনের কাঁচ থেকে। এ কাঁচ যেন খুব বিশুদ্ধ হয়, ক্ষুদ্র বাবলস বা বুদবুদ ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া হয় প্রাকৃতিক বা খাঁটি রত্নের মতো অনুরূপ রং দেওয়ার জন্য গলিত অবস্থায় এ কাঁচের সঙ্গে বিভিন্ন রকম ধাতব অক্সাইড মেশানো হয়। যেমন নীলের জন্য -- কোবালট অক্সাইড, সবুজের জন্য -- কুৎপ্রিক অক্সাইড, বেগুনির জন্য -- ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ইত্যাদি। কাঁচকে বিভিন্ন তলে ঘষে কাটা প্রাকৃতিক রত্নের রূপ ও ঔজ্জ্বল্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সব কাটা তলের নিম্ন পৃষ্ঠগুলিতে অনেক সময় আয়নার মতো প্রতিফলকের ব্যবস্থা করা হয় যাতে প্রাকৃতিক বা আসল রত্নের দীপ্তিও খানিকটা আসে। এ ধরনের নকল রত্নকে অবশ্য প্রাকৃতিক রত্ন থেকে আলাদা করা মোটেই কোনো কঠিন কাজ নয়। এরা কম শক্ত বলে অনায়াসে এদের গায়ে আঁচড় কাটা যায়। খনিজ বা প্রাকৃতিক রত্নের তুলনায় এদেরকে স্পর্শে উষ্ণ অনুভূত হয়। আলোর প্রতিসরণাঙ্কের ক্ষেত্রেও এদের সঙ্গে প্রাকৃতিক রত্নের অনেক তফাত। তা ছাড়া এক্সরে ছবি নিলেই বোঝা যায় যে নকল রত্নের সত্যিকার কোনো কেলাসিত রূপ নেই।
(২) অপরদিকে সংশ্লেষিত রত্ন সব অর্থেই প্রাকৃতিক রত্নের অনুরূপ। প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে তৈরি না-হয়ে এটি বিভিন্ন উপাদানের সংশ্লেষণে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তৈরি হয়, এই অর্থেই শুধু এটি কৃত্রিম। বস্তুগত দিক থেকে, যেমন রাসায়নিক গঠন, কেলাসন, আলোকগুণ এবং অন্যান্য সব ভৌত গুণে এরা প্রাকৃতিক রত্নের সঙ্গে অভিন্ন। সংশ্লেষিত রত্ন তৈরি অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ, তাই শুধু দামি রত্নগুলির ক্ষেত্রেই এটি করা হয়। আজকাল সংশ্লেষিত হিরে, চুনি, নীলা, পান্না সবই পাওয়া যাচ্ছে।
 সংশ্লেষিত হিরের একটি সুবিধা হল একে ইচ্ছামতো রঙিন করা সম্ভব নানা রকম বিজাতীয় পদার্থের স্বল্প অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে। প্রথমদিকে কৃত্রিম হিরের আকার এত ছোটো হত যে তা রত্ন-পাথর হিসাবে ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না। কিন্তু সত্তরের দশক থেকে আকারে ও সৌন্দর্যে রত্ন হওয়ার উপযুক্ত হিরে সংশ্লেষিত হচ্ছে, এদের উৎপাদন ব্যয়ও ধীরে ধীরে কমে আসছে। চুনি ও নীলা আসলে একই রত্ন-পাথর, শুধু এদের রংটুকু ছাড়া অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের প্রবাহের মাধ্যমে সৃষ্ট তীব্র উত্তাপে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাসাইডের গুঁড়োকে গলিয়ে এবং পরে তাকে কেলাসিত হতে দিয়ে চুনি ও নীলা সংশ্লেষিত করা হয়। তৈরির সময় সঙ্গে পরিমাণমতো ক্রোমিয়াম অক্সাইড মেশালে তা চুনির লাল রং হয়। আবার এর বদলে টিটানিয়াম অক্সাইড দেওয়া হলে সৃষ্টি হয় নীল রঙের নীলা। ১৯৩০ সালে প্রথম পান্না তৈরি সম্ভব হয়।(৩) কৃত্রিম ডাবলেট রত্নগুলি হল এতে উপরে সত্যিকার রত্নের পাতলা করে কাটা একটু আবরণ থাকলেও তাকে জুড়ে দেওয়া হয় নকল অথবা নিকৃষ্ট রত্নের ব অংশের সঙ্গে। ডাবলেট রত্ন তৈরি করার কৌশলটিও কিন্তু বেশ লক্ষণীয়। এতে উপরের পাতলা দামি রত্নের অংশ নীচের নকল অংশের সঙ্গে উপযুক্ত আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। হিরের ডাবলেটের ক্ষেত্রে পাতলা আসল হিরে, জারকন অথবা রক ক্রিস্টালের মতো অপেক্ষাকৃত সস্তা। কিন্তু অনুরূপ কেলাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য দিক থেকে একইরকম দেখতে হলেও চুনি, নীলা বা পান্নার ডাবলেটের জন্য সাধারণত উপরে এলমেডাইন নামক স্বচ্ছ কেলাসের পাতলা আবরণ এবং নীচে সঠিক রঙের কাঁচ ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম রত্ন আধুনিক প্রযুক্তির একটি চমৎকার সুকৌশল। ইমেটেশন বা নকল রত্ন ও কৃত্রিম ভাবে তৈরি ডাবলেট রত্ন-পাথরগুলি বিচার-বিশ্লেষণের অনুপযুক্ত।
যদিও আসল রত্ন আপনি কোনোদিন দেখতে পাবেন না দু-একটা ছাড়া (কারণ সেগুলি পাথর নয়), তবুও সুযোগ পেলে রত্ন-পাথর আসল কি নকল  কীভাবে বুঝবেন সেটা জেনে নেওয়া যেতেই পারে।বাজারে নানারকম রত্ন-পাথর পাওয়া যায়। চোখ ধাঁধিয়ে যায় তাদের রং আর উজ্জল বর্ণচ্ছটার আভা দেখলে। জ্যোতিষবাবু কিংবা জুয়েলারি থেকে যে রত্ন-পাথরটি কিনছেন হাজার হাজার টাকা গাঁটগচ্ছা দিয়ে, সেসব রত্ন-পাথরের ভিড়ে কী করে চেনা যাবে কোনটা আসল । রত্ন-পাথর আসল কি নকল বোঝার জন্য অভিজ্ঞ চোখ প্রয়োজন। প্রথমত, রত্ন-পাথরের আকৃতি, রং, স্বচ্ছতা ও এর ভিতর সুক্ষ্ণ যেসব অবাঞ্চিত পদার্থ থাকে, তার বিন্যাস দেখে প্রাথমিক ধারণা তৈরি করতে হবে।এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্য অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। তবে রত্ন-পাথর যাচাই করার সব চেয়ে ভাল উপায় হল রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাংক (Refractive Index)যাচাই করা। রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাংক জানা থাকলে তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে রত্ন-পাথরের সঠিক পরিচয় পাওয়া সম্ভব। কারণ কোনো বিশেষ রত্ন-পাথরের প্রতিসরণাঙ্ক নির্দিষ্ট, এর হেরফের বিশেষ দেখা যায় না। যেমন হিরের প্রতিসরণাংক ২.৪১৭। এ ছাড়া বিচ্ছুরণ (Dispersion)ধর্ম যাচাই করেও রত্ন-পাথর আসল কিংবা নকল তা যাচাই করা সম্ভব। তাছাড়া রত্ন-পাথরের কাঠিন্যতা (hardness), আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific gravity) ইত্যাদি ধর্ম যাচাই করে সহজেই নকল ও আসল রত্ন-পাথর চেনা যায়।
আসল রত্ন রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে – (১) চুনি বা Ruby : লাল রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম কোরান্ডাম (Corundum), অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেনই হল এর মূল উপাদান (AI2O2)। (২) নীলা বা Blue Sapphire : নীল বা হলুদ রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নামও কোরান্ডাম (Corundum), অ্যালুমিনিয়াম এবং অক্সিজেনই হল এর মূল উপাদান (AI2O2)।(৩) পান্না বা Emerald : সবুজ বা স্বচ্ছ রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম বেরিল (Beryl)।বেরিলিয়াম, সিলিকন, অক্সিজেন এবং অ্যালুমিনিয়াম হল মূল উপাদান (3BeO.AI2O3,6SiO2)। (৪) বৈদুর্যমণি বা Cats Eye : হলুদ বা সবুজ বা খয়েরি রঙের রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম ক্রাইসোবেরিল (Chrysoberyl)। বেরিলিয়াম, অক্সিজেন, অ্যালুমিনিয়াম এই রত্নটির মূল উপাদান (BeO.AI2O2)।(৫) গোমেদ বা Garnet : লাল বা বাদামি বা কমলা রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম গারনেট (Garnet)।লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন এবং অক্সিজেনই মূল উপাদান [(Ca,Mg,Fe)3AI2(SiO4)3]।(৬) চন্দ্রকান্ত বা Moon Stone : ধূসর রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম ফেলসপার (Feldspar)।পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন এবং অক্সিজেন এই রত্নটির মূল উপাদান (KAISi3O8NaAISi3O8CaAI2SiO8)। (৭) সূর্যকান্তমণি বা Sun Stone : স্বচ্ছ এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম কোয়ার্টজ (Quartz)।মূল উপাদান সিলিকন, অক্সিজেন (SiO2)।(৮) সন্ধ্যামণি বা Amethyst : স্বচ্ছ এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম কোয়ার্টজ (Quartz)।মূল উপাদান সিলিকন, অক্সিজেন (SiO2) (৯) পোখরাজ বা Sapphire : স্বচ্ছ বা হালকা হলুদ বা হালকা নীল রঙের এই রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম টোপাজ (Topaz)।মূল উপাদান অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন এবং ফ্লোরিন [AI2SiO4(OH/F)2](১০) নীলকান্তমণি বা Tarquous : অস্বচ্ছ নীল বা নীলাভ সবুজ  রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম টারকোয়েস (Tarquous)। কপার, ফসফরাস, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ফ্লোরিন হল মূল উপাদান [CuO(AI2O3(P2O3)2, 9H2O]।(১১) বৈক্রান্তমণি বা Zircon :  অস্বচ্ছ এই রত্নের বৈজ্ঞানিক নাম জারকন (Zircon)।মূল উপাদান জার্কনিয়াম, সিলিকন ও অক্সিজেন (ZrSiO4)।(১২) মুক্তা বা Pearl : এটি খনিজ পদার্থ নয়, প্রাণীজ পদার্থ। স্বাভাবিক মুক্তা ঝিনুকের মাংসল শরীরের ভিতর পাওয়া যায়। সাদা রঙের এই জৈব রত্নটির বৈজ্ঞানিক নাম Organic Gems মূল উপাদান হল ক্যালসিয়াম, কার্বন ও অক্সিজেন (CaCO3)।(১৩) প্রবাল বা Corel : এটি খনিজ পদার্থ নয়, প্রাণীজ পদার্থ। এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবের মৃতদেহ।শুধুমাত্র সমুদ্রের নীচেই পাওয়া যায়।গাঢ় রক্তবর্ণ বা হলুদাভ রক্তবর্ণ, গেরুয়া সাদা রঙের রত্নটির বৈজ্ঞানিক নামও Organic Gemsমূল উপাদান হল ক্যালসিয়াম, কার্বন ও অক্সিজেন (CaCO3)
রত্নগুলি কীরকম ভাটের জিনিস দেখুন : () চুনি এবং নীলার মূল উপাদান একই। অথচ গ্রহ আলাদা।অথচ গ্রহরোষও আলাদা। অথচ রবি খারাপ হলে চুনি দেওয়া হয় এবং শনি খারাপ হলে নীলা ধারণ করতে বলা হয়। মানে আমার হার্টের সমস্যা হলে যে ওষুধ নেব, আমাশয় হলেও সেই একই কন্টেন্টের ভিন্ন নামেরওষুধ নেব ? () সূর্যকান্তমণি এবং সন্ধ্যামণি রত্নের উপাদান একই। গ্রহ আলাদা। গ্রহরোষও আলাদা। রবি খারাপ হলে সূর্যকান্তমণি এবং শনি খারাপ হলে সন্ধ্যামণি। চুনি নীলার উপাদান এবং সূর্যকান্তমণি সন্ধ্যামণির উপাদান একেবারেই এক নয়। তাহলে ভিন্ন উপাদানে একই গ্রহের মাথা ঠান্ডা হয় কী করে ? জ্যোতিষবাবুরা উত্তর দিতে পারেন না।কোনো জ্যোতিষীবাবু উপর-চালাকি করতে গিয়ে বা ওভার স্মার্ট ন্যাজে-গোবরে হয়ে যান।
রত্ন আসল হোক কিংবা নকল হোক – জ্যোতিষবাবুরা সেগুলি ব্যবহার করার নিদান দেন গ্রহশান্তির জন্য। এই রত্নগুলি কীভাবে ক্রোধী গ্রহদের মাথা ঠান্ডা রাখার দায়িত্ব নেয় ! জ্যোতিষবাবুরা কী বলেন সেটা আগে জেনে নিই – “মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ পরমাণুর সমন্বয়ে সৃষ্ট। সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলিও পরমাণুর সমষ্টি। আর বিভিন্নপ্রকার রত্নগুলি এমন সব পদার্থের সমন্বয়ে সৃষ্ট যার উপস্থিতি মানবদেহেও বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রকার রত্ন সরাসরি মানবদেহের ত্বককে স্পর্শ করে শরীরের উপর ইলেকটো ম্যাগনেটিক (Electro Magnetic) প্রভাব বিস্তার করে, মানবদেহের বিদ্যমান যে-কোনো পদার্থের অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতির সামঞ্জস্য রক্ষা করে।বিভিন্নপ্রকার রত্ন বিভিন্ন গ্রহের রশ্মি অতিমাত্রায় আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে। তাই রত্ন ধারণ করে স্নায়ুর উপর বিশেষ বিশেষ গ্রহের রশ্মি যোগ বা বিয়োগ করে শক্তিশালী করা সম্ভব। ফলে স্নায়ুগুলি শক্তিশালী হবে ও নতুন চিন্তা চেতনায় জীবন প্রবাহের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে নেবে। আলোকরশ্মি, বায়ুমণ্ডল  ভেদ করে পৃথিরীর ভূভাগের উপর পতিত হয়। গ্রহদের যেমন নিজস্ব তেজ বিকিরণের ক্ষমতা আছে, প্রতিটি রত্মেরও তেমনই পৃথক পৃথক তেজ আহরণের ক্ষমতা আছে। সূর্য এবং গ্রহমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসা এই আলোকরশ্মিই আমাদের উপর নানাভাবে কাজ করে। ভুগর্ভে বা সমুদ্রগর্ভে যে সকল রত্ন-পাথর সৃষ্টি হয় তাহাও ওই সৌররশ্মিরই রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল। মানবদেহের উপর কসমিক রশ্মির (Cosmic Ray)  প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি (Ultra-Violet Ray) ও অপরাপর রং বিভিন্ন প্রকার রত্ম-পাথর এবং এর অভ্যন্তরীণ প্রচ্ছন্ন শক্তির উপর পরোক্ষ ও প্রত্যেক্ষভাবে ক্রিয়াশীল হয়ে মানবদেহে সংক্রামিত বিভিন্ন প্রকার ব্যাধির প্রতিকার করতে পারে। উল্লেখ্য, রত্নগুলিতেও বিভিন্ন রং বিদ্যমান।প্রাচীন জ্যোতিষবিগদগণ হাতের বিভিন্ন স্থানে বিবিধ গ্রহের অবস্থান ধরে সে স্থানগুলিকে বিবিধ রঙের Reflection উল্লেখ করেছেন। আর বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথরের রং যে ভিন্ন ভিন্ন তার সঙ্গে গ্রহ ও নক্ষত্রের রঙর সাদৃশ্যও তাঁরা এভাবে পেয়েছেন।সুতরাং জ্যোতিষে রত্নের ব্যবহার অভ্রান্ত নয় বলেই মনে হয়।তবে রত্ন-পাথরের যথাযথ প্রয়োগ কৌশল সম্পর্কে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ অবহিত। একথা মনে রাখতে হবে যে, ভুল ঔষধ সেবনের কারণে বা প্রয়োজন ব্যতিত ঔষধ ব্যবহারে যেমন জীবননাশ বা ক্ষতি হতে পারে,  তেমনই প্রয়োজন ছাড়া রত্ন ব্যবহার বা যথার্থ রত্নের ভুল ব্যবহারের কারণেও মারাত্বক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর। তাই রত্ন-পাথর ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ জ্যোতিষের পরামর্শ একান্ত কর্তব্য। ভুললে চলবে না যে অণুর সমম্বয়েই রত্নের উৎপত্তি আর দ্রব্য গুণ অনস্বীকার্য।”
এই হল জ্যোতিষবাবুদের রত্ন-পাথরের সপক্ষে বিবৃতি। পশু বা মানুষের রক্ত গায়ে মাখলে মানুষের শরীরের রক্তাল্পতা কমে যায় ? যদি কেউ বলেন – হ্যাঁ, যায়। মাফ করবেন, তবে তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ জাগছে। তাহলে কি আপনি আয়রন ট্যাবলেট বা কুলেখাঁড়া শাকের রস না-খেয়ে পাথর বা ধাতু বা শিকড় ধারণ করবেন ? তাই কি করেন ? মানবদেহে অল্প বা নির্দিষ্ট পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের মৌলিক দ্রব্যের বা ধাতুর উপস্থিতি আছে, শরীরে তার প্রভাবও আছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে সেইসব ধাতুর সঠিক ভারসাম্য রাখতে পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হয়। সরাসরি লোহা চিবিয়ে চিবিয়ে খেলে বা শরীরে টন টন লোহা বাঁধলেও রক্তাল্পতা সারবে না।
তবে রত্নগুলির সৌন্দর্য অস্বীকার করা যায় না। রত্ন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ সাজিয়ে নিতে কার-না ভালো লাগে। সে তো অন্য কথা। পাঁচ রতি ছয় রতি নয়, শয়ে শয়ে রতি রত্ন দিয়ে শরীর সাজিয়ে ফেলুন না। কে বারণ করেছে ? কিন্তু গ্রহশান্তির নামে নীলা-পোখরাজ মানুষকে পরিয়ে দেবেন মাথায় বাড়ি দিয়ে, সেটি হবে না।ভয় দেখিয়ে, রত্ন কিনতে বাধ্য করানো মানুষের জন্য আমরা লড়াই করব।মানুষের শরীরে রত্ন-পাথরের কোনো ভূমিকা নেই। রত্ন-পাথরের কোনো ক্ষমতা নেই। ভালো কিছু করার ক্ষমতাও নেই, খারাপ কিছু করারও ক্ষমতা নেই।দুষ্ট প্রভাব বলতে যেমন কিছু নেই, তেমনি দুষ্ট প্রভাব হটানোরও কোনো ক্ষমতা রত্ন-পাথরের।রত্ন-পাথর আমাদের কোনো অবস্থা থেকেই বিচ্যূত ঘটাতে পারে না।রত্ন-পাথর মানুষের শরীরে কোনো বিক্রিয়া করে না। সারা শরীরে যেখানেই আপনি রত্ন-পাথর বাঁধুন-না কেন, একটাই কাজ করবে – সৌন্দর্য বৃদ্ধি।বেশ বিজ্ঞের মতো জ্যোতিষবাবুরা চরম আত্মবিশ্বাসের উপর ভর দিয়ে বলে থাকেন – রত্ন-পাথর বিভিন্ন ক্ষতিকারক রশ্মি শোষণ করে মানুষের শরীরকে রক্ষা করে।সেকি, কীসের রশ্মি ? সেই রশ্মি আমাদের কী ক্ষতি করে ? মামলা-মোকদ্দমায় হারিয়ে দেয় ? আমার মেয়ের পরীক্ষায় পাস আটকে দেয় ? আমার ছেলের চাকরি হতে বাধা দেয়, আমার পরকীয়ায় কাঠি দেয় ? আমার জীবনের জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিলাম কোনোরকম রত্ন-পাথর ছাড়াই।আমার পুরো জীবনটাই কুসুমাস্তীর্ণ।কণ্টক এলে দু-হাতে উপড়ে ফেলে দিয়েছি।যে ক্ষতিকারক রশ্মির কথা জ্যোতিষবাবুরা বলে থাকেন সেগুলি কী ওই গ্রহগুলি আসে ? নাকি অন্য কোথা থেকে ? গ্রহদের নামে যখন রত্ন-পাথর দেওয়া হয়, তাহলে ধরে নিতেই রশ্মি গ্রহগুলি থেকেই আসে।নানারকম মহাজাগতিক রশ্মি আছে বইকি।সেগুলি সত্যিই ক্ষতিকর। সেইসব ক্ষতিকর কোনোভাবেই পৃথিবীতে আসতে পারে না। বাস্তবে মহাজাগতিক রশ্মি হল এক ধরনের তড়িৎকণার অদৃশ্য বিকিরণ। শব্দ বা বিদ্যুতের মতোই অদৃশ্য এই বিকিরিত তড়িৎকণা বর্ণহীন। মহাকাশ থেকে নেমে আসা এই মহাজাগতিক রশ্মির অনেকটাই পৃথিবীতে পৌঁছোবার আগে বাধা পায় পৃথিবীকে ঘিরে রাখা চৌম্বক ক্ষেত্রে। এরপর যেটুকু মহাজাগতিক রশ্মি এসে পড়ে আমাদের পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া পৃথিবীর ওজোনস্তর পেরিয়ে সরাসরি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা অসম্ভব।এক-আধটু রশ্মি যে পৃথিবীতে আসে না, তা নয়। সেই রশ্মি রত্ন-পাথর কেন -- পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত এমন কিছু আবিষ্কার হয়নি, যা দিয়ে ওইসব রশ্মি আটকে মামলা-মোকদমা ইত্যাদি জিতিয়ে দেওয়া যায়।  অনেক জ্যোতিষবাবু বলেন – বিভিন্ন রত্ন-পাথরের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রতিসৃত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে গ্রহশান্তির কাজ করে। তাই নাকি ?  প্রতিসৃত হয়ে শরীরে প্রবেশ করে ? প্রবাল বা পলা, মুক্তা, সূর্যকান্তমণি ইত্যাদি রত্নগুলি তো অস্বচ্ছ। অস্বচ্ছ বস্তুর মধ্য দিয়ে রশ্মি প্রতিসৃত কোনো সম্ভাবনা নেই।কোনো কোনো জ্যোতিষবাবুদের (জেম থেরাপিস্ট !!!) মতে – মানবদেহের নানা রোগের কারণ নাকি রং।রামধনুর সাতটি রং নাকি মানবদেহে বিদ্যমান সাতটি স্নায়ুচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।মানবদেহের সমস্ত অসুখবিসুখের নিয়ন্ত্রক নাকি ওই রং। কোন্ রঙের অভাবে কোন অসুখ হবে সেটা তাদের জানা। যেমন হলুদ রঙের অভাবে অর্শ, নীল রঙের অভাবে মৃগী হয়। এই রংগুলি শরীরে গুঁজে দিতে পারলে রোগমুক্তি।কীভাবে গুঁজবে ? কেন ? লাল রঙের জন্য চুনি পরিয়ে দেওয়া হবে, নীল রঙের জন্য নীলা বা নীলকান্তমণি বা পোখরাজ, খয়েরি বা সবুজ রঙের জ্ন্য বৈদুর্যমণি বা পান্না, কমলা বা বাদামি রঙের জন্য গোমেদ ইত্যাদি।নাঃ, বিজ্ঞানে এসব ধান্দাবাজির কোনো জায়গা নেই। 
জ্যোতিষ বিষয়ক বইগুলিতে দেখলাম কেতু খারাপ হলে ক্ষয়রোগ ও শুচিবাই আনে।কেতুর সঙ্গে শনিও যদি খারাপ হয় তবে অর্শ, ক্যান্সার ইত্যাদি হতে পারে। তা বৈদুর্যমণি রত্ন বা ক্যাটস আই ধারণ করালে ক্যান্সার ইত্যাদি সেরে যাবে ? নীলা ধারণ করলেও ক্যান্সার সেরে যাবে।হিরে বা পীত পোখরাজ ধারণ করলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি হবে। পীত পোখরাজ ধারণ করে বৃহস্পতিকে খুশি করতে পারলেই বন্ধ্যা নারীও গর্ভবতী হবে। নেতা-মন্ত্রীও হওয়া যায়। এরকম কঠিন কঠিন রোগ সারাতে পারে রোগীরা। তাহলে আর দরকার কী চিকিৎসা আর চিকিৎসকের ?
জুয়েলারির মালিক, রত্ন-পাথরের ভেন্ডার-বিক্রেতা, উৎপাদনকারী, খননকারী, উত্তোলনকারীদের একমাত্র ভরসা এই জ্যোতিষবাবুরা। জ্যোতিষবাবুরাই একমাত্র সক্ষম নিন্মবিত্ত মধ্যবিত্ত সাধারণদের রত্ন-পাথর বিক্রি করা। রত্ন-পাথর বিক্রির বাজার তৈরি করে দিয়েছেন এই জ্যোতিষবাবুরাই। নাহলে একচেটিয়াভাবে ধনীরাই শুধুমাত্র রত্ন ব্যবহার করত।ব্যাবসা কী জমত ? গ্রহরত্ন বা অন্য কোনো যদি মানুষের ভাগ্যকে বদলে দিতে পারে, তবে তো বলতে হবে মানুষের ভাগ্য এক্কেবারেই পূর্বনির্ধারিত নয়। প্রচেষ্টা এবং পরিবেশই মানুষের ভাগ্যের নির্ণায়ক।(চলবে)

৪টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

আমি আপনার নাম্বার পেতে পিরি

Unknown বলেছেন...

If you're attempting to lose fat then you certainly have to jump on this brand new custom keto plan.

To design this keto diet service, licenced nutritionists, fitness couches, and chefs have united to produce keto meal plans that are efficient, suitable, price-efficient, and delicious.

Since their launch in early 2019, 1000's of clients have already completely transformed their figure and health with the benefits a smart keto plan can provide.

Speaking of benefits; clicking this link, you'll discover eight scientifically-proven ones given by the keto plan.

Unknown বলেছেন...

অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল।

নামহীন বলেছেন...

গাঁজা সেবন কমিয়ে এসব ভাট বকা বন্ধ করুন, এসব ভাটের গল্প কোনো বাজারি জ্যোতিষীদের সম্বন্ধে বলবেন, বাপের কালে যদি সেইরকম জ্যোতিষীর পাল্লায় পড়তেন তবে জ্যোতিষ নিয়ে এই ভাটের লেখা লিখতেন না। আপনি ওষুধের কথা লিখেছেন না? আমি আপনাকে বলছি আমি মেডিকেল সাইন্সকে যতটা বিশ্বাস করি তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করি জ্যোতিষ। কারণ মেডিকেল সাইন্স হল সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিটিংবাজীর ব্যবসা। পৃথিবীর মধ্যে মেডিকেল সাইন্সের মত কালোবাজারি ব্যবসা দ্বিতীয় কিছু নেই আর। আমি আজ আমার গোপন তথ্য আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি শুধুমাত্র জ্যোতিষ নিয়ে আপনার ভাট বকার কারণে। আমাকে আজ থেকে কয়েক বছর আগে এক জ্যোতিষী বলে দিয়েছিলেন যে আমার বিয়ের পর সন্তান হওয়া নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হবে। সেদিন এসব আমিও ভাটের কথা ভেবে সব উড়িয়ে দিয়েছিলাম, আর আজ আমি পেনিসের এমন একটা রোগে পড়েছি যে কোনো মেডিকেল সাইন্সে তার কোনো চিকিৎসা নেই.. শুধু এইটুকু নয়, আরো আছে.. সব লেখা সম্ভব নয়.. জানতে ইচ্ছে হলে আমাকে মেইল করবেন.. utpal.textile@gmail.com
কোনো জ্যোতিষী যদি বলে আমি ভাগ্য পরিবর্তন করে দেব তবে সে সবচেয়ে বড় ভাওতাবাজির জ্যোতিষী। বিধির বিধান কেউ কিছু করে পাল্টাতে পারবে না.. এটাই বাস্তব.. তাই এসব ভাট বকা বন্ধ করুন.. আগে জানুন পরে সমালোচনা করবেন...