বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা। এর আগে বেশ কিছু নবাব এসেছেন আর গিয়েছেন।
স্বল্প মেয়াদের নবাবির নবাবেরা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। সেইসব অনুল্লিখিত নবাবদের বিরুদ্ধেও হিন্দু-বিদ্বেষ, হিন্দু-নিধন, হিন্দুদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিতকরণ
করার মতো কোনো অভিযোগের দলিল পাওয়া যায়নি। তাঁদের তেমন কোনো বিশেষত্ব না-থাকার কারণেই
হয়তো ইতিহাস মনে রাখেনি।
বাংলার সিরাজপর্ব কিন্তু ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। সিরাজ-পতনের
মধ্য দিয়েই ভারত-শাসনের খাতা খোলে ব্রিটিশরা। যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে
ইংরেজগণ শতাধিক বছরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাধ্যসাধনায় ব্যবসায়ী থেকে শাসকে পরিণত
হয়েছিল, ৮০০ বছর ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসনের
মূলোৎপাটন করে এ দেশবাসীকে গোলামির শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে (১৫৯৯) কতিপয় ব্যবসায়ী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্ম
হয়। রানি এলিজাবেথের অনুমোদনক্রমে তাঁরা ভারত সহ বিভিন্ন দেশের
সঙ্গে ব্যাবসা শুরু করে। ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে
বাদশাহ জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে সনদ লাভ করে এই কোম্পানি সর্বপ্রথম সুরাট বন্দরে
তাঁদের বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। প্রথম প্রথম তাঁদেরকে খুব ঘাতপ্রতিঘাতের ভিতর দিয়ে
চলতে হয় বলে ব্যাবসাবাণিজ্যে বেশি সুবিধা করতে পারে না। ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে
বাদশাহ শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে অবস্থানকালে তাঁর কন্যা আগুনে দগ্ধিভূত হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্যে
সুরাটের ইংরেজ-কুঠির অধ্যক্ষ কর্তৃক প্রেরিত সুদক্ষ
সার্জন ডাঃ গ্যাব্রিল বাউটন তাঁকে নিরাময় করেন। তাঁর প্রতি বাদশাহ
শাহজাহান অত্যন্ত মুগ্ধ হয়ে পড়েন এবং বাউটনের অনুরোধে ইংরেজ বণিকগণ বাংলায় বিনা
শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা যখন বাদশাহর ফরমানসহ বাংলায় উপস্থিত হয়, তখন বাংলা-বিহার-ওড়িশার
সুবাদার ছিলেন শাহজাহানের পুত্র
যুবরাজ মোহাম্মদ শাহসুজা।