জাতপাত ব্যবস্থা
বর্ণগত মই বাহিত হয়ে নিচে নেমে যায় এবং কখনোই পুরোপুরি অদৃশ্য না-হওয়ায় আম্বেদকরের
বর্ণিত ‘অনুকরণের
সংক্রমণ’ প্রতিটি
বর্ণেরই ক্রমপরম্পরায় নিম্নতর বর্ণের উপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা হয়।তেজস্ক্রিয়
অণুর অর্ধেক জীবনের মতো ‘অনুকরণের
সংক্রমণ’ গাণিতিকভাবে
ব্যাখ্যা করার সুযোগ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে এমন এক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে যেটাকে
আম্বেদকর বলেছেন ‘ক্রমবিন্যস্থ
বৈষম্য’। এতে আরও নিচুর
তুলনায় নিচু বর্ণও বিশেষ অধিকার ভোগের অবস্থানে থাকে। প্রতিটি বর্ণই বিশেষ অধিকার
ভোগ করে, প্রতিটি
শ্রেণিই ব্যবস্থাটি বজায় রাখার ব্যাপারে আগ্রহী।আমাদের সমাজে পচনের মূলেই আছে এই
জাতপাত প্রথা। অধস্তন জাতের প্রতি যা কিছু করা হয়েছে, তা তো আছেই, সেইসঙ্গে এটা
বিশেষ অধিকারভোগকারী বর্ণের নৈতিকতার মূলে পচন ধরিয়েছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম
রেকর্ড ব্যুরোর মতে, প্রতি
১৬ মিনিটে একজন দলিতের সঙ্গে আর-একজন অদলিত অপরাধ করে, প্রতিদিন ৪ জনেরও
বেশি অস্পৃশ্য নারী স্পৃশ্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। প্রতি সপ্তাহে ১১ জন দলিত খুন হয়
এবং ৬ জন দলিত অপহৃত হয়। শুধুমাত্র ২০১২ সালেই ২৩ বছর বয়েসের ১ জন নারী দিল্লিতে
গণধর্ষণের শিকার হয়, ১৫৭৪
জন দলিত নারী ধর্ষিত হয় (বৃদ্ধাঙ্গুলির শাসানির জোরে দলিতদের সঙ্গে ঘটা ধর্ষণ বা
অন্যান্য অপরাধের মাত্র ১০ ভাগ প্রকাশিত হয়) এবং ৬৫১ জন দলিতকে হত্যা করা হয়।
এগুলি ছিল ধর্ষণ ও বর্বরতা, যা
লুণ্ঠন আর নগ্ন হতে বাধ্য করাই নয়,
জোরপূর্বক মানুষের মল খাওয়ানো,
জমি দখল,সমাজচ্যুত
করা, খাওয়ার
জল আনতে বাঁধা দেওয়া। এ পরিসংখ্যানে পাঞ্জাবের বান্ত সিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যিনি ছিলেন একজন
মাজহাবি দলিত শিখ। ২০০৫ সালে যার দুই হাত এবং একটি পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন
করে ফেলে দেওয়া হয়। কারণ সে তার মেয়েকে গণধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার
দুঃসাহস দেখিয়েছিল। তিনটি অঙ্গ ছেদ হওয়া ব্যক্তির জন্য আলাদা কোনো পরিসংখ্যান
নেই।কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে --
ঘটনা – ১ : ২০১৫ সালের ২
সেপ্টেম্বর। মধ্যপ্রদেশ। তার খেতে ঢুকে ফসল খেয়ে নিচ্ছিল গরুর দল। গোরুর মালিককে এ
ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গিয়ে চরম লাঞ্ছনার শিকার হতে হল এক দলিত নারীকে। তাকে নগ্ন
করে মারধরের পর প্রস্রাব খেতেও বাধ্য করা হয়। ছত্তরপুর জেলায় এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় থানার নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছিল। ওই মহিলাকে নিয়ে
দলিত সম্প্রদায়ের কয়েকজন জেলার সহকারী পুলিশ সুপার নিরজ পান্ডের সঙ্গে দেখা করেন।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয়
নওগং থানা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।নিগৃহীতার অভিযোগ, বিজয় যাদবের
বাড়িতে গিয়ে তার খেতে গওরু ঢোকার বিষয়টি জানান। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয় ও তার
স্ত্রী বিমলা তাকে মারধর করেন। এমনকি জামাকাপড় খুলে তাকে প্রস্রাব খেতেও বাধ্য
করা হয়।