শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০

চার্চ থেকে মসজিদ, মিউজিয়াম থেকে মসজিদ -- এর নাম হাজিয়া সোফিয়া


হাইয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া বা চার্চ অফ হাজিয়া সোফিয়া (Hagia Sophia) স্থাপত্যটি এই মুহূর্তে সংবাদমাধ্যম তোলপাড়, সোস্যাল মিডিয়া সরগরম। কেন সরগরম ? কারণ তুরস্কের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ইস্তাম্বুলের খ্যাতনামা হায়া সোফিয়ায় নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, আদালতের রায়ের পর নামাজ পড়ার জন্য হায়া সোফিয়াকে খুলে দেয়া হবে। টুইটারে এক পোস্টে এরদোগান জানান, হায়া সোফিয়ার সম্পত্তি দিয়ামাত বা তুর্কি ধর্মীয় বিষয়ক দফতরের হাতে সোপর্দ করা হবে। এরপরই হাইয়া সোফিয়াতে প্রথমবারের মতো আজান দেওয়া হয়। দেড় হাজার বছরের পুরনো হায়া সোফিয়া একসময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গির্জা, পরে তা পরিণত হয় মসজিদে, তারও পর একে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা কামাল আতাতুর্কর সিদ্ধান্তকে সসম্মানে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তুরস্কের মুসলিম প্রধানমন্ত্রী এরদোগান ভাবলেন, তা কেন, ওই স্থাপত্যটি সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের সম্পদ, সকলের সম্পদ হতে পারে না। অতএব ওটা কেবল মসজিদই হবে, আজান হবে, নামাজ পড়বে – অন্য কিছু হবে না। নিশ্চয় স্থাপত্যের অভ্যন্তরের জিশু ও খ্রিস্টীয় চিহ্নগুলি মুছে ফেলে কেবলই আল্লাহ ও মোহম্মদ সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পড়বে। কী হবে, সেটা সময় বলবে। আপাতত হাজিয়া সোফিয়ার জন্মবৃত্তান্তটা জেনে নিই।

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরটি দাঁড়িয়ে আছে এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশে ভাগ হয়ে। মহাদেশ দুটিকে যোগ করা বসফরাস প্রণালী শহরটিকে দু-ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। এই শহরেরই ইউরোপীয় অংশে রয়েছে দৈত্যাকৃতির এক স্থাপত্যবিস্ময়। বাইজেন্টাইন শাসনামলে বানানো এই স্থাপত্যকর্মটির নাম হাজিয়া সোফিয়া। এই স্থাপত্যটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে এসেছে আমেরিকান ঔপন্যাসিক ড্যান ব্রাউনের ‘ইনফার্নো’ গ্রন্থে।

 
হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১,৫০০ বছর আগে একটি বাইজেন্টাইন খ্রিস্টান ব্যাসিলিকা হিসাবে। কিন্তু বর্তমানে অনেকটা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার বা এথেন্সের পার্থেননের মতো এটিও একটি অসাম্প্রদায়িক স্থাপত্যশৈলী হিসেবে পরিগণিত হয়। অবশ্য শুধু স্থাপত্যকৌশলের কারণেই যে এটি বিখ্যাত তা নয়, এ ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির আছে নানারকম রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং শৈল্পিক আবেদন।


তুরস্কের এই স্থাপনাটি সনাতন খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষের কাছেই মর্যাদার বস্তু। কেন-না তুরস্কের বহু বছরের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের ধারক-বাহক এই স্থাপনা। ‘House of Worship’ ইতিহাসের পালাবদলের (৫৩৭-১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাইজেনটাইন ক্রিশ্চিয়ান ক্যাথেড্রাল, ১০৫৪-১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গ্রিক অর্থোডক্স, ১২০৪-১২৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমান ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল, ১২৬১-১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গ্রিক অর্থোডক্স ক্যথেড্রাল, ১৪৫৩-১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অটোমান মসজিদ, ১৯৩৫-২০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিউজিয়াম এবং ২০২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে হোলি মসজিদ ) সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় বদল হয়েছে এর পরিচয় এবং ব্যবহার। ৫৩৭ সালে নির্মিত হায়া সোফিয়া বাজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্যতম স্থাপনা। একে ইতিহাস বদলে দেয়া স্থাপত্যও বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে হাজিয়া সোফিয়া খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের প্রার্থনালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে এ স্থাপনাটিতে খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের ধর্মের নানা অনুসঙ্গের সহাবস্থান চোখে পড়ে। এ দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষদের ধ্যান-ধ্যারণা আর চিন্তা-ভাবনা এসে যেন এক হয়ে মিলে গেছে হাজিয়া সোফিয়াতে।

সর্বপ্রথম ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সটান্টিয়াস বাইজেন্টাইন ব্যাসিলিকা হিসাবে হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেসময় ইস্তাম্বুল শহরটির নাম ছিল কন্সটান্টিনোপল। সম্রাট কন্সটান্টিয়াসের বাবা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট প্রথম কন্সট্যান্টাইনের নামানুসারেই শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল। প্রথম নির্মিত হাজিয়া সোফিয়ার স্থাপত্যের ছাদ ছিল কাঠের তৈরি। রাজপরিবারের রাজনৈতিক কলহের জেরে ৪০৪ খ্রিস্টাব্দে সে ছাদ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছিল। এরপর ৪১৫ সালে হাজিয়া সোফিয়া নতুন করে নির্মাণ করেন সম্রাট থিওডোসিওস। এই দ্বিতীয় হাজিয়া সোফিয়ার পাঁচটি প্রধান অংশ ছিল, ছিল একটা বিরাটাকৃতির প্রবেশপথ এবং প্রথমটির মতো এর ছাদও ছিল কাঠের তৈরি। এক শতাব্দীর কিছু বেশি সময় টিকে ছিল দ্বিতীয়বারে নির্মিত হাজিয়া সোফিয়া। দ্বিতীয়টিরও কপালে জুটেছিল আগুনের আঁচ। সেবারে হাজিয়া সোফিয়া পুড়েছিল সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের বিরুদ্ধে প্রজাদের বিদ্রোহের আগুনে। দ্বিতীয়বার পুড়ে ছাই হওয়া হাজিয়া সোফিয়াও মেরামতের অযোগ্য ছিল। তাই সম্রাট জাস্টিনিয়ান ৫৩২ সালে নতুনভাবে এ গির্জা নির্মাণের আদেশ দেন সেসময়ের দুই বিখ্যাত স্থপতি ইসিডোরোস এবং অ্যান্থিমিয়োসকে। এই তৃতীয়বার নির্মিত অনন্য সাধারণ হাজিয়া সোফিয়ার নির্মাণ শেষ হয় ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে, যা আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বগৌরবে।

বাইজেন্টাইনরা গ্রিকদের সনাতন ধর্ম অনুসরণ করত, আর হাজিয়া সোফিয়া ছিল তাঁদের প্রধান প্রার্থনালয়। এখানেই বাইজেন্টাইন সম্রাটরা শপথ নিতেন, প্রথম মুকুট পরতেন। হাজিয়া সোফিয়ার বর্গাকার মার্বেলের মেঝের যে অংশে রঙিন প্যাঁচানো নকশা রয়েছে, গির্জার সেই মূল অংশে দাঁড়িয়েই মাথায় মুকুট পরতেন নতুন সম্রাটরা। ৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের এই ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে হাজিয়া সোফিয়া। ত্রয়োদশ শতকে মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে সংগঠিত ক্রুসেডে হাজিয়া সোফিয়া কিছু সময়ের জন্য রোমানদের দখলে চলে যায়। সেসময় এটি রোমান ক্যাথলিক ক্যাথেড্রাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় কিছুকাল। যতদিনে বাইজেন্টাইনরা পুনরায় এই স্থাপত্যের দখল ফিরে পায়, ততদিনে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাই বাইজেন্টাইন শাসকগণ আবারও মেরামত করে তাঁদের সাধের প্রার্থনালয়ের পুরোনো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনেন। পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অটোম্যান সম্রাট ফাতিহ্ সুলতান মেহমেদ কন্সট্যান্টিনোপল দখল করেন। অটোমানরা কন্সট্যান্টিনোপলের নতুন নাম দেয় ইস্তাম্বুল। সেসময় আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাইজেন্টাইনদের প্রধান প্রার্থনালয় হাজিয়া সোফিয়া। ইস্তাম্বুলের উপর অটোমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁরা হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসাবে রুপান্তরের চিন্তা করে। হাজিয়া সোফিয়ার ভিতরের অনেক খ্রিস্টীয় নিদর্শনকে তাঁরা বদলে ফেলে। এ স্থাপত্যের দেয়ালে এবং মেঝেতে যেসব খ্রিস্টীয় প্রতীক ছিল, সেগুলোকে অটোমানরা ঢেকে ফেলে ইসলামিক লিপি দিয়ে। মসজিদের ঐতিহ্য অনুসারে একটি মিহরাব স্থাপন করা হয় হাজিয়া সোফিয়ার পশ্চিমের দেয়ালে। মিহরাবের দু-পাশে স্থাপন করা হয় দুটি ব্রোঞ্জের বাতি। এ স্থাপত্যকে ঘিরে চারদিকে নির্মাণ করা হয় চারটি মিনার, যেগুলো থেকে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে। সময়ের পরিক্রমায় এমন অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে হাজিয়া সোফিয়া ব্যবহৃত হতে থাকে মুসলিমদের প্রার্থনালয় মসজিদ হিসাবে।

এরপর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের ১০০ বছরেরও বেশি সময় পরে আজও রাজনীতি ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে হাজিয়া সোফিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ। কামাল আতাতুর্ক তুরস্ক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পরে ১৯৩৫ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। মসজিদে রূপান্তরের পর এর দেয়ালে মার্বেল পাথরে অঙ্কিত জিশুখ্রিস্টের অনেকগুলো ছবি সিমেন্ট দিয়ে মুছে দেওয়া হয়। ছবিগুলো প্রায় ৫০০ বছরের জন্য সিমেন্টের নিমে চাপা পড়ে। কিন্তু এই স্থাপনাটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের পর ছবিগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়। ফলে জিশুখ্রিস্টের ছবিগুলো অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে অঙ্কিত ‘আল্লাহু’ ও ‘মোহাম্মদ’-এর আরবিতে অঙ্কিত মার্বেল পাথরও এর পাশাপাশি সংরক্ষিত হয়। তাই এই নামগুলোর পাথর অনেক বেশি উজ্জ্বল থাকে। জাদুঘরে রূপান্তরের পরে বাইজেন্টাইন আমলের বিভিন্ন খ্রিস্টীয় প্রতীক ও ছবি পুনঃস্থাপন করা হয় হাজিয়া সোফিয়াতে। এরপর থেকে এই স্থাপনায় নতুন নিয়ম প্রবর্তন হয়। প্রধান নিয়মটি হল -- এই স্থাপনার মূল অংশ বা হলরুম ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, সেটি মুসলিম অথবা খ্রিস্টান ধর্ম উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এই স্থাপনার উভয় ধর্মের জন্য আলাদা সংরক্ষিত জায়গা রয়েছে। অর্থাৎ এই কমপ্লেক্ষটিতে একটি মসজিদ ও একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। যা শুধুমাত্র যাদুঘরের কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। 

বর্তমানে খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের ধর্মের নানা প্রতীক এবং বাণী পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যায় হাজিয়া সোফিয়াতে। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ধর্মবিশ্বাসের আশ্চর্য এক সহাবস্থান চোখে পড়ে জাদুঘরটিতে। ধর্মনিরপেক্ষ এমন স্থাপত্য গোটা বিশ্ব খুঁজে আর একটিও পাওয়া যাবে না। কামাল আতাতুর্কর এহেন উদার মানসিকতা শুধু অনুসরণীয়ই নয়, অনুকরণীয়। না, কেউ যেমন অনুসরণ করেনি, তেমনি অনুকরণও করেনি। কারণ মানুষ মূলত পৃথক ধর্মপরিচয়ে যাপন করতে চায়, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ হিসাবে নয়।

গত ২ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার ১৭ মিনিটের শুনানি শেষে তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’ ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রায় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা তুরস্কের এই হায়া সোফিয়াকে ফের মসজিদে রূপান্তরিত করা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি পিছিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। দেশটির ইসলামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই স্থাপনাটিকে ফের মসজিদে রূপান্তরের দাবি জানালেও ধর্মনিরপেক্ষরা এর বিরোধিতা করে এসেছেন। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোগান গত বছরের এক নির্বাচনী সমাবেশে হায়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার পক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন। ঠিক যেমন ভারতে বিজেপি তথা আরএসএসের কর্মীরা নির্বাচনী সমাবেশগুলিতে বাবরি থেকে রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করেছে সুপ্রিমকোর্টের সাহায্যে। বলা যায় নরেন্দ্র মোদির পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন এরদোগান। বাবরি মসজিদ ও হাজিয়া সোফিয়ার ইতিহাস এক নয়। সম্পূর্ণ পৃথক। ওখানে রামমন্দির ছিল এই ধুয়ো তুলে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাবরি ভেঙে ক্ষমতায় এলো বিজেপির বাজপেয়ী সরকার। না, বাজপেয়ীর আমলে মন্দির নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বাজপেয়ী সরকারের পতন হল। এরপর টানা দশ বছর কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। এদিকে পাশাপাশি মসজিদ না মন্দির এই বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছিল। ২০১৪ সালের জনসভাগুলিতে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি জানালেন তাঁকে ক্ষমতায় আনলে অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবেই। মোদি ক্ষমতা পেলেন এবং দেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী যাতে তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন, তার জন্য শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিলেন। ওখানে যে পূর্বে রামমন্দির ছিল এমন কোনো প্রমাণ আদালতের হাতে ছিল না। যদিও ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ১৯৩৫ সালের কামাল আতাতুর্কর হাজিয়া সোফিয়ার মতো বাবরি মসজিদকেও একটি জাদুঘরে রূপান্তর করতে পারতেন। বাবরি মসজিদ বিলুপ্ত, তাই জাদুঘর করা সম্ভব নয়। কিন্তু ওই বিতর্কিত জমিতে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্বমানের হাসপাতাল করার রায় দিতেই পারতেন। অপরদিকে হাজিয়া সোফিয়া স্থাপত্য প্রথম দিকে বাইজেনটাইন ক্রিশ্চিয়ান ক্যাথেড্রাল হিসাবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে কোনো বিশেষ ধর্মের স্থাপত্য ছিল না। বারবার ধর্মীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেউই ওই স্থাপত্যটিকে ভেঙে মাটিতে বিলুপ্ত করে দেয়নি বাবরির মতো। হাজিয়া সোফিসা ধর্মপরিচয় পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশজুড়ে দাঙ্গা বাধেনি।

আমি কামাল আতাতুর্কের সিদ্ধান্তের সমর্থনে বলব সর্বধর্ম সমন্বয়ে মিউজিয়ামের বদলে মসজিদে রূপান্তর করাটা সমর্থন করছি না। মিউজিয়াম হল শিক্ষার উপাসনালয়। যে-কোনো জাতির মানকে উন্নত করতে হলে ধর্মীয় উপাসনালয়ের থেকে শিক্ষার উপাসনালয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে জাতি যত বেশি শিক্ষার থেকে ধর্মকে প্রাধান্য দেবে, সেই জাতি তত বেশি অন্যান্য জাতি থেকে পিছিয়ে পড়বে। এখন দেখা যাক এরদোগান কতটা পরিবর্তন আনেন হাজিয়া সোফিয়াতে। তবে আমি বিশ্বাস করি এরদোগানের পতন হলে হাজিয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাসও বদলে যাবে। মসজিদ থেকে অন্য কিছু হবে। এটাই তুরস্ক তথা ইস্তামবুলের ট্র্যাডিশন।

কোন মন্তব্য নেই: