মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

বরফ

এ আঠা এমনই, বাতাসে এলে শুকিয়ে কংক্রিট। এতটাই যে সেবার ছেলের ভাঙা খেলনা জুড়তে গিয়ে বে-খেয়ালে তর্জনী-মধ্যমা জুড়ে গিয়েছিল ভয়ানকভাবে। বছর পাঁচেক আগে। বুক ঠেলে লম্বা নিশ্বাস বেরিয়ে এল সমিধের।
পাঁচ বছর আগে, আজকের দিনেই স্বর্ণালীর সঙ্গে সমিধের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়। আদালতের সেই রায় এখনো যেন কানের ভিতর গরম সিসা ঢেলে দেয় কেউ।
বিয়ের এক বছর যেতে না-যেতেই সমিধ বুঝতে পারল স্বর্ণালী কেমন যেন যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। শরীরের জন্য কাছে গেলে স্বর্ণালী খুবই বিরক্ত হয়। নামি দামি ডাক্তার দেখিয়েও কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। সন্তান গর্ভে আসার পরপরই এই অনীহা। ভেবেছিলাম সন্তান জন্মানোর পরই সব ঠিক হয়ে যাবে। চিকিৎসকরা বলে দিলেন, এটা ফ্রিজিটি। পারমানেন্ট ফ্রিজিটি। বারো বছর অপেক্ষার পর অবশেষে বিচ্ছেদের মামলা উঠল আদালতে।

ছেলেকে নিজের কাছে চেয়েছিল স্বর্ণালী। কিন্তু ছেলে যেতে চায়নি। আদালত বলেছিল ছেলে যেখানে সবচেয়ে বেশি ভালো থাকবে সেখানেই থাকতে পারবে।
এখন বড়ো একা লাগে! বড্ড একা। --- “সব ভুলে ওকে ফিরিয়ে আনা যায় না ? এমন আঠা কি নেই আঙ্গুলের মতো সম্পর্কও জুড়ে দেওয়া যায়! দুজনে মিলে এক ছাতের নীচে বাকি জীবন কাটিয়ে দিলে ক্ষতি তো কিছু নয়, হোক না তা যৌনতাহীন।যৌনসঙ্গীর অভাবে কত মানুষেরই তো যৌবন পুড়ে খাক হয়ে যায়। ”
মুখোমুখি, সমিধ নিজের কাছে দাঁড়ায় -- আচ্ছা, বিয়ে মানেই কি যৌন-সম্পর্ক ! দাম্পত্য মানেই কি শারিরীক মেলামেশা! শুধুমাত্র যৌনতার কারণেই স্বর্ণালীকে বিচ্ছেদ দেওয়া উচিত হল ! আচ্ছা, যদি উলটোটা হত ? যৌনতাহীন জীবন আর যৌবন নিয়ে স্বর্ণালী আমাকে টেনে নিয়ে যেত সারাজীবন ? শীতলতার দায় আমাকেও বইতে হত। পৌরুষহীনতার অপমান আমাকেও কুরে কুরে খেত। আমাকেও স্বর্ণালী ত্যাগ করত। কুন্তি, মাদ্রিরাও মেনে নেননি স্বামীর অক্ষমতা।
তবুও নিজেকে বড়োই অপরাধী মনে হয় সমিধের। ছুটতে থাকে, পালায়। ছেলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে, বাড়তেই থাকে। সমিধ যেন আস্ত একটা বরফের গুহায় ঢুকে যেতে থাকে, ক্রমশই।

কোন মন্তব্য নেই: