মিশরীয়দের
মনেও প্রশ্ন জাগল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, মৃত্যু এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে। এভাবে তাঁদের মধ্যেও
জন্ম নেয় ধর্মীয় বিশ্বাস। অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস থেকে জন্ম নেয়
দেবদেবতা। সমাজের বিবর্তন আর সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক গভীর।
প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের চিহ্ন রেখে গেছেন পাথরে গায়ে, সমাধি ক্ষেত্রে, গড়েছিলেন দেবতাদের মূর্তি আর মন্দির।
প্রাচীন মিশরে ২০০০ এরও বেশি দেবদেবী ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। স্থান ও কালের পার্থক্যে
দেবতাদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল ভিন্ন। এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মিশরীয় রাজা বা
ফারাও যারা পরবর্তীতে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। দেবতাদের কেউ কেউ ছিলেন
ক্ষতিকর। উল্লেখযোগ্য দেবতারা ছিলেন – রা,
তাহ, ওসিরিস, আইসি্স,
হোরাস, সেথ, হাথর,
আনুবিস, থথ, আটেন,
আমুন, বাস্তেত। রা ছিলেন সূর্যের দেবতা । রা দেবতা আবির্ভূত
হতেন বিভিন্ন রূপে সকালে খেপরি, বিকালে
আটুম কিংবা হোরাক্তি রূপে। রা-এর ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন ন্যায়বিচারের দেবী মাত। রা-এর দিবাকালীন
আকাশভ্রমণ সব সময় নিরাপদ ছিল না। আপেপ নামের এক সাপের সঙ্গে তাকে যুদ্ধ করতে হত। আপেপের
নিঃশ্বাসে মেঘের কালো কুণ্ডলী রা-কে ঘিরে ফেলত। কিন্তু শক্তিমান রা-কে এসব
আটকাতে পারত না। সে সব কিছুকে পরাজিত করে ঠিকই তার পথ অতিক্রম করত। মাঝে মাঝে
ক্ষতিকর দেবতারা
এসে গিলে ফেলত রা-কে। তখন সূর্যগ্রহণ হত। কিন্তু রা ঠিক ঠিক শত্রুর পেটে কেটে বেরিয়ে
আসত। আইসিস, মিশরীয় মাতৃদেবী। উর্বরতার
দেবতা আমুন। ফারাওরা
নিজেদের রা-এর সন্তান বলে দাবি করত।
মায়াদেরও
দেবতাদের কথা আমরা
জানতে পারছি। অর্থাৎ মায়াদেরও দেবতা-ধারণা আছে। হুনাহপু এবং এক্সবালেংখুয় হল
মায়াদের দেবতা। এই যমজ দেবতার কাহিনি মায়া পুরাণের সবচেয়ে
রোমাঞ্চকর অধ্যায়। এই কাহিনি যে কয়টি এপর্যন্ত
জীবিত মায়া পুরাণ টিকে আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। এরা সম্পর্কে দুই ভাই। মায়ার নরকের
দেবতা হলেন এক্সিবালবা।
এক্সিবালবা অত্যন্ত বদরাগী এবং নিষ্ঠুর চরিত্রের দেবতা ছিলেন। মায়ারা বিশ্বাস করতেন
এক্সিবালেংখুয়ে এবং হুনাহপু ছিলেন যথাক্রমে পৃথিবীর শাসক এবং আকাশের দেবতা। পরে অবশ্য
দুজনেই চন্দ্রদেব এবং সূর্যদেবে রূপান্তরিত হন। মায়ারা বিশ্বাস করত মায়া-সম্রাট আসলে হয়
এক্সিবালেংখুয়ে, নয় হুনাহপু দেবের পুত্র।