হাইয়া সোফিয়া
বা আয়া সোফিয়া বা চার্চ অফ হাজিয়া সোফিয়া (Hagia Sophia) স্থাপত্যটি এই মুহূর্তে
সংবাদমাধ্যম তোলপাড়, সোস্যাল মিডিয়া সরগরম। কেন সরগরম ? কারণ তুরস্কের সুপ্রিম কোর্টের
রায়ের পর ইস্তাম্বুলের খ্যাতনামা হায়া সোফিয়ায় নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেওয়া
হয়েছে। রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, আদালতের
রায়ের পর নামাজ পড়ার জন্য হায়া সোফিয়াকে খুলে দেয়া হবে। টুইটারে
এক পোস্টে এরদোগান জানান, হায়া সোফিয়ার সম্পত্তি দিয়ামাত বা তুর্কি ধর্মীয়
বিষয়ক দফতরের হাতে সোপর্দ করা হবে। এরপরই হাইয়া সোফিয়াতে প্রথমবারের মতো আজান
দেওয়া হয়। দেড় হাজার বছরের পুরনো হায়া
সোফিয়া একসময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো গির্জা, পরে তা পরিণত হয় মসজিদে, তারও পর
একে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা কামাল আতাতুর্কর সিদ্ধান্তকে
সসম্মানে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তুরস্কের মুসলিম প্রধানমন্ত্রী এরদোগান ভাবলেন, তা কেন,
ওই স্থাপত্যটি সম্পূর্ণভাবে মুসলিমদের সম্পদ, সকলের সম্পদ হতে পারে না। অতএব ওটা কেবল
মসজিদই হবে, আজান হবে, নামাজ পড়বে – অন্য কিছু হবে না। নিশ্চয় স্থাপত্যের অভ্যন্তরের
জিশু ও খ্রিস্টীয় চিহ্নগুলি মুছে ফেলে কেবলই আল্লাহ ও মোহম্মদ সম্পূর্ণভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
কী হবে, সেটা সময় বলবে। আপাতত হাজিয়া সোফিয়ার জন্মবৃত্তান্তটা জেনে নিই।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরটি দাঁড়িয়ে
আছে এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশে ভাগ হয়ে। মহাদেশ দুটিকে যোগ করা বসফরাস প্রণালী
শহরটিকে দু-ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। এই শহরেরই ইউরোপীয় অংশে রয়েছে দৈত্যাকৃতির এক
স্থাপত্যবিস্ময়। বাইজেন্টাইন শাসনামলে বানানো এই স্থাপত্যকর্মটির নাম হাজিয়া
সোফিয়া। এই স্থাপত্যটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে এসেছে আমেরিকান ঔপন্যাসিক ড্যান
ব্রাউনের ‘ইনফার্নো’ গ্রন্থে।
হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়েছিল আজ
থেকে প্রায় ১,৫০০ বছর আগে একটি বাইজেন্টাইন খ্রিস্টান ব্যাসিলিকা হিসাবে। কিন্তু
বর্তমানে অনেকটা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার বা এথেন্সের পার্থেননের মতো এটিও একটি
অসাম্প্রদায়িক স্থাপত্যশৈলী হিসেবে পরিগণিত হয়। অবশ্য শুধু স্থাপত্যকৌশলের কারণেই
যে এটি বিখ্যাত তা নয়, এ ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির আছে নানারকম রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং
শৈল্পিক আবেদন।